শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > বাংলার দুর্ভিক্ষে চার্চিলের দায় নিয়ে টুইটারে বিতর্কের ঝড়

বাংলার দুর্ভিক্ষে চার্চিলের দায় নিয়ে টুইটারে বিতর্কের ঝড়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা : সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে সর্বকালের সেরা বৃটিশ হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকে। এ সপ্তাহে ব্রিটেনে তাঁর পঞ্চাশ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হচ্ছে সাড়ম্বরে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বাংলায় যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, সেজন্যে চার্চিলের নীতিকে দোষারোপ করে টুইটারে চলছে এক তীব্র বিতর্ক। টুইটারে ভারতের অনেক মানুষই ১৯৪৩ সালের সেই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ছবি পোষ্ট করে এজন্যে উইনস্টন চার্চিলকে দায়ী করেছেন।
বাংলার এই দুর্ভিক্ষের জন্য চার্চিল সরাসরি দায়ী। তিরিশ লক্ষ মানুষ ঐ দুর্ভিক্ষে মারা যান। চার্চিল ছিলেন একজন দানব টুইটারে মন্তব্য করেছেন রিতু নামে একজন। শুধু ভারতীয়রাই নন, বিশ্বের আরও বিভিন্ন দেশের মানুষও এই দুর্ভিক্ষে চার্চিলের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক জড়িয়ে পড়েছেন। সারাহ ফেল্টস নামে একজনের মন্তব্য, বাংলার দুর্ভিক্ষে চার্চিলের এই ভূমিকার কথা আমার জানাই ছিল না। আমি লজ্জিত বোধ করছি। গ্লেন কোকো নামে আরেকজনের মন্তব্য, বিবিসি যখন উইনস্টন চার্চিলের মন্তব্যকে ঘিরে তীব্র আবেগ তৈরির চেষ্টা করছে, তখন দয়া করে বাংলার দুর্ভিক্ষে মারা যাওয়া মানুষদের একটু স্মরণ করুন।
চার্চিলের ভূমিকা
১৯৪৩ সালের ঐ দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ সব ছবি এঁকেছেন বিখ্যাত বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন। কোলকাতার রাস্তায় মৃত্যুশয্যায় দুর্ভিক্ষপীড়িত অনাহারী মানুষ, ভিক্ষার পাত্র হাতে কংকালসার শিশু কোলে মানুষের মিছিল- এরকম সব ছবিতে চিরকালের জন্য তিনি ধরে রেখেছেন এই দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ঐ দুর্ভিক্ষে সে সময়কার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ভূমিকা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের একটি আলোচিত বই হচ্ছে মাধুশ্রী মুখার্জির লেখা উইনস্টনস সিক্রেট ওয়ার। এতে তিনি দাবি করেন যে দুর্ভিক্ষে প্রায় তিরিশ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য চার্চিলের নীতি সরাসরি দায়ী।
তিনি বলেছেন, বাংলায় যখন খাদ্য সংকট চলছে, সেটা মোকাবেলায় চার্চিল কোন পদক্ষেপই নেন নি। বরং তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ইউরোপের বেসামরিক মানুষদের জন্য খাদ্য মওজুদ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছে। ভারতে যখন খাদ্যের অভাবে মানুষ মরছে, তখন তার পাশ দিয়েই অস্ট্রেলিয়া থেকে এক লাখ সত্তর হাজার গম বহনকারী জাহাজ গেছে ইউরোপে। চার্চিলস এম্পায়ার নামে বইয়ের লেখক রিচার্ড টয়ী বলেন, বাংলার এই দুর্ভিক্ষ চার্চিলের জীবনের সবচেয়ে খারাপ রেকর্ডগুলোর একটি।
ইউরোপে জার্মানির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তখন তিনি এতই ব্যস্ত যে বাংলার এই দুর্ভিক্ষ নিয়ে লোকজন তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও তিনি এটাকে পাত্তা দেননি। তবে গান্ধী এন্ড চার্চিল বইয়ের লেখক আর্থার হারম্যানের যুক্তি হচ্ছে, চার্চিলের বদলে অন্য কেউ সেসময় দায়িত্বে থাকলে বাংলার এই দুর্ভিক্ষ আরও ভয়াবহ হতে পারতো। তিনি দাবী করছেন চার্চিল এবং মন্ত্রিসভায় তার সহকর্মীরা সর্বোতভাবে চেষ্টা করেছেন যুদ্ধ প্রচেষ্টায় কোন শৈথিল্য না দেখিয়ে যতটা সম্ভব বাংলার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের সাহায্য করার।
সূত্র: বিবিসি