বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
‘টাকা না দিলে সেবা পাওয়া যায় না’ এ কারণে দেশের মানুষকে সরকারি খাত থেকে সেবা নিতে ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া তথ্য না জানা, হয়রানি এড়াতে, নির্ধারিত সময়ে সেবা পেতে ও অন্যান্য কারণেও ঘুষ দিতে হচ্ছে। গতকাল বুধবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশ করা ‘সেবা খাতে দুর্নীতি:জাতীয় খানা জরিপ ২০১৫’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। খবর-ইত্তেফাক
জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশের সেবা খাতগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে পাসপোর্ট বিভাগ। এখানে সেবা নেওয়ার জন্য প্রায় ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষকে দুর্নীতির শিকার হতে হয়েছে। আর ঘুষ দিতে হয়েছে ৭৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষকে। দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হলো আইন-শৃঙ্খলা রাকারী সংস্থা। এরপর যথাক্রমে রয়েছে, শিা (সরকারি ও এমপিওভুক্ত), বিআরটিএ, ভূমি প্রশাসন, বিচারিক সেবা ও স্বাস্থ্য খাত।
দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির ওই প্রতিবেদনে সার্বিকভাবে বিভিন্ন সেবা খাতে ৬৭ দশমিক ৮ শতাংশ খানার সদস্যদের দুর্নীতির শিকার হওয়ার ও ৫৮ দশমিক ১ শতাংশের ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়ার কথাও উঠে এসেছে। ২০১৫ সালে বিভিন্ন সেবা খাতে দুর্নীতি ও হয়রানির হার ২০১২ সালের তুলনায় প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও সেবাগ্রহণকারী খানা বা পরিবারগুলোকে ২০১২ সালের তুলনায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বেশি প্রদান করতে হয়েছে। আর শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ দুর্নীতির শিকার বেশি হয়েছেন।
একই সঙ্গে ধনী ও মধ্যবিত্তদের তুলনায় নিম্ন আয়ের ও অসহায় মানুষেরা বেশি ঘুষ দিয়েছেন। দুর্নীতির এই মহড়া বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায় থেকে দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিয়ে বরং প্রতিরোধের প্রতি সদিচ্ছা দেখানোর আহবান জানিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি।
রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান প্রমুখ। প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. ওয়াহিদ আলম, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা রহমান ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ নূরে আলম।
জরিপের দেখা যায়, ২০১৫ সালে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ ৮ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ও জিডিপির শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।
জরিপের বিষয়ে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। দুর্নীতি হ্রাসের প্রবণতাকে এগিয়ে নিতে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। দুর্নীতি রোধে নিয়োগ, পদোন্নতি এবং বদলিতে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক হস্তেেপর অবসান ঘটিয়ে সব খাতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের সুপারিশ করেন ইফতেখারুজ্জামান।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র কমিউনিটি সিরিজের আলোকে নমুনা কাঠামো তৈরি করে জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপের বৈজ্ঞানিক মান নিশ্চিত করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পাঁচজন বিশেষজ্ঞের সহায়তা ও পরামর্শ নেয় টিআইবি।