শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > জাতীয় > বাতিলের পথে বিশ্বব্যাংকের সাড়ে ১৯ কোটি ডলার ঋণ

বাতিলের পথে বিশ্বব্যাংকের সাড়ে ১৯ কোটি ডলার ঋণ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা শর্ত পূরণ নিয়ে জটিলতায় স্থবির হয়ে পড়েছে ভোটারদের স্মার্ট কার্ড প্রদান কার্যক্রম। প্রকল্প গ্রহণের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান ও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে বাতিল হওয়ার পথে বিশ্বব্যাংকের ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সহজ শর্তের ঋণ।

নির্বাচন কমিশন ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। বিশ্বব্যাংক এজন্য নিবন্ধন আইন সংশোধনে নির্বাচন কমিশনকে বেশকিছু পরামর্শ দেয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এ সংশোধন আনতে চায় তাদের নিজস্ব ভাবধারায়। দুই পক্ষের এ টানাপড়েনে বাতিল হওয়ার পথে প্রকল্পটি। বিশ্বব্যাংক জাতীয় নিবন্ধন আইনে যেসব পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়, তার মধ্যে রয়েছে— নাগরিকের তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা, সব নাগরিককে ধাপে ধাপে পরিচয়পত্র প্রদান, পরিচয়পত্র না থাকার কারণে কোনো নাগরিককে সেবা থেকে বঞ্চিত না করা।

বিশ্বব্যাংকের এসব শর্তের কারণে স্মার্ট কার্ড প্রকল্পটি থমকে আছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ সংশোধন। তা না হলে এর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আইনি জটিলতা রয়েছে। এ জটিলতা শেষ না হলে কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। সংসদের আগামী অধিবেশনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন পাস হলে চিত্র পাল্টে যাবে।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আরস্তু খান এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। খুব কম পরিমাণ অর্থ ছাড় হয়েছে। নানা জটিলতার মুখে পড়েছে প্রকল্পটি। তা কাটিয়ে ওঠারও চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন ও অপারেশনাল-সংক্রান্ত সমস্যা দূর করা হয়েছে।’

নানা শর্তের কারণে প্রকল্পে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন সংশোধনের জন্য পাঠিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে তা এখনো ফেরত আসেনি। দ্রুত সব সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা করছি।’

আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস প্রকল্পের আওতায় ভোটারদের স্মার্ট কার্ড দেয়াসহ মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে সরবরাহের কথা রয়েছে ১৪ কোটি ১৯ লাখ আর বিশ্বব্যাংক দেবে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।

ইআরডির হিসাবে, প্রকল্পটির মাত্র ২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, মূল প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়নি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বেতন-ভাতা আর প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা বাবদ অল্প কিছু অর্থ খরচ হয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে এ স্মার্ট কার্ড সরকারের গুরুত্বপূর্ণ আরো কয়েকটি সংস্থার ব্যবহার করার কথা রয়েছে। সংস্থাগুলো হলো— জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও পাসপোর্ট অফিস। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতেও এটি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শাখাওয়াত হোসেন জানান, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে স্মার্ট কার্ড দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এর তথ্য নিরাপত্তাব্যবস্থা খুবই উন্নত মানের।