বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৭ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > শিক্ষাঙ্গন > ফেরিওয়ালার ছেলের এসএসসির রেজাল্টে অবাক গ্রামবাসী

ফেরিওয়ালার ছেলের এসএসসির রেজাল্টে অবাক গ্রামবাসী

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
পরিবারে অভাবের তাড়না। বাবা ফেরিওয়ালা। দিনে ১৫০-২০০ টাকা রোজগার। আবার কোনোদিন সেই রোজগার হয় না। এমন অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠা ফারদিন আহম্মেদের।

বাবার এমন আর্থিক অবস্থার কারণে পড়া হয়নি কোনো প্রাইভেট। তারপরও ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে এলাকার মানুষকে চমকে দিয়েছে ফারদিন।

ফারদিন আহম্মেদ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর পাথরঘাটা গ্রামের ফারুক আহম্মেদের সন্তান। স্থানীয় ঝাউডাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি ঘোষিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বাবা ফারুক আহম্মেদ বাইসাইকেল নিয়ে ভ্যারাইটিজ পণ্য গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন। মা ফাহিমা বেগম গৃহিণী।

ফারদিন আহম্মেদ জানায়, অভাবের তাড়নায় কোনোদিন প্রাইভেট পড়তে পারিনি। তবে কোনো বিষয়ে বুঝতে অসুবিধা হলে একজন বড় ভাই আমাকে সহযোগিতা করতো। পরিবারের অবস্থা ভালো না, বাবা ফেরিওয়ালা। টাকা দিতে পারতো না তবে মানসিকভাবে সহযোগিতা করতো মা-বাবা ও ভাই। বলতো, তুই পারবি। ভালোভাবে লেখাপড়া কর। এভাবেই গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি।

ফারদিন জানায়, প্রতিবেশী দুইজন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াই। তারা আমাকে মাসে ৪০০ টাকা দেয়। সেই টাকা আমার লেখাপড়ার পেছনে খরচ করি। আমার ইচ্ছা এইচএসসি শেষ করে বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বো। তবে ভালো ফলাফল করেও পরিবারের অভাবের কারণে সেটি অনিশ্চিত।

ফারদিনের বাবা ফারুক আহম্মেদ বলেন, ফারদিন খুব শান্ত স্বভাবের। বাইরে ঘোরাঘুরি বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া এমনটা করে না। আমি সকালে সাইকেলে চড়ে ফেরি করতে বেরিয়ে পড়ি। বাড়িতে ফারদিনের মা ছেলেকে দেখাশুনা করে।অ ামার দিনে ১৫০-২০০ টাকা রোজগার হয়। ভ্যারাইটিজ পণ্য গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করি। এতে যা রোজগার হয় তাতেই সংসার চলে আমাদের। ছেলেটাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছি। সরকারি সহযোগিতা বা হৃদয়বান কোনো মানুষের সহযোগিতা ছাড়া ছেলের লেখাপড়া আমার পক্ষে শেষ করানো সম্ভব হবে না।

ফারদিনের মা ফাহিমা বেগম জানান, পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল ফারদিন। তারপর অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। খুব মেধাবী ছেলে। আমরা ছেলেকে কিছু দিতে পারি না। তবে ফারদিনের লেখাপড়ায় আগ্রহের কমতি নেই। শুধু লেখাপড়া করতে চায়। এখন দুইটা মেয়েকে পড়ায় ফারদিন। ভালো ফলাফলে যেমন খুশি, আনন্দিত তার চেয়ে বেশি এখন শঙ্কা। কিভাবে সামনের দিনগুলোতে লেখাপড়া শিখবে।

ফারদিনের চাচা মহিউদ্দীন জানান, ফারদিন খুব মেধাবী। নিজে প্রাইভেট পড়তে পারে না অভাবের তাড়নায়। তবে মেধা ভালো হওয়ায় আমার মেয়ে ফারদিনের কাছে লেখাপড়া শেখে। বাইরের কোনো টিউশনি শিক্ষক আর দিচ্ছি না।

ঝাউডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, ফারদিন খুব মেধাবী ছাত্র। লেখাপড়ার পেছনে আনুষাঙ্গিক খরচ তো রয়েছে। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারলে আগামীতে আরও ভালো করবে ছেলেটি।

সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, এ ধরনের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করার জন্য কলেজে টাকা লাগে না। ফ্রিতে পড়তে পারে। তবে আনুষাঙ্গিক খরচ লাগে। এগুলো ম্যানেজ হয়ে যায়।