শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > বিএটিবির ৭৯১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি

বিএটিবির ৭৯১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের (বিএটিবি) বিরুদ্ধে ৭৯১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ এনেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দুটি ব্র্যান্ডের সিগারেটের মূল্যস্তর নির্ধারণে অসত্য ঘোষণায় প্রায় চার বছর ধরে এ রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে আজকের মধ্যে রাজস্বের এ অর্থ সরকারের কোষাগারে জমার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

এনবিআরের অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, ব্যবহূত কাগজ, তামাক ও অন্যান্য উপকরণের গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে সিগারেটের উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন মূল্যস্তর নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ব্রিস্টল ও পাইলট সিগারেটে যে কাগজ, তামাক ও উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তা মধ্যম মূল্যস্তরের হলেও নিম্ন মূল্যস্তরের ঘোষণা দিয়ে বিএটিবি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব ফাঁকি দেয়। অথচ প্রতিষ্ঠানটির মধ্যম মূল্যস্তরের সিজার সিগারেটে ব্রিস্টলের মতো একই উপকরণ ব্যবহার করা হয়। আবার সিজার ও স্টারের তুলনায় ব্রিস্টলের উৎপাদন খরচও কম দেখানো হয়েছে। এ ধরনের নানা কৌশল অবলম্বনে ব্রিস্টল ও পাইলটের মূল্যস্তর নির্ধারণে ফাঁকি দেয়া হয়।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপন নং ১৮৪-আইন/২০১২ মূসক আইন অনুযায়ী, ১০ শলাকার নিম্নস্তরের প্রতি প্যাকেট সিগারেটে সম্পূরক শুল্কহার ৩৯, আর মধ্যমস্তরের ১০ শলাকার প্রতি প্যাকেট সিগারেটের ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ নিম্ন মূল্যস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব খাতে ন্যূনতম ৪ টাকা ৭২ পয়সা সম্পূরক শুল্ক হিসেবে জমা হয়। অন্যদিকে মধ্যমস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে সরকারের কোষাগারে সম্পূরক শুল্ক জমা হয় ১৩ টাকা ৮৬ পয়সা। ফলে বিএটিবি অসত্য ঘোষণা দিয়ে তিন গুণ কম রাজস্ব পরিশোধ করেছে বলে দাবি এনবিআরের। এ হিসাবে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১৩৭ কোটি ১৩ লাখ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ২২২ কোটি ৬৯ লাখ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২৪৬ কোটি ১৮ লাখ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বিএটিবি। গত ২৪ নভেম্বর বিএটিবিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পাওনা অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে ভ্যাট বিভাগ।

এনবিআরের নির্দেশসংবলিত চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএটিবির কোম্পানি সচিব আজিজুর রহমান বলেন, ‘রাজস্ব পাওনা দাবি করে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে, সেটি ঠিক। কিন্তু আমার পক্ষে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।’ তিনি এ বিষয়ে করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

বিএটিবির সিনিয়র করপোরেট ম্যানেজার ফয়েজ আলী রাজস্ব ফাঁকি প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিএটিবি বিশ্বের অন্যতম পুরনো একটি প্রতিষ্ঠান; ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও প্রতি বছর সরকারের কোষাগারে একটি বড় অঙ্কের রাজস্ব পরিশোধ করছে বিএটিবি। সিগারেট খাতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রাজস্বই পরিশোধ করে এ প্রতিষ্ঠান। কর বা রাজস্বসংক্রান্ত ফাঁকির সঙ্গে বিএটিবি জড়িত নয়। এ ধরনের অভিযোগ করা হলে তা ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটছে বলে আমরা মনে করি।’

ফাঁকি দেয়া পাওনা অর্থ আদায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাটের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বেঁধে দেয়া সময়ে রাজস্ব আদায় না হলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পরিকল্পনাও রয়েছে ভ্যাট অনুবিভাগের। প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ফাঁকি বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি পরিস্থিতিপত্রও পাঠানো হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর কাছে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে মধ্যমস্তরের কয়েকটি ব্র্যান্ডের সিগারেটের সঙ্গে ব্রিস্টলও সব পর্যায়ের প্রতিনিধির সামনে সিলগালা করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়। সে পরীক্ষায়ই ধরা পড়ে, বিএটিবির দুটি ব্র্যান্ডে ব্যবহূত উপাদান একই হলেও ঘোষিত মূল্যস্তরের সঙ্গে তার মিল নেই। এক্ষেত্রে মধ্যমস্তরের সিগারেটকে দীর্ঘদিন ধরে নিম্নস্তরের ঘোষণার মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বিএটিবি। একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় পাইলট ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও।