শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > মহাজোট সম্প্রসারণে তোড়জোড়

মহাজোট সম্প্রসারণে তোড়জোড়

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষমতার শেষ সময়ে বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবেলা ও জাতীয় নির্বাচনী বৈতরণী সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সরকারের আহ্বানে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও মহাজোটে যোগদানের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে তরিকত ফেডারেশন।

প্রায় দুই মাস আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে দেয়া হয় মহাজোট সম্প্রসারণের দায়িত্ব। তখন তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি), জাকের পার্টি, সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, সিপিবি, গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এবিষয়ে আলোচনা করেন।

এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ২৪ জুলাই যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনকে মহাজোটে যোগদানের আহ্বান জানান।

চার সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবির পর জোট সম্প্রসারণের কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে। ওবায়দুল কাদেরের প্রস্তাবের মাধ্যমে কার্যক্রমে পুনরায় প্রাণ ফিরেছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুত্তাকিল বিল্লাহ রাব্বানি বলেন, ‘আমরা সব সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলাম আছি। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনকে মহাজোটে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যে মহাজোটে যোগদানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে।’

ঈদের পর হেফাজত ও জামায়াত ইসলামকে নিষিদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার শেষ করার জন্য  কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এই জোট সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ায় যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে জাকের পার্টি আগে থেকে মহাজোটের শরীক ছিলো। তারা পুনরায় মহাজোটে সক্রিয় হবে বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপিকে মহাজোটের অন্যতম শরীক দাবি করে মহাজোটে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমাদের নেতা পীরজাদা আলহাজ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী মহাজোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা। জাকের পার্টি মহাজোটের অন্যতম শরীক দলও। মাঝে মহাজোটের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্যের কারণে আমরা জোট থেকে দূরে ছিলাম। গত ৩১ মে ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম ও ১৪ দলের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে পূনরায় মহাজোটে সক্রিয় হয়েছে। সারাদেশে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা মহাজোটকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। জাকের পার্টিকে নতুন করে জোটে নেয়ার কিছু নেই।’

জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই মহাজোটের অংশ ছিলাম। মহাজোট নির্বাচনকালীন জোট ছিল, তাই নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আমরা জোটের কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় ছিলাম। ১৪ দলের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। মতবিনিময়ের পর সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে আগামী নির্বাচনে মহাজোটে জেপি সক্রিয় হবে কী না।’

অন্য দলের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, সিপিবি, গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ মহাজোটে যোগ দিচ্ছেন না বলে জানান তিনি।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ‘মহাজোটের পক্ষ থেকে এখনও যোগাযোগ করা হয়নি। তবে ১৪ দলের ২৩ দফা বস্তবায়নের কোন উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। গণফোরাম যে কারণে ১৪ দলীয় জোট ছেড়েছিলাম তা এখনও কাটেনি।’

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হলে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জোট থেকে প্রস্তাব দিলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা কিছু একটা করবো। তবে বলার মতো অগ্রগতি হয়নি। বড় দুই দল জনগণকে গণতন্ত্রের নামে যা উপহার দিয়েছে তাতে তাদের রাজনীতির সঙ্গে আমাদের রাজনীতি মিলবে না। ’

তবে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতন্ত্রকামী সকল দলের মহাঐক্য গড়ার চেষ্টা চলছে।  মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি মহা ঐক্যের লক্ষ্যে জোট সম্প্রসারণের উদ্যাগ রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও চলছে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কৌশল হিসেবেই জোটের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের শেষ সময়ে রাজপথে শরিকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা করারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জোটনেত্রী শেখ হাসিনা।

মহাজোট মনে করছে, জোটের কলেবর বৃদ্ধি হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিকে সাধারণ মানুষের নজর থাকা যাবে। যার ফসল গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ঘরেই উঠেছিল। কাজেই জোটের মধ্যে থেকে কোনো দল বের হয়ে যাক, সেটি আওয়ামী লীগ চায় না। বরং তারা স্বাভাবিকভাবেই জোট শক্তিশালী করে এর কলেবর বৃদ্ধির কৌশল খুঁজছে।

জোটের ঐক্য অটুট রাখতে ও এর পরিসর বৃদ্ধি করতে গত ২৪ জুলাই গণভবনে ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বৈঠকে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের ব্যাপারে জোটের অন্য শরীকদেরকেও কিছু জানানো হয়নি।

জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমরা এখন দল গোছানোর কাজ করছি। আগে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করি তারপর জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে কাজ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সঙ্গে যে কোনো সময় জোট হতে পারে।’

মহাজোটের অন্যতম শরীক জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘জোটের বাইরের সমমনা দলগুলোকে জোটে অর্ন্তভুক্ত করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সহমত রয়েছে। ’
এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে কাজ চলছে। এখনও বলার মত কোন অগ্রগতি হয়নি।’

প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিনের কাছে জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে বলেন, ‘রাজনীতিতে জোট এটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচন সামনে রেখে অনেকের সঙ্গেই মহাজোটের আলোচনা চলছে।’