বৃহস্পতিবার , ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > আন্তর্জাতিক > মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের পদত্যাগ

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের পদত্যাগ

শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
নতুন সরকার গঠন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দফায় দফায় বৈঠক ও ক্ষমতাসীন জোটে ভাঙনের জোরাল গুঞ্জন ঘিরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝে অবশেষে পদত্যাগই করলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।

সোমবার দেশটির রাজার কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ৯৪ বছর বয়সী এই প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশটির ক্ষমতায় আসেন। তবে পদত্যাগের ব্যপারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, শিগগিরই এ ব্যাপারে একটি বিবৃতি জারি করা হবে।

তবে দুই লাইনের এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে পদত্যাগের ব্যাপারে দেশটির রাজাকে জানিয়েছেন তিনি। মাহাথির মোহাম্মদের রাজনৈতিক দল পার্টি প্রিবুমি বারসাতু মালয়েশিয়া (পিপিবিএম) ক্ষমতাসীন জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির প্রেসিডেন্ট মুহিউদ্দিন ইয়াসিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে জোট ছাড়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ের পর পাকাতান হারাপান জোটের প্রধান হিসেবে ওই বছরের ১০ মে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন মাহাথির মোহাম্মদ। বারিসান ন্যাশনাল দলের নেতা হিসেবে টানা প্রায় ২২ বছর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৩ সালে ক্ষমতা থেকে সরে যান তিনি।

গত কয়েকদিন ধরে মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন পাকাতান হারাপান জোটের নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করায় জোট ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। পাকাতান হারাপান জোটে ভাঙনের আশঙ্কা জোরালো হওয়ায় বিরোধী দল উমনো অ্যান্ড পার্টি ইসলাম সে-মালয়েশিয়ার (পিএএস) নেতৃত্বে শিগগিরই নতুন সরকার আসতে পারে বলে দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান।

এর আগে, রোববার ক্ষমতাসীন পাকাতান হারাপান জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করায় নতুন সরকার গঠনের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল পার্টি প্রিবুমি বারসাতু মালয়েশিয়ার (পিপিবিএম) এমপি ও নেতারা রোববার সকালে পেটালিং জায়ায় দলটির প্রধান কার্যালয়ে ছয় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

তবে অন্য একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, দলের প্রেসিডেন্ট মুহিদ্দিন ইয়াসিন, দলটির ছাত্র সংগঠনের প্রধান সৈয়দ সিদ্দিক আব্দুল রহমান ও অন্যান্য দলের সাংসদদেরও রোববার ওই কার্যালয়ে দেখা যায়।

মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে বেশ পরিচিত দুই নেতা মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহীম (৭২)। রোববার রাতে জোট নেতাদের ওই বৈঠকে দেশটিতে নতুন সরকার গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়ায়। প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দুই বছর আগে ক্ষমতায় আসার সময় তার জোটসঙ্গী বহু বর্ণের রাজনৈতিক দল পিকেআরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে সমঝোতা করেন। সেই সময় তিনি জানান, ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই সরে যাবেন এবং আনোয়ার ইব্রাহীমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ার এই প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি আগামী নভেম্বরে দেশটিতে অনুষ্ঠেয় অ্যাপেকের শীর্ষ সম্মেলনের পরপরই পদত্যাগ করে আনোয়ার ইব্রাহীমকে তার স্থলাভিষিক্ত করবেন। কিন্তু চারদলীয় পাকাতান হারাপান জোটের অন্য নেতারা আনোয়ার ইব্রাহীমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে মাহাথিরের পরিকল্পনা মেনে নিতে পারছেন না। যে কারণে গত কয়েকদিন জোটের অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করে আনোয়ার ইব্রাহীমকে ঠেকাতে নতুন জোট গড়ার পরিকল্পনা করেন।

সম্প্রতি দেশটির পাঁচটি উপ-নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের মনোনীত প্রার্থীদের হেরে যাওয়ার পর এই জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। এমনকি আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আজমি আলীর সঙ্গে বিভেদ দেখা দেয়। আজমিন ঘনিষ্ঠরা মাহাথিরের পিপিবিএম ছেড়ে পিকেআরের সঙ্গে জোট গড়ার পরিকল্পনা শুরু করেন। সংসদে এই দলটির সর্বোচ্চ ৫০ জন এমপি রয়েছেন। তারা বলছেন, সংসদে মাত্র ২৬ এমপি রয়েছেন পিপিবিএমের। এই দলটিও পাকাতান হারাপান জোট ছাড়ার ইঙ্গিত দেয়।

১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মাহাথির মোহাম্মদের ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আনোয়ার ইব্রাহীম। কিন্তু দেশটিতে উদ্ভূত অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার কৌশল নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়ায় ১৯৯৮ সালে আনোয়ার ইব্রাহীমকে বরখাস্ত করেন মাহাথির মোহাম্মদ। পরে সমকামীতার অভিযোগ এনে আনোয়ারকে কারাগারে পাঠানো হয়।