বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৭ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > ভোটের রাজনীতিতে একা আ’লীগ

ভোটের রাজনীতিতে একা আ’লীগ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ জোট রাজনীতি বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। যদিও ভোট একেবারে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার ইতিহাস এক যুগের কিছু বেশি সময়ের। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের নিরঙ্কুশ বিজয় রাজনীতির মাঠে জোট কৌশলের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে দেয়। এরপর ক্রমশ প্রায় প্রতিটি দলই কোন না কোন জোটে ভেড়ার চেষ্টা করে। কখনও কখনও এইসব দল নিয়ে টানাহেঁচড়াও চলে পর্দার অন্তরালে এবং প্রকাশ্যে। এইসব দলের বেশির ভাগই আবার নামসর্বস্ব। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগেও জোট ভাঙা-গড়ার চেষ্টা চলে। যদিও সে চেষ্টা সফলতা পায়নি। দশম সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ না নিলেও ‘ভাগাভাগির’ নির্বাচনে বেশ কিছু ছোট ছোট দলও সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি ছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ , জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশন, বিএনএফ-এর মতো দল সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই এই সব দল সংসদে আসন পায়। তবে সংসদ নির্বাচনের পরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন ভিন্নচিত্র হাজির করেছে। দুই দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া মহাজোটের সহযোগী আর কোন দলেরই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন না হলেও আওয়ামী লীগের সহযোগী দলগুলো দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু এ নির্বাচনে তারা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সাংগঠনিক দুর্বলতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে একেবারে খারাপ করেনি। কিন্তু সহযোগীদের কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় ফলাফল বিএনপির তুলনায় খারাপ হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের উত্থানও ক্ষমতাসীনদের হতবাক করেছে। সহিংসতাপ্রবণ এলাকাগুলোতে জামায়াতের প্রার্থীদের জয়ী হওয়া সরকারের হিসাবের বাইরে ছিল। দুই দফায় উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ৯৪, আওয়ামী লীগ ৭৯ এবং জামায়াত সমর্থিতরা ২০ পদে জয়ী হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত মিলে জয়ী হয়েছে ১১৪টিতে। ভাইস চেয়ারম্যান পদেও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতরা বেশি উপজেলায় জয়ী হয়েছেন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। বিএনপি এখন আর বিরোধী দল নেই বলেও সরকারের নানা পর্যায় থেকে ঠাট্টা করা হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টি ২১১টি উপজেলার মধ্যে জয় পেয়েছে দু’টি উপজেলায়। জাতীয় পার্টির ইতিহাসে নির্বাচনী রাজনীতিতে এটি সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। অতীতে কোন নির্বাচনেই জাতীয় পার্টি এত কম ভোট পায়নি

শতাংশের হারে স্পষ্ট কোন হিসাব না থাকলেও সার্বিক বিবেচনায় জাতীয় পার্টি ২ শতাংশের মতো ভোট পেয়েছে। জাতীয় পার্টির চরম বিপর্যয়ের উল্টো চিত্র জামায়াতে ইসলামীর জন্য। গত কয়েক মাসে অন্তত চারটি জনমত জরিপের ফলে জামায়াতের ভোট দুই শতাংশের কম বলে বলা হয়েছিল। অথচ উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত চেয়ারম্যান পদেই প্রায় ১০ শতাংশ পদে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে, দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রায় সমসংখ্যক পদে জয়ী হয়েছে। প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পর জামায়াতের এ পুনরুত্থানের হিসাব মিলাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে এইসব ভোটাররা কোন দিকে যাবেন সে হিসাবও মেলাচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য বিএনপিকে ক্ষমতাসীন মহলের পক্ষ থেকে বার বার চাপ দেয়া হলেও দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার ব্যাপারে সরকারি দল এখনও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদের মতো রাজনৈতিক দল একতরফা সংসদ নির্বাচনে ভালো ফলাফল করলেও উপজেলা নির্বাচনে এইসব দলের সাফল্যের হার শূন্য। একটি উপজেলাতেও এই সব দলের প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেননি। বাংলাদেশের তৃণমূলে এ দলগুলোর যে এখনও কোন অবস্থান তৈরি হয়নি এ নির্বাচন সে বার্তাই পরিষ্কার করেছে। ১৪ দলভুক্ত দলগুলোর কাছ থেকে কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় আওয়ামী লীগ এখন ভোটের রাজনীতিতে নিঃসঙ্গ। মিডিয়ার সামনে আড়ম্বর আর তৃণমূলে জনসমর্থন যে আলাদা- দুই দফার উপজেলা নির্বাচন তার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। (মানব জমিন)