বুধবার , ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ , ৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > বিরোধী নেতা হতে এরশাদের চার শর্ত

বিরোধী নেতা হতে এরশাদের চার শর্ত

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবার সরকারকে চারটি শর্ত দিয়েছেন। এসব শর্ত মানলে তিনি আজ বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন এবং বিরোধীদলীয় নেতাও হবেন।

শর্ত চারটি হচ্ছে: এক. এরশাদের বিরুদ্ধে থাকা যেসব মামলা শেষ পর্যায়ে আছে, সেগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করা, দুই. তাঁর নির্দেশ মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে যাঁরা সাংসদ হওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন, তাঁদেরকে ব্যাংক-বিমা-করপোরেশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া, তিন. জি এম কাদেরকে উপনির্বাচনে জয়ী করে সংসদে আনা ও চার. জাতীয় পার্টি থেকে কাউকে মন্ত্রী না করা।

জাপার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, টানা ২৭ দিন ধরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) থাকা এরশাদ গতকাল বুধবার সরকারকে এসব শর্ত জানিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, তাঁর এ শর্তগুলো মানলে দশম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হতে তাঁর আপত্তি নেই। অন্যথায়, তিনি যেভাবে আছেন, প্রয়োজনে সেভাবেই থাকবেন। আর তাহলে আজ তিনি শপথ নাও নিতে পারেন।

এরশাদের শর্ত মানা হোক বা না হোক, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার নবনির্বাচিত বাকি সাংসদেরা আজ শপথ নিতে যাচ্ছেন। যদিও গতকাল বিকেলে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদপতœী রওশন এরশাদ বলেছেন, নবনির্বাচিত সাংসদ হিসেবে এরশাদও শপথ নেবেন।

এদিকে জাপা থেকে মন্ত্রী না করার শর্ত দেওয়ায় রওশনপন্থী নেতারা এরশাদের ওপর ক্ষুব্ধ। তাঁরা এরশাদের পরিবর্তে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য তৎপর রয়েছেন।

সংসদীয় দলকে নিয়ে রওশনের বৈঠক: এর আগে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার নবনির্বাচিত সাংসদেরা জাতীয় সংসদে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে জাপার সংসদীয় দল রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে বৈঠকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দীন আহমেদ, মুজিবুল হক, সৈয়দ আবু হোসেন, সালমা ইসলামসহ নবনির্বাচিত সাংসদেরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে রওশন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এরশাদ আমাদের সঙ্গেই আছেন। তিনি আমাদের উৎসাহ দিচ্ছেন, নির্বাচনে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘শরীর একটু খারাপ থাকায় এরশাদ হাসপাতালে আছেন। শরীরে যাতে চাপ না পড়ে, এ জন্য তিনি সেখানে আছেন। উনি সুস্থ আছেন। কয়েক দিন পরই চিকিৎসকেরা উনাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেবেন। উনার নির্দেশনায় আমরা সব করছি।’

রওশনের এ বক্তব্যের পর এরশাদের নির্দেশ মেনে যাঁরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। গত রাতে এমন একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, এরশাদের নির্দেশ মেনে দলের ২১৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখন যদি রওশন এরশাদের কথাই সত্যি হয়, তাহলে এসব নেতার কী অপরাধ ছিল?

এরশাদকে নিষ্ক্রিয় রাখার চেষ্টা: জাপার দলীয় সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রওশন এরশাদকে ঘিরে জাপায় একটি ‘বলয়’ তৈরি হয়েছে। এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে যাওয়া এ অংশটি এখন রওশনকে বিরোধী দলের নেতা বানাতে যারপরনাই তৎপর। নির্বাচন নিয়ে এরশাদের বারবার সিদ্ধান্ত বদলে বিরক্ত এ অংশটি এরশাদকে আর দলের মুখ্য ভূমিকায় দেখতে চায় না। তারা ভবিষ্যতে রওশন এরশাদকে জাপায় কার্যকর ভূমিকায় দেখতে আগ্রহী। সে লক্ষ্যে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়ে এরশাদকে দলে কোণঠাসা করা বা তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার চেষ্টা চলছে।

রওশন এরশাদও গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হতে যাচ্ছেন। দলের চেয়ারম্যান এরশাদ তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন ও দোয়া করেছেন।

তবে জাপার নবনির্বাচিত সাংসদদের ছোট একটি অংশ এবং নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো এবং হেরে যাওয়া অংশটি দলে রওশন এরশাদের কর্তৃত্ব চায় না। এ কারণে এরশাদের অনুগত অংশটি যেকোনো উপায়ে এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসাতে সমানভাবে তৎপর। কার্যত ওই অংশের তৎপরতায় এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েও সাংসদ হিসেবে শপথ নিতে এবং বিরোধীদলীয় নেতা হতে সম্মত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

জানতে চাইলে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা করার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। তবে উনার (এরশাদ) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ম্যাডামকে (রওশন এরশাদ) বিরোধী দলের নেতা করার ব্যাপারে এরশাদের কোনো আপত্তি নেই।’

এরশাদ শপথ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে চারটি শর্ত দিয়েছেন, তাতে জি এম কাদেরকে উপনির্বাচনে জয়ী করে আনা এবং জাতীয় পার্টি থেকে কাউকে মন্ত্রী না করার কথা বলেছেন। কিন্তু এ দুটি শর্তের বিষয়ে দলে রওশনপন্থী অংশের নেতাদের মধ্যে ভিন্নমত আছে।

এ বিষয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সামনে তিনটি অপশন (পছন্দ) আছে। এক. কেবলই বিরোধী দল হওয়া, দুই. বিরোধী দলে থেকেও সরকারে থাকা (পাকিস্তানে বিগত পিপিপি সরকারে নওয়াজ শরিফের দলের মতো), তিন. জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে যাওয়া। কিন্তু আমরা অগ্রাধিকার দেব বিরোধী দলে থেকে সরকারে অংশগ্রহণ করাকে।সূত্র-বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম ডেস্ক