শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > পোশাক শ্রমিকদের কাছে জাতীয় ইস্যু মূখ্য

পোশাক শ্রমিকদের কাছে জাতীয় ইস্যু মূখ্য

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুর: সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পোশাক শ্রমিকদের ভোট প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে। আর এসব ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় ইস্যুর চেয়ে জাতীয় ইস্যুকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। কারণ পোশাক শ্রমিক ভোটারদের অধিকাংশই এ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নন।

তবে প্রায় আড়াই লাখ পোশাক শ্রমিক ভোটারের ব্যালট টানতে মরিয়া প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।

শিল্পাঞ্চল গাজীপুরে পোশাক কারখানার লক্ষাধিক শ্রমিক ভোট দিচ্ছেন এবারের নির্বাচনে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন ও গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনসহ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের তথ্য মতে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ ভোটার রয়েছে।

গাজীপুরের বিভিন্ন এলকার পোশাক শ্রমিক ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ পোশাক শ্রমিকই স্থানীয় নয়। জীবিকার তাগিদেই তারা এখানে বাস করছেন। ভোটার তালিকা তৈরির সময় টাকা খরচ করে নিজ নিজ বাড়িতে না গিয়ে কর্মস্থলেই ভোটার হয়েছেন তারা। আর এই ভোটাররাই আসন্ন নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবেন।

পোশাক শ্রমিকদের ভোট নিজেদের ঘরে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে স্থানীয় বিষয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পেলেও পোশাক শ্রমিকদের কাছে জাতীয় ইস্যুই প্রাধান্য পাচ্ছে।

গাজীপুর টঙ্গী এলাকার প্রায় অর্ধশত পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে চলে আসা অসন্তোষ ভোট দেওয়ার নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে বর্তমান মহাজোট সরকার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করলেও এখনো বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোটাররা।

বড়বাড়ির মেরাটেক্স গার্মেন্টের কর্মচারী আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার বেতন-ভাতা না বাড়ানোয় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই সরকারের শেষ সময়ে শ্রমিক অসন্তোষে সরকার এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বড়বাজার এলাকার বেস্ট ফ্যাশনে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক রয়েছে বলে জানান গার্মেন্ট শ্রমিক আলি আশরাফ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শেষ সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে শ্রমিকদের ওপর সরকারের অত্যাচার নীপিড়নের প্রভাব পড়বে এই নির্বাচনে। সরকারের নেতিবাচক ভূমিকার কারণে অর্ধেক ভোটারের এক থেকে দেড় হাজার ভোট পড়বে এম এ মান্নানের ব্যালটে।

টিডঅ্যান্ডডাব্লিউ গার্মেন্ট শ্রমিক রিহাব হোসেনের বাড়ি গোপালগঞ্জ। তিনি জানান, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিলেন। নির্বাচনের পূর্বে জোর প্রতিশ্রুতি দিলেও পদ্মা সেতু নির্মানে ব্যর্থ হওয়াতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জিসিসি নির্বাচনে ভোট দেবেন না তিনি।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ অঞ্চলে গার্মেন্ট-এ কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিকের বাড়ি উত্তরবঙ্গে। তাই স্থানীয় ইস্যুর চেয়ে জাতীয় রাজনীতি এবং তাদের পাওনার বিষয়টিও মাথায় রেখেই ভোট দেবেন তারা।

তবে প্রার্থীদের মন গলাতে দুই দলের নেতাকর্মীরাই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ঝুড়ি খুলে। নিজেদের ঘরে ভোট তুলতে গ্রহণ করছেন বিভিন্ন পন্থা।

উত্তরবঙ্গের এসব ভোটারদের বাগে আনতে ওইসব অঞ্চলের সংসদ সদস্যরা নিজ দলীয় প্রার্থীদের জন্যে চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের দিনাজপুরের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বগুড়ার সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান আজমত উল্লা খানের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

বিএনপি’র উত্তরবঙ্গের একাধিক নেতাও একই গার্মেন্ট শ্রমিক ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন মান্নানের পক্ষে।

গার্মেন্ট শ্রমিকদের সংগঠনগুলোও জাতীয় রাজনীতিকে মূল ধরে প্রচারণা চালাচ্ছেন নিজেদের মতো করে।

তবে কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের প্রচারণা ও সহকর্মী এবং বন্ধুদের প্ররোচনাই প্রভাব ফেলবে তাদের ওপর।

এসঅ্যান্ডআর গার্মেন্ট’র কর্মী রানু আক্তার জানান, তাদের গার্মেন্ট-এ নারী কাউন্সিলর প্রার্থী জ্যোসনা বেগম দু’বার এসেছেন ভোট চাইতে। জ্যোসনা বেগমকে তার ভাল লেগেছে এবং জ্যোসনার উড়োজাহাজ মার্কাতেই ভোট দেবেন তিনি।

তারগাছ কুনিয়া পাছর এলাকার মুনলাইট গার্মেন্টে-এ গণসংযোগকালে সংরক্ষিত ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জ্যোসনা আহমেদের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি বলেন, শ্রমিকদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ। যারা ভোটার রয়েছেন তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন ভোট দেওয়ার ব্যাপারে। যারা ভোটার নয়, তাদের দোয়া চেয়েছি।

তবে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিকের এ গার্মেন্ট-এ ভোটারের সংখ্যা কতো তার হিসেব জানা নেই জ্যোসনার।

পোশাক শ্রমিকদের ভোটকে লক্ষ্মী হিসেবে মেনে নিয়ে আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকার পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের কাছে ভোট চাওয়ার মধ্য দিয়ে।

১৮ দল-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী এম এ মান্নানও বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে টঙ্গীর সেনাকল্যাণ ভবনসহ গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্ট-এ প্রচারণার মধ্য দিয়ে শুরু করেছিলেন গণসংযোগ।