শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > ‘বিচারপতি অভিশংসন’ বিল উত্থাপন আজ বিকেলে

‘বিচারপতি অভিশংসন’ বিল উত্থাপন আজ বিকেলে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘বিচারপতিদের অভিশংসন’ ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার বহল আলোচিত বিল আজ রোববার সংসদে উত্থাপন হচ্ছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বিকেলে বিলটি উথাপান করবেন। পরে বিলটি পাঠানো হবে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। অধিকতর যাচাই- বাছাই শেষে কমিটি বিলটি নিয়ে প্রতিবেদন দেবে। তারপরেই চূড়ান্তভাবে পাসের জন্য বিলটি সংসদে উপস্থাপন করা হবে।

গত মঙ্গলবার ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেয়া হয়। বিলটিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিল পাস হলে- বয়স ৬৭ হওয়া পর্যন্ত বিচারপতিরা স্বপদে বহাল থাকবেন। বলা হয়েছে, প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই- তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতিত বিচারককে অপসারিত করা যাবে না। তবে কোনো বিচারকের অসাদচরণ বা অসমর্থ সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। এছাড়াও কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতির কাছে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রে পদত্যাগ করতে পারবেন। সংসদ সচিবালয়ের একটি সূত্র থেকে এ বিষয়গুলো জানা গেছে।

এ অধিবেশন চলাকালেই বিলটি পাস হবার কথা রয়েছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এ অধিবেশনে বিলটি পাস হবার আশা প্রকাশ করেছেন।

নবম সংসদেও বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ২০১১ সালে এ বিষয়টি উঠে আসে। পরের বছর ২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার মো. আব্দুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। তখন থেকেই বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি ওঠে।

তবে বিচারপতিদের অভিশংসনের বিলটি পাস হলে তাদের পদমর্যাদা সম্পন্ন অন্যান্যদের অপসারণ সংসদের হাতে থাকবে কি না এ বিষয়ে এখনও জটিলতা রয়ে গেছে। বিলটিতে কেবলই বিচারপতিদের অপসারণের কথা উল্লেখ থাকলেও এ পদ মর্যাদার অন্যান্যদের বিষয়ে কিছু বলা নেই। ফলে নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অপসারণের ক্ষমতা নিয়ে জটিলতা রয়েই গেছে।

তবে আইনমন্ত্রী বলেছেন বিল পাসে কোনো জটিলতা নেই। তিনি বলেন, ‘তাদের অভিশংসনের ক্ষমতাও সংসদের হাতেই থাকছে। এ পদধারীরা সব সময় জজদের সঙ্গে ইক্যুয়েটেড ছিলেন। এখানেও তা-ই হবে।’

বিলটি উত্থাপনের পরই সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি প্রয়োজনে সংযোজন ও পরিমার্জন করে সুপারিশ দিতে পারে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭২ এর সংবিধানের বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর সময় এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। সংশোধনীটি হয় ১৯৭৪ সালে। পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।

‘বিলটি আইনে পরিণত হলে স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে তার জবাবদিহিতা থাকা সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সমুন্নত থাকবে মর্মে আশা করা যায়’ বলে বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়- ‘জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত সংসদে রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গের ন্যায় উচ্চ আদালতের বিচারকদের জবাবদিহিতার নীতি বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্তিক রাষ্ট্রে বিদ্যমান আছে।’

তবে বিলটি পাসের বিরোধিতা করবে দশম সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। তাদের মতে বিলটি পাস হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে। এ বিষয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এ বিলটির বিপক্ষে থাকবো। এমন বিল আমরা চাই না।’