মঙ্গলবার , ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ , ৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > নিয়ম না মেনে জুস নামেই বিক্রি হচ্ছে

নিয়ম না মেনে জুস নামেই বিক্রি হচ্ছে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জুস নামে ফ্রুট ড্রিংকস বিক্রি করছে একমি, ড্যানিশ, এইচটি ও সজীব। অথচ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নির্ধারণ করেছে, পানীয়তে কোনো ফলের ন্যূনতম ৮৮ শতাংশ পাল্প থাকলে তা হবে জুস। আর কমপে ১০ শতাংশ পাল্পসমৃদ্ধ পানীয় ফ্রুট ড্রিংকস নামে বাজারজাত করতে হবে। চলতি বছরের শুরুতেই এর বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছে না পানীয় উৎপাদক এসব কোম্পানি।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিয়ম না মেনে সজীব করপোরেশনের সেজান ম্যাংগো জুস, এইচটি বেভারেজের ম্যাংগোলি, একমি এগ্রোভেট অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড একমির সিপ ও কাসিক এবং ড্যানিশের ড্যানিশ ম্যাংগো জুস বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বিএসটিআইয়ের নিয়ম অনুসারে এসবই আসলে ফ্রুট ড্রিংকস; জুস নয়।

এদিকে আকিজ ও প্রাণ বিএসটিআইয়ের নতুন নিয়ম মেনে জুসের বদলে ফ্রুট ড্রিংকস নামে পণ্যের মোড়ক পরিবর্তন করেছে। এরই মধ্যে এশিয়া এগ্রো, ইউনিটি ফুড, কামরুল এগ্রো ফুডও ফ্রুট ড্রিংকসের সনদ নিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিএসটিআইয়ের নতুন মান অনুসরণ করে দেশী কোনো কোম্পানিই জুস তৈরি করতে পারেনি। বাজারে জুসের নামে যা বিক্রি হচ্ছে, তা মূলত ফ্রুট ড্রিংকস।

বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান অনুসরণ প্রসঙ্গে ড্যানিশ ফুডসের হেড অব মার্কেটিং আতিক আল মুরাদ বলেন, ‘আমরা বিএসটিআইয়ের সব রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করেছি। তিন মাস ধরে তাদের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ চলছে। তবে বাজারে এখন আগের মান অনুসরণে প্যাকেটজাত পণ্য থাকলেও সেগুলোকে প্রোমট করা হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে প্রক্রিয়াধীন থাকা নতুন সনদ পেলেই নতুনরূপে ড্যানিশের পণ্য বাজারজাত করা হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার সব সুপারিশ বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ চলছে বলে জানান সজীব করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এফআরএম হাফিজ উল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘বিএসটিআইয়ের যেসব নিয়মনীতি রয়েছে, সেগুলো মেনেই পণ্য বাজারজাত করবে সজীব করপোরেশন। এজন্য আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করেছি।’

জানা গেছে, মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে জুস ও ফ্রুট ড্রিংকসের বাজার ক্রমেই সম্প্রসারণ হচ্ছে। দেশে ২৫ শতাংশ হারে এসব পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ হলেও রফতানি েেত্র তা ৩০ শতাংশের বেশি। তবে এসব পণ্যের সিংহভাগ বাজার দখলে রয়েছে প্রাণ-আরএফএল ও আকিজের।

আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী জুস উৎপাদনে ৮৮ শতাংশ পাল্প ছাড়াও প্রিজারভেটিভ, সাইট্রিক ও এসকরটিভ এসিড, সুইটেন্ড বা সুগার ও সল্ট পরিমাণমতো মেশাতে হয়। যদিও বিএসটিআইয়ের আগের নিয়মে ২৫ শতাংশ পাল্প মেশালেই তাকে জুস বলা যেত। তবে ফ্রুট ড্রিংকসে পাল্পের পরিমাণ ১০ শতাংশের কম হতে পারবে না। আর আইএসওর নিয়ম অনুসারে পাল্পের পরিমাণ সঠিক থাকলেই হবে না। এর সঙ্গে কোম্পানির টেস্টিং ও পরীাগার, তদারকব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। এর জন্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বেশকিছু নিয়মনীতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জুস উৎপাদনে নিজস্ব পানির প্লান্ট থাকা, পাল্প মিশ্রণ, বোতল ওয়াশ ও জুস ফিলিং অবশ্যই অটোমেটেড হতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা ও সংরণব্যবস্থাও উন্নত করতে হবে।

এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) কমল প্রসাদ দাস বলেন, জুস ও ফ্রুট ড্রিংকসের মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদপে নেয়া হয়েছে। এজন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিএসটিআই যুক্ত হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় সুপারিশ অনুসারে কোম্পানিগুলোকে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সুবিধা থাকায় তারা স্বল্পসময়েই তা বাস্তবায়নও করেছে। তবে অন্য যেসব কোম্পানি আবেদন করেছে, সেগুলোকে পর্যায়ক্রমে সনদ দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পরিপূর্ণভাবে সব বিষয় বাস্তবায়নে সফল হলেই নতুন সনদ দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত. গত বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভারতের ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর সার্টিফিকেশনের (এনএবিসিবি) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিএসটিআই। এর পরই জুস উৎপাদনের নীতিমালা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল প্রডাক্টস সেকশনাল কমিটির সুপারিশক্রমে গত বছরের জুনে বিডিএস ৫১৩-২০১২ নামে একটি সংশোধনী এনে জুস ও ফ্রুট ড্রিংকস উৎপাদনের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।