শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > পাঁচ বছরে সরকারি পাঁচ ব্যাংকের ১২ হাজার কোটি টাকা লোপাট

পাঁচ বছরে সরকারি পাঁচ ব্যাংকের ১২ হাজার কোটি টাকা লোপাট

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ একের পর এক ব্যাংক কেলেঙ্কারি। ঋণ-খেলাপি থেকে শুরু করে ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন চেয়ারম্যান, পরিচালকরা। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে ব্যাংকিং খাত থেকে। গত পাঁচ বছরেই রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংক থেকে কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। ঋণ বিতরণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে নানা ধরনের অনিয়মে জড়িত হচ্ছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অভিনব উপায়ে ব্যাংক থেকে টাকা লুট করছেন পরিচালকরা।

ব্যাংক পরিচালকদের বিরুদ্ধে ভুয়া কোম্পানি তৈরি করে ঋণ দিয়ে আবার অবলোপন করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত পাঁচ বছরে এমন প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। এসব অনিয়ম, কেলেঙ্কারি নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে অন্যান্য ব্যাংকের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) নিয়েই ব্যস্ত। অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ভূমিকা রাখছে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকিং খাতের সব ধরনের দুর্নীতি অনিয়মের দায় বাংলাদেশ ব্যাংক এড়াতে পারে না। তাদের কর্মকাণ্ডের ওপরই নির্ভর করে ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বল তদারকির জন্যই একের পর এক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ঘটছে। জানা গেছে, বহুল আলোচিত সোনালী ব্যাংকে হলমার্কের ৪ হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির পর নড়েচরে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময়ের সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানসহ পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের সুপারিশে নতুন বোর্ড গঠন হলেও দুর্নীতি, অনিয়ম পিছু ছাড়েনি। কয়েক মাসের ব্যবধানে বেসিক ব্যাংকে একই ধরনের ঘটনা ঘটে। ঋণ অনিয়ম করে চার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। ব্যাংকটির গুলশান, শান্তিনগর ও দিলকুশা শাখায় ঋণ তদারকিতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনিয়মের প্রমাণ পায়। তদারকিতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা হামলার শিকার হন। এরপরও বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ওই ঘটনার পর প্রায় এক বছর পর গত মাসে ব্যাংকটির এমডিকে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া জনতা, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংকের প্রায় চার হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানির জালিয়াতিতে উৎসাহ জুগিয়েছে। যুবক, ডেসটিনি, ইউনিপে টু ইউর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অংশ নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিয়েছেন। মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান টাকা নিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো বাধা দেয়নি। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার নিয়ম থাকলেও তারা তা করেনি। পরবর্তীতে দুদকের অনুসন্ধানে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মে সরকার বন্ধ করে দেয় এসব প্রতিষ্ঠান।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইকুইটি অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ফান্ড (ইইএফ) ফান্ড নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। একশ কোটি টাকার এ ফান্ড থেকে ঋণ নিয়ে ৭৭টি প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত দেয়নি। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রমও বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ এই ফান্ড থেকে টাকা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সরাসরি তদারকি করার কথা রয়েছে। তাদের তদারকির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হলেও খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণ নেওয়া হলেও পরিচালকদের হস্তক্ষেপে এসব ঋণ অবলোপন করা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এসব অবলোপন করা ঋণ আদালতে একটি মামলা করে বছরের পর বছর ঝুলতে থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আর কিছুই হয় না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর তদন্ত ও নিরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন দিয়েই কাজ শেষ করে। কোনো কর্মকর্তা বা পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ সময় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নামে একটি বিভাগ চালু করার পরও কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বিভাগটি কিছুই করতে পারেনি। নানা ধরনের অনিয়ম হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যস্ত সিএসআর, গ্রিন ব্যাংকিং নিয়ে। কয়েক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর সিএসআর পরিপালন হচ্ছে কিনা তা জানতে চেয়ে কয়েক দফা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গ্রিন ব্যাংকিং নিয়ে নানা ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মানবিক ব্যাংকিংয়ের নামে এসএমই ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম নজরদারি করেছেন। তবে ঋণ অনিয়ম নিয়ে কোনো বিশেষ নজরদারি করেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে লোকবল সংকট রয়েছে। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদ গঠন কিংবা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই। তবে নির্দিষ্ট অভিযোগ বা অনিয়মের সংশ্লিষ্টতা পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিস্তারিত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়। সাম্প্রতিককালে যেসব অনিয়ম হয়েছে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক দুদকের সঙ্গে কাজ করছে। এ ছাড়া পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতের বড় ধরনের অনিয়মের ঘটনা গত কয়েক বছরে ঘটেছে। যার দায় কোনোভাবেই বাংলাদেশ ব্যাংক এড়াতে পারে না। তাদের কঠোর নজরদারি থাকলে কোনো ব্যাংকই এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস পেত না। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের ঘটনার পর একই ধরনের ঘটনা ঘটল বেসিক ব্যাংকে। অথচ অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পরে ব্যাংকটির পর্ষদ এক বছরের বেশি দায়িত্বে ছিল। ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের মূল কারণ রাজনৈতিক পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ। এটা বন্ধ করতে পারলে অনিয়ম অনেক কমানো যাবে। বাংলাদেশ প্রতিদিন