মঙ্গলবার , ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ , ৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > ভয়ঙ্কর সাব-ইন্সপেক্টর

ভয়ঙ্কর সাব-ইন্সপেক্টর

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ঢাকার একটি থানার এক ভয়ঙ্কর সাব-ইন্সপেক্টর সবকিছুকে ছাপিয়ে এখন আলোচনায়৷ হত্যার দায়ে তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ তাকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে তার ভয়ঙ্কর সব কাহিনি৷

এই সাব-ইন্সপেক্টরের (এসআই) নাম জাহিদুর রহমান খান৷ তিনি মিরপুর মডেল থানায় কর্মরত ছিলেন৷ এক ব্যবসায়ীকে আটকের পর থানায় এনে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পুলিশই তাকে বুধবার গ্রেফতার করে৷ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ রিমান্ড আবেদনে জাহিদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডসহ আরো অনেক অভিযোগ তদন্তের কথা বলা হয়েছে৷
গত শনিবার মধ্যরাতে রাজধানীর শঙ্কর এলাকা থেকে ব্যবসায়ী মাহাবুবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী মমতাজ সুলতানা ও পাঁচ বছরের শিশু সন্তান মোশাররফকে মিরপুর থানায় ধরে নিয়ে যান এসআই জাহিদ৷ পরে মমতাজ ও তাঁর সন্তান মোশাররফকে থানার এক কক্ষে রেখে পাশের কক্ষে মাহাবুবুরের ওপর পুলিশ নির্যাতন চালায়৷ ভোরের দিকে মাহাবুবুরের মৃত্যু হয়৷
থানার সিসিটিভি-র ফুটেজ অনুযায়ী শনিবার রাত একটা ৪৫ মিনিটে মাহাবুবুরকে নিয়ে থানায় ঢোকেন এসআই জাহিদ ও তাঁর দল৷ তখন মাহাবুবুরের পরনে ছিল প্যান্ট ও টিশার্ট৷ তাঁকে হেঁটে থানায় ঢুকতে দেখা যায়৷ এর ঠিক দুই ঘণ্টা পরে আবার মাহাবুবুরকে নিয়ে বের হয়ে যান এসআই জাহিদ৷ তখন মাহাবুবুরের পরনে ছিল শুধু একটি গামছা৷ তখন তিনি সোজা হয়ে হাঁটতে পারছিলেন না৷ ওই অবস্থায় তাঁকে বের করার সময় থানার ফটকে এসে কেউ একজন একটি লুঙ্গি পরিয়ে দেন৷ এরপর ভোরে থানা হেফাজতেই তিনি মারা যান৷
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, মাহাবুবুরের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতেই রবিবার এসআই জাহিদকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়৷ এরপর বুধবার মাহাবুবুরের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে পুলিশের হাতে৷ সেখানে মৃত্যুর কারণ হত্যাজনিত বলে উল্লেখ করা হয়৷ বিকেলেই জাহিদকে গ্রেফতার করা হয়৷
মাহবুবুর রহমানের স্ত্রীর অভিযোগ, চাঁদার জন্য তার স্বামীকে থানায় বসেই পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷
এটিই প্রথম এবং শেষ ঘটনা নয়৷ একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, ধরে এনে টাকা আদায়ের জন্য মানুষ পেটানো নতুন ঘটনা নয় জাহিদের৷ এর আগে তিনি পল্লবী থানায় থাকাকালে ফেব্রুয়ারি মাসে জনি নামের এক ছেলেকে ধরে এনে থানায় বেধড়ক পেটান৷ জনি এসআই জাহিদের নির্যাতনে মারা যান বলে অভিযোগ আছে৷
পল্লবী থানার এসআই শোভন কুমার বলেন, ওই ঘটনায় মামলা হয়েছিল৷ সেখানে বলা হয়, বিয়েবাড়িতে মারামারির ঘটনায় জনিসহ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়৷ পরে জনি মারা যান৷ জনির মা খুরশিদা আক্তার এসআই জাহিদের বিরুদ্ধে থানা একটি এজাহার দিলে সেটি পুলিশের সম্পূরক এজাহার হিসেবে গ্রহণ৷ ওই মামলার তদন্ত এখনো চলছে৷
গত জানুয়ারিতে জাভেদ হোসেন নামের আরেক যুবকের পায়ে গুলি করার অভিযোগ ওঠে এস আই জাহিদের বিরুদ্ধে৷ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে জাভেদের মৃত্যু হয়৷ এছাড়া জাহিদের বিরুদ্ধে চাঁদার দাবিতে ধরে এনে নির্যাতন, মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে মিরপুর ও পল্লবী থানায়৷
পল্লবী থানা এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন অভিযোগ করেন, এস আই জাহিদের হাতে অনেক লোক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ তার কাছেও টাকা চেয়েছিলেন জাহিদ৷ দিতে দেরি হওয়ায় বাসায় এসে তার বউ-বাচ্চাকে শাসিয়ে যান৷ অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে তাকে দিয়েছেন৷
এ বিষয়ে পুলিশের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, জনি হত্যা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে এসেছে৷ এসআই জাহিদকে জনি হত্যা মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হবে৷ আর জাভেদ হত্যার বিষয়টি তদন্ত করে দেখার কথা বলেন তিনি৷ তিনি জানান, এসআই জাহিদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগেরই তদন্ত হবে৷ বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম ডেস্ক