শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > মতিঝিলে ৫০ অস্ত্রধারী খোঁজ, টার্গেট রাজনৈতিক হত্যা

মতিঝিলে ৫০ অস্ত্রধারী খোঁজ, টার্গেট রাজনৈতিক হত্যা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: রাজধানীর অফিসপাড়া ও প্রাণকেন্দ্র বলে খ্যাত মতিঝিল এলাকার অপরাধ জগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৫০ সন্ত্রাসী। তারা অস্ত্র ব্যবসার পাশাপাশি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডেও জড়িত। এ চক্রটির প্রধান টার্গেট রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তারা প্রতিপক্ষের বেশকিছু রাজনীতিক নেতার তালিকা করে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। তিনটি অস্ত্র ও ১০০০ রাউন্ড গুলিসহ সাইফুল্লাহ খান নামে একজনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবির উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বাংলামেইলকে বলেন, ‘ওই চক্রের ৫০ জন সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তারা কিশোর ও যুবক। প্রত্যেকেই অস্ত্রধারী। সীমান্ত থেকে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় অবৈধ পন্থায় অস্ত্র এনে ব্যবসা করছে। তারাই আবার ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে মানুষ খুন করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধের সুযোগ নিয়ে তারা সবুজবাগের এক যুবলীগ নেতাসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যার পরিকল্পনাও করে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে।’ তবে টার্গেট করা রাজনৈতিক নেতাদের নাম প্রকাশ করেননি ডিবির এই কর্মকর্তা।

ডিবি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার ভোরে সবুজবাগ থানার পুরান পূর্ব বাসাবোর একটি বাসা থেকে সাইফুল্লাহ খান (৪০) নামের যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‘বাসাবো মোবাইল সার্ভিসিং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর অফিস থেকে দু’টি রিভলবার, একটি পিস্তল ও ১০০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্র ও গুলি সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাকারবারিদের মাধ্যমে ঢাকায় এনে বিক্রি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে এসব অস্ত্র পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল চক্রটির।

সূত্র মতে, ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগে সাতটি থানা রয়েছে। প্রতিটি থানাতেই খুনোখুনি অন্য যে কোনো এলাকার চেয়ে বেশি। গত এক বছরে মতিঝিল, সবুজবাগ, খিলগাঁও, রামপুরা, শাহজাহানপুর, মুগদা ও পল্টন মডেল থানা এলাকায় অর্ধশতাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনাও কম নয়। ওইসব এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন্দল চরম পর্যায়ে। এই সুযোগ নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এরা অত্যন্ত কৌশলে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

গত বছর যুবলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে গুলশানের বিপণী বিতান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের (মতিঝিল) সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক মিল্কিকে প্রতিপক্ষের নেতাদের নির্দেশে হত্যা করা হয়। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মিল্কির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী এইচএম জাহিদ সিদ্দিক তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ তারও মৃত্যু হয়।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগে যুবলীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যেও দলীয় কোন্দল রয়েছে। শিবিরের ক্যাডার গ্রুপও রয়েছে। হরতালকে কেন্দ্র করে ডিএমপির এ জোনেই সবচেয়ে বেশি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। আর এ কারণেই সেখানে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের কদর ও দাপট আছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মগবাজার এলাকায় রেলওয়ের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গত বছর এক পরিবারের তিনজন খুন হয়। ওই ঘটনায় কালাবাবু নামে এক সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়। পরে সে ‘ক্রসফায়ারে’ মারা যায়। তার আগে মগবাজার-মালিবাগ-মতিঝিল এলাকায় রেলের জমির একাংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও তার অনুসারীদের হাতে। গ্রুপটি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও তারা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতো। এরাই যুবলীগের ওই নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। আর অস্ত্র সরবরাহে যুক্ত ছিল সাইফুল্লাহর গ্রুপ।

এদিকে সাইফুল্লাহ যার কাছ থেকে অস্ত্র পেয়েছেন তার সম্পর্কে জানতে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) কাছে তথ্য চাওয়া হবে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান। তিনি বলেন, ‘কারা সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্ত্র-ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের সম্পর্কে তথ্য এনআইএ’র কাছে আছে কি না তা জানতে চাওয়া হবে।’

কমিশনার মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘যুবলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে নতুন বছরের শুরুতেই ওই নেতাকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে সাইফুল্লাহর তথ্যের ভিত্তিতে। মতিঝিলের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে।’

জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল্লাহ গোয়েন্দাদের আরো জানান, রাজনৈতিক নেতা হত্যা, নাশকতা ও র্ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ রয়েছে তাদের কাছে। প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীই মূলত তাদের নেতা।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, যুবলীগ নেতাকে হত্যার জন্য অস্ত্রগুলো দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করেছিলেন সাইফুল্লাহ। সেখানে এক ব্যক্তি তাকে মোট পাঁচটি অস্ত্র দিয়েছিলেন। বাকি দু’টি অস্ত্র সাইফুল্লাহ তার এক সহযোগীকে দিয়েছেন। এসব অস্ত্র ব্রাজিল, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়ার অত্যাধুনিক অস্ত্র বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে এই ধরনের অস্ত্র কম পাওয়া যায়। বাংলামেইল২৪ডটকম