শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > বাসের অগ্রিম টিকিট শেষ, মিলছে বেশি দামে

বাসের অগ্রিম টিকিট শেষ, মিলছে বেশি দামে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥

ঈদ উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকিট ছাড়ার দ্বিতীয় দিন শেষ হতে না হতেই পাঁচ দিনের সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছেন কাউন্টার কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় ২২, ২৩ ও ২৪ তারিখের টিকিট নেই বলে জানানো হয় অধিকাংশ বাস কাউন্টার থেকে। এদিকে কাউন্টার কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট করে টিকিট আটকে রাখছেন বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

অন্যদিকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কিনতে টিকিট প্রত্যাশীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দিচ্ছেন লাইনে দাঁড়িয়ে। মঙ্গলবার রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় ২২ জুনের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পেতে কমলাপুর রেল স্টেশনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন টিকিট প্রত্যাশীরা।
আগের দিন সোমবার অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিন তুলনামূলক কম চাহিদা থাকলেও মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন কমলাপুর রেল স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের উপস্থিতি অনেক বেশি ছিল।

বাসের টিকিট সংকটের কারণ প্রসঙ্গে যাত্রীরা বলছেন, কাউন্টার থেকে টিকিট আটকে রাখা হচ্ছে। যেদিনের টিকিটের চাহিদা বেশি, সেই দিনের টিকিট আটকে রাখছেন তারা। পরে বেশি দামে বিক্রি করছেন। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে যাত্রী সেজে কয়েকটি কাউন্টারে গেলে যাত্রীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। ২২, ২৩, অথবা ২৪ যে কোনো একদিনের খুলনার টিকিট চাইলে গাবতলীর সোহাগ কাউন্টার থেকে বলা হয়, কোনো টিকিট নেই। কিন্তু একটু চাপাচাপি করায় কাউন্টার মাস্টার সাব্বির বললেন, ২৩-২৪ তারিখ সকাল সাড়ে ১১টার টিকিট হবে। তবে ভাড়া বেশি দিতে হবে। কত বেশি? জানতে চাইলে ওই কাউন্টার মাস্টার বলেন, ৬৫০ টাকা দিতে হবে।

এ সময় ভাড়া ৫৫০ টাকা বলা হলে কাউন্টার মাস্টার রেগে গিয়ে বলেন, ৮০০-৯০০ চাই নাই। এ জন্য দরাদরি করছেন। আরো বেশি চাইলে তখন নিতেন। একইভাবে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর রুটের এসএম পরিবহন কাউন্টারে খোঁজ নিলে জানানো হয় টিকিট শেষ। টিকিট শেষ জেনে ফিরে আসার ভান করতেই কাউন্টারের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রাসেল নামের একজন কাছে ডেকে নিয়ে বলেন, টিকিট দেয়া যাবে। তবে ভাড়া একটু বেশি দিতে হবে। কত বেশি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাড়া তো ৫৫০ টাকা এখন আপনি যা দেন। বোঝেনই তো ঈদের সময়!

স্বপন নামের জয়পুরহাটের টিকিট কিনতে আসা এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি হানিফ কাউন্টারে টিকিট নিতে এসেছি। এখান থেকে বলা হচ্ছে ২১-২৫ তারিখের কোনো টিকিট নেই। এ সময় ওই যাত্রী আরো বলেন, ‘ঈদের আগে প্রতিবছরই এমনটা হয়। সব কাউন্টারের লোকেরাই ৫০ শতাংশ টিকিট আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখেন। পরে বেশি দামে এগুলো বিক্রি করেন।

হানিফ কাউন্টারের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, হঠাৎ করে চাপ বাড়ায় টিকিট বিক্রি বেশি হয়েছে। টিকিট আটকে রাখার অভিযোগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এ রকম কিছু ঘটছে না। আর যদি এমন কিছু দেখি তাহলে দায়ীকে বহিষ্কার করা হবে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই গাবতলীর টিকিট কাউন্টারগুলোতে ভিড় কম দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ১১টার পর মানুষের সমাগম কিছুটা দেখা গেলেও ১২টার পর তা আবার কমতে থাকে। এ ছাড়া বেলা ২টার পর থেকে একবারেই কমে যায় অগ্রিম টিকিটপ্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২১ থেকে ২৫ তারিখের বাসের অগ্রিম টিকিট নেই। বহু মানুষ টিকিট না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, কাউন্টার থেকে ৬৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মোট টিকিটের ২৫ শতাংশ অনলাইনে, ৫ শতাংশ ভিআইপি এবং রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ টিকিট বরাদ্দ রয়েছে।

আগামী ২২ জুনের রাজশাহীগামী ট্রেনের টিকিট কিনতে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। ওইদিন বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে পরিবার নিয়ে রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরবেন বলে জানান তিনি। তবে লাইন অনেক দীর্ঘ থাকায় টিকিট পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট প্রত্যাশায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শারমিন আক্তার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কাউন্টার থেকে খুব স্লো গতিতে টিকিট দেয়া হচ্ছে। বলতে গেলে লাইন সামনের দিকে যাচ্ছেই না। এ ছাড়া মহিলা কাউন্টার আরো বাড়ানো প্রয়োজন।

সিতাংশু চক্রবর্তী আরো বলেন, সকাল থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে এবং আমাদের পর্যাপ্ত টিকিট রয়েছে। শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকলে আশা করছি যতক্ষণ পর্যন্ত টিকিট আছে ততক্ষণ সবাই পাবেন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা কালোবাজারি এড়াতে স্টেশনে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছেন।

এদিন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুট ও খুলনার ট্রেনের টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় বেশি দেখা যায়। চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের টিকিটের চাহিদা কম।

এদিকে অনেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (অনেকে এসি) বগির টিকিটের আশায় থাকলেও কাউন্টার খোলার পর পরই বিক্রি শেষ হয়ে যায় বলে অভিযোগ শোনা যায়। সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর ১০টার মধ্যে রাজশাহী রুটের সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ফুরিয়ে যায় বলে কাউন্টার থেকে জানানো হয়।

রাজশাহীর টিকিটের জন্য অফিস শেষে সোমবার বিকেলে সোজা স্টেশনে এসেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা নাজমুল আলম। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় টিকিট পেয়েছেন। এখান থেকেই আবার অফিসে যাবেন তিনি।

তিনি বলেন, টিকিটের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। হাতে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। কিছু অব্যবস্থাপনা ছিল বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অনেকে পরে এসেও লাইনের আগে চলে গেছে।

আগের রাত ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, এসি কামরার টিকিট দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, রাজশাহীতে প্রতিদিন চারটি করে ট্রেন, প্রতিটি ট্রেনে দুটি করে ৮টি এসি বগি। ৯২টি করে হিসাব করলে ৭৩৬টি আসন থাকে। কিন্তু আমার আগে ২৫ জন টিকিট নিয়েছেন। তারা সবাই ৪টা করে এসি টিকিট কিনলেও তো সব টিকিট শেষ হওয়ার কথা নয়। এসি টিকিট গেল কই?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীর পদ্মা ও সিল্ক সিটি ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এরপর শুধু ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট দেয়া হয় যাত্রীদের।

মঙ্গলবার কমলাপুর স্টেশনে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম ঘুরে দেখে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, টিকিট বিক্রি শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। টিকিটপ্রত্যাশী কেউ তার কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। যাত্রীদের অনেক ভিড় আছে। তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কোনো অভিযোগ আছে কি না, তারা বলেছেন কোনো অসুবিধা নেই। যাত্রীরা যেন ঠিকমতো বাড়ি যেতে পারে সে জন্য আমাদের সব কর্মসূচি সঠিকভাবে নেয়া আছে।

এসি কোচের টিকিট না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী বলেন, এসি কামরার টিকিট সংখ্যা সীমিত হওয়ায় সবাইকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মানবকণ্ঠ