শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > জাতীয় > বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী আজ

বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী আজ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৮তম শাহাদত বার্ষিকী আজ। শোকাবহ ১৫ই আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির জন্য কলঙ্কময় এক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতি হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার স্বপ্নচারী বঙ্গবন্ধু এই দিনে কিছু বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের চক্রান্তে কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের নির্মম বুলেটে সপরিবারে শাহাদত বরণ করেন। সারা দেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস হিসেবে দিবসটি পালিত হবে। শোক আর শ্রদ্ধায় পুরো জাতি স্মরণ করবে ইতিহাসের এই মহানায়ককে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবিও উচ্চারিত হবে শোক দিবসের নানা অনুষ্ঠানে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবেও বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করা হবে। আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও শাখা কার্যালয়ে ওড়ানো হবে কালো পতাকা। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠান সরাসরি সমপ্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।

১৯৭৫ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে শহীদ হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সঙ্গে সেদিন প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী আরজু মনি, নিকট আত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুর নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল প্রমুখ। পুরো জাতি আজ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এই দিনের ঘটনায় শাহাদতবরণকারী সবাইকে স্মরণ করবে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
স্বাধীন সংগ্রামের জন্য একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, মরণপণ সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করা এবং স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে ভূমিকা রেখে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন একটি ইতিহাস, জাতির স্বাধীন সত্তা আর ঐক্যের প্রতীক। তার ইস্পাত-কঠিন নেতৃত্বই জাতিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ছিনিয়ে আনার প্রেরণা যুগিয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম-নিপীড়ন থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে তার এই আহ্বান বরণ করে নিয়েছিল স্বাধীনতাকামী বাঙালি। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালো রাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওই রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ নয় মাস তাকে পাকিস্তানের কারাগারে আটকে রাখা হয়। কারাগারে থাকাবস্থায় তার মাথার ওপর ঝুলেছিল মৃত্যুর খড়গ। তবুও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি মহান এই নেতা। এ কারণে পাকিস্তানের স্বৈরশাসককেও নতি স্বীকার করতে হয়েছে তার কাছে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাঙালির প্রিয় এই নেতাকে তারা দেশে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পরের ২১ বছর তার শাহাদত বার্ষিকী পালিত হয় রাষ্ট্রীয় অবহেলায়। ১৯৯৬ সালে তার কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে তা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন শুরু হয়। ওই দিনকে জাতীয় শোক দিবস ও রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে ওই দিনের সরকারি ছুটি বাতিল করে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনে ফের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রেসিডেন্টের বাণী: ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হন। এ ঘটনা কেবল বাঙালির ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। জাতীয় শোক দিবসে আমি পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে সেদিনের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী, সাহসী ও ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে এই ভূখণ্ডের মানুষ হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। বাঙালি পেয়েছে নিজস্ব জাতি রাষ্ট্র। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যখন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই তাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে ফেলাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ বাঙালি জাতির অন্তরে প্রোথিত হয়ে আছে। আসুন, আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে তার স্বপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করি। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এ সংগ্রামে আমাদের অবশ্যই জয়ী হতে হবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে আছে- সূর্য উদয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত জাদুঘর প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে দলীয় সভানেত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগরীর প্রতিটি শাখার পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ই আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত। সকাল ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি প্রাঙ্গণে মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত। বাদ আসর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবনে মিলাদ মাহফিল। এছাড়া, আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য দলের সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সারা দেশে ব্যাপক আয়োজনে দিবসটির বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে।