শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > বিদেশী কোম্পানির স্বার্থে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পিএসসি সংশোধন

বিদেশী কোম্পানির স্বার্থে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পিএসসি সংশোধন

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদেশী কোম্পানির স্বার্থে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) সংশোধন করেছে সরকার। ইতিমধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশোধিত পিএসসি অনুমোদন দিয়েছেন। সংশোধনী প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। শিগগিরই তা অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য উঠছে। সংশোধিত পিএসসি অনুযায়ী, প্রথমবারের মতো সরাসরি তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। গভীর সমুদ্রের জন্য পিএসসি-২০১২ সংশোধনীর মাধ্যমে এ সুযোগ পেতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো। ফলে দেশের বাজারে চড়া দামে গ্যাস বিক্রি করতে পারবেন তারা। এতে বড় ধরনের চারটি পরিবর্তন থাকায় দরপত্রে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা। সংশোধিত পিএসসিতে কোম্পানির প্রাপ্ত গ্যাসের ৫০ শতাংশ সরাসরি তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশও চাইলে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে কোম্পানি। তবে সেক্ষেত্রে প্রথমে পেট্রোবাংলাকে কেনার জন্য প্রস্তাব দিতে হবে। পেট্রোবাংলা রাজি না হলে শতভাগ গ্যাস দেশের বাজারে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবেন তারা। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারমূল্য নির্ধারণ করবে কোম্পানিগুলো। পেট্রোবাংলার অনুমোদন সাপেক্ষে বর্তমানে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রি করে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে অধিক মুনাফা করছে অস্ট্রেলীয়  কোম্পানি সান্তোস। এছাড়া, সংশোধিত পিএসসিতে গভীর সমুদ্রে প্রতি হাজার ঘনফুট (ইউনিট) গ্যাসের মূল্য ৫ থেকে সাড়ে ৬ ডলার করা হয়েছে। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলোর সাড়ে ৩৭ শতাংশ কর দেয়ার কথা থাকলেও তা মওকুফ করা হয়েছে। আগের পিএসসি’র মতোই কোম্পানির হয়ে এ কর পরিশোধ করবে পেট্রোবাংলা। এছাড়া, ৫৫ শতাংশ কস্ট রিকভারি বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়েছে সংশোধিত পিএসসিতে। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, বিডিং রাউন্ড ২০১২তে গ্যাসের দাম সর্বোচ্চ ৫ ডলার নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু বিডিং রাউন্ডে দরপত্র কেনার পর প্রাক-দরপত্র জমাদান  বৈঠকে গ্যাসের দামের বিষয়ে আপত্তি তোলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কোম্পানি। এরপর তা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওদিকে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ব্লকগুলো বাদ রেখে ১২টি ব্লকে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি অগভীর ও তিনটি গভীর সমুদ্রের। অগভীর সমুদ্রের নয়টি হচ্ছে এসএস-০২ থেকে এসএস-০৪ ও এসএস-০৬ থেকে এসএস-১১। আর গভীর সমুদ্রের তিনটি ব্লক হচ্ছে ডিএস-১২, ডিএস-১৬ ও ডিএস-২১। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪১ বর্গকিলোমিটার এলাকা পড়েছে গভীর সমুদ্রে। বাকি ৫১ হাজার ৫৮৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা অগভীর সমুদ্রে। ওদিকে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে তেমন সাড়া পাচ্ছে না পেট্রোবাংলা। অগভীর সমুদ্রে পর পর দ্থুটি দরপত্র আহ্বান করা হলেও পৃথক ব্লকে জমা পড়েছে একক দরপত্র। নয়টি ব্লকের বিপরীতে দুই দফায় দরপত্র পড়েছে মাত্র চারটিতে। বাকি পাঁচটি ব্লকের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করতে হবে। প্রথম দফায় প্রতিযোগিতাহীন দরপত্রে অংশ নেয় মার্কিন কোম্পানি ‘কনোকাফিলিপস এশিয়া প্যাসিফিক নিউ ভেঞ্চার’ এবং ভারতের কোম্পানি ‘ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড’। অগভীর সমুদ্রের সাত নম্বর ব্লকে অনুসন্ধানের আগ্রহ প্রকাশ করে কনোকো। এ কাজে তারা ৪ কোটি ডলার ব্যয় করবে বলে জানিয়েছে। ভারতের ওএনজিসি ভিদেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকের জন্য। এ প্রকল্পে তারা ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয় করবে বলে জানিয়েছে। একইভাবে ৯ নম্বর ব্লকে সাড়ে ৮ কোটি ডলার ব্যয় করবে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে এ দুই কোম্পানির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এরপর ইতিমধ্যে পিএসসি সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির কারণে অগভীর সমুদ্র এলাকার পূর্ব পাশের ব্লকগুলো বিরোধমুক্ত হয়েছে। ফলে ব্লক নং এসএস-০৪, ০৭ ও ০৯-এর জন্য চুক্তি স্বাক্ষরে কোন জটিলতা সৃষ্টি হবে না। এরপর দ্বিতীয় দফায় অগভীর সমুদ্রে এসএস-১১ ব্লকের জন্য দর প্রস্তাব জমা দিয়েছে সান্তোস-কৃশ এনার্জি। ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে এর বিপরীতে দেড় কোটি ডলারের ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দিয়েছেন তারা। তাদের প্রস্তাবটি এখন মূল্যায়ন করছে পেট্রোবাংলা। এব্যাপারে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্রের জন্য প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আয়োজন করতেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পিএসসি সংশোধন করা হচ্ছে। তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুযোগ থাকবে শুধু দেশের বাজারে।