শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > “পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক” চান প্রধানমন্ত্রী

“পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক” চান প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ভিন্নভাবে গ্রামীণ মানুষের সঞ্চয় সংগ্রহ ও তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের জন্য গ্রামে গ্রামে শাখা খুলে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার। ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ নামে প্রথমে দেশের ৪৮৫ উপজেলায় শাখা নিয়ে যাত্রা শুরু করার কথা ব্যাংকটির। গ্রামীণ ব্যাংক যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তেমনি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংককেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে চায় সরকার। তবে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়েও বাড়তি ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন, ২০১৩-এর খসড়ায়। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পকে ব্যাংককে রূপ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের উপকারভোগীদের জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে দ্রুত অর্থ লেনদেন ও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, সেই জন্য আলাদা ব্যাংক গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে গত সাড়ে চার বছর ধরে তিন হাজার ১৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটিতে সত হাজার ১৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। এসব জনবল নিয়োগসহ প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর কর্মশালায় জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহে এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা এই প্রকল্পে অন্তভুক্তি হয়েছে, তারা আর ধর্মীয় অন্ধকারে ফিরে যাবে না।

কিন্তু গত ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে মত দিয়ে বলেছে, ‘সার্বিক বিবেচনায়, প্রস্তাবিত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা সমীচীন হবে না- মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কে এম আব্দুল ওয়াদুদ স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে মতামত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মতো বিশেষ উদ্দেশ্যে আইন দ্বারা ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলো তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সফল হয়নি; যেমন, আনসার-ভিপিডি ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যাংক কম্পানি আইন এবং এ আইন-সংক্রান্ত সময়ে সময়ে জারি করা অন্যান্য আইন, বিধান বা নির্দেশনা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। অথচ খসড়া আইনের ৮ ধারায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের যেসব কার্যাবলীর প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ব্যাংক কম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৭ ধারা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলীর মতোই। খসড়া আইন অনুযায়ী, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক অর্থগ্রহণ, ঋণগ্রহণ, বৈদেশিক মুদ্রা অনুমোদন, ক্রয়-বিক্রয় ও বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা; শেয়ার, ডিবেঞ্চার স্টক, বন্ড, লেটার অব ক্রেডিট, ট্রাভেলার্স চেক, সার্কুলার নোট ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়; ক্রেডিট কার্ড, রেডিক্যাশ ইত্যাদি ইস্যু ও বাজারজাতকরণ; অনলাইন ব্যাংকিংসহ ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড চালু করতে পারবে। প্রস্তাবিত আইনের ২২.৪ ধারায় বলা হয়েছে, সদস্যদের পাশাপাশি অসদস্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ ও আমানত গ্রহণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের মতামতে বলেছে, ‘এ ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স বাদে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের করা সমীচীন হবে না। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলে তফসিলি ব্যাংকের সমান্তরাল আরেকটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হবে, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বহির্ভূত থাকবে। এটি আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। আবার প্রস্তাবিত আইনের ২২.৬ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করবে। ৩০.১ ধারা অনুযায়ী ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদনক্রমে পরিচালনা বোর্ড নিয়োগ দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে অনুমোদন দেওয়া বা ব্যাংকটিকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাবও অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পাওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি বিলুপ্ত করে ব্যাংক গঠনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন। এ ব্যাংকের মাধ্যমে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য সরকার নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ দেবে। প্রকল্পটির জনবল, অর্থ, স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ, অফিস সরঞ্জাম, ব্যাংকের সম্পদ ও জনবল হিসেবে গণ্য হবে। দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে ব্যাংকটি। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।

প্রাথমিকভাবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ঢাকায় প্রধান কার্যালয় ও দেশের ৪৮৫টি উপজেলায় ব্যাংকের শাখা খোলা হবে। পরে কাজের ব্যাপ্তির ওপর ভিত্তি করে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে শাখা খোলা হবে। ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৫০০ কোটি টাকা, যার পুরোটাই একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণোত্তর ঋণ সহায়তা তহবিল খাতে দেওয়া হবে। অনুমোদিত মূলধন এক কোটি শেয়ারে বিভক্ত হবে এবং প্রতিটি শেয়ারের মূল্য হবে ১০০ টাকা।

খসড়া আইন অনুযায়ী, ব্যাংকের ৫০ ভাগ মালিকানা সরকারের অধীনে সংরক্ষিত থাকবে। তবে, এই মালিকানার জন্য সরকার কোনো লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড পাবে না। এ আইনের অধীন প্রণীত বিধিমালা সাপেক্ষে, ব্যাংকের সাধারণ পরিচালনা, তদারকি এবং যাবতীয় প্রশাসনিক বিষয় ও কার্যক্রম বিধান অনুযায়ী পরিচালনা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত থাকবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতাধীন গঠিত সব গ্রাম সংগঠন সমিতি ব্যাংকের সদস্য পদ হবে। পল্লী অঞ্চলের যেকোনো প্রাথমিক সমবায় সমিতি ব্যাংকের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। এক হাজার টাকা ভর্তি ফি এবং কমপক্ষে পাঁচটি শেয়ার কিনে সমিতি ব্যাংকের সদস্য হতে পারবে।