মঙ্গলবার , ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ , ৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > সারাদেশ > বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে সবুজ ঘাসে ময়ূরছানার ছোটাছুটি

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে সবুজ ঘাসে ময়ূরছানার ছোটাছুটি

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
মা ময়ূরের পিছু নিয়েছে কয়েকটি ছানা। মাঝেমধ্যে ভয় পেয়ে পাখার নিচে লুকিয়েও যাচ্ছে। খাবার পেলে মা ময়ূর বিশেষ শব্দে ছানাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছানাগুলো শব্দ শুনে দ্রুত পৌঁছায় মায়ের কাছে। ময়ূরছানার এমন উচ্ছল ছোটাছুটি দেখা যাচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। এখানে প্রাকৃতিকভাবে পাঁচটি ও ইনকিউবেটরে ১৮টি ময়ূরছানার জন্ম হয়েছে।

সরেজমিনে সোমবার পার্কের ক্রাউন ফিজেন্ট অ্যাভিয়ারিতে দেখা যায়, ধূসর ও নীল মিশ্রণে অনেকগুলো ময়ূর ঘুরে বেড়াচ্ছে। নতুন ছানাগুলো দেখতে কিছুটা মুরগির ছানার মতো হলেও আকারে বেশ বড়। এরা দ্রুত দৌড়াতে পরে, এমনকি কিছু দূরত্বে উড়েও যেতে পারে। মায়ের সঙ্গে ছানাগুলো সবুজ ও লম্বা ঘাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে খাবারের সন্ধানে। সারা দিন বাচ্চাগুলোকে মা পাহারা দিয়ে রাখে। কাছে গেলে মা নিরাপত্তার আশঙ্কায় হুংকার দেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী পরিদর্শক (ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার) আনিসুর রহমান বলেন, ‘ময়ূর বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভারত ও মিয়ানমারে ময়ূর এখনো প্রচুর দেখা যায়। নীল ময়ূরের পালে অনেক সময় সাদা ময়ূরের দেখা মেলে। এরা মূলত জেনেটিক কারণে সাদা রঙের হয়ে থাকে। রঙের পার্থক্য ছাড়া স্বভাব ও খাদ্য গ্রহণে কোনো পার্থক্য নেই। পুরুষ ময়ূরের মাথায় ঝুঁটি থাকে। প্রজননকালে স্ত্রী ময়ূরের সঙ্গম পেতে পুরুষেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তা ছাড়া কিছু পুরুষ ময়ূর নারী ময়ূরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেখম মেলে নাচতে থাকে।’

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ছানা নিয়ে ঘুরছে মা ময়ূর। আনিসুর রহমান বলেন, ‘ময়ূর সর্বভুক পাখি। এরা ঘাস, লতা-পাতা, সাপ, ছোট ছোট পোকামাকড়সহ প্রায় সবকিছুই খায়। পার্কে ঘাস, ফুলের রেণু, ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন ধরনের শাক খেতে দেওয়া হয়। এদের ওজন সাধারণত তিন থেকে পাঁচ কেজির মতো হয়। প্রাপ্তবয়স্ক হতে ১৮ থেকে ২০ মাস সময় লাগে। এরা মার্চ-এপ্রিলে ডিম দেয়। ২৮ থেকে ৩০ দিনের মাথায় ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এরা একসঙ্গে ছয় থেকে আটটি ডিম দেয়। ক্যাপটিভিটিতে এরা ২৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে। ময়ূরগুলো অনেক সময় নিজেদের ডিম খেয়ে ফেলে। তাই ডিম দেওয়ার পর ময়ূরবেষ্টনীর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে সচেতন দৃষ্টি রাখতে হয়।’

পার্ক সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিকভাবে সম্প্রতি পার্কে পাঁচটি বাচ্চা ফুটেছে। ইনকিউবেটরে ফুটেছে ১৮টি বাচ্চা। এদের মধ্যে তিনটি ছোট। কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও বিভিন্ন সময় চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ২০ থেকে ২৫টি ময়ূর সাফারি পার্কের ক্রাউন ফিজেন্ট অ্যাভিয়ারিতে ছাড়া হয়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি ময়ূর বাচ্চা ফুটিয়েছে। বর্তমানে পার্কে সাদা ময়ূরসহ ৮০টি ময়ূর রয়েছে। কিছুদিন আগে কয়েকটি ময়ূর প্রকৃতিতে ছাড়া হয়েছে।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অল্প কয়েক দিন হলো এই পার্কে যোগদান করেছি। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের সুবাদে এ পার্কের বিরল প্রাণী জন্মের খবর পড়েছি। সম্প্রতি সাদা সিংহ ও মযূর বাচ্চা দিয়েছে। পার্কটি দিন দিন আরও আকর্ষণীয় হবে। আরও বেশি দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসবেন—এটাই আশা করি।