শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > খেলা > মাশরাফির সিদ্ধান্ত মাশরাফিই নেবেন

মাশরাফির সিদ্ধান্ত মাশরাফিই নেবেন

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥
বয়স আগে না পারফরম্যান্স? মাশরাফি বিন মুর্তজার মনে এখন এই প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিতেই পারে। সাতবার অস্ত্রোপচারের টেবিল থেকে নেমেও খেলে যাচ্ছেন। পারফরম্যান্স একেবারে খারাপ নয়। নেতৃত্বে অদ্বিতীয়। দলকে বিনিসুতোর মালায় গেঁথে রাখার নিপুণ কারিগর। তবু ইদানীং কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছে, মাশরাফি কেন এখনো খেলে যাচ্ছেন? অথবা মাশরাফিকে কি আরও খেলানো হবে?
আবার পাল্টা প্রশ্ন করার লোকও আছে। কেন খেলবেন না মাশরাফি? কেন তিনিই থাকবেন না ওয়ানডে দলের অধিনায়ক? বয়স ৩৩ পার হয়ে গেছে বলেই কি!
কৌতূহলীদের প্রশ্ন মূলত ২০১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে। মাশরাফি কি ওই বিশ্বকাপেও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন? তত দিন খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন তো! নাকি বিকল্প কিছু ভাবছে বিসিবি? দু-তিন দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান মাশরাফির টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে একটি প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি একবারও বলেননি, তাঁরা মাশরাফির বিকল্প খুঁজছেন। বরং নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রভাবশালী এক বোর্ড পরিচালক বলেছেন, ‘যদি ফর্ম ঠিক থাকে এবং মাশরাফি চোটমুক্ত থাকে, তার খেলা চালিয়ে যাওয়াতে সমস্যা দেখে না বোর্ড।’ বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান আকরাম খান তো সরাসরিই বলে দিলেন, ‘ও একজন সফল অধিনায়ক, বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি। মাশরাফির ব্যাপারে যেকোনো সিদ্ধান্ত তাকেই নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ক্যারিয়ার নিয়ে ও যে সিদ্ধান্ত নেবে, সবার সেটাই মেনে নেওয়া উচিত।’

২০১৫-এর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল—পরপর দুটি বড় টুর্নামেন্টে মাশরাফির নেতৃত্বে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। ফর্ম ও ফিটনেস ঠিক থাকলে ২০১৯ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ তাঁকেই চাইবে। তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। পারফরম্যান্স নিয়ে কখনো কখনো প্রশ্ন উঠলেও দ্রুতই দারুণ কিছু করে সেটি বুদ্বুদের মতো মিলিয়ে দিয়েছেন।

অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির এটি তৃতীয় ‘ইনিংস’। প্রথম দুবারই তাঁর অধিনায়কত্ব-অধ্যায় শেষ হয়েছে চোটে পড়ে। ২০১৪-এর নভেম্বরে তৃতীয় দফায় অধিনায়কত্ব পাওয়ার পরও বড় শঙ্কা ছিল এটি নিয়েই। কিন্তু একসময় চোটকে নিত্যসঙ্গী বানিয়ে ফেলা মাশরাফি সেই অভিশাপকে জয় করে গত বছর তিনেক টানা খেলে যাচ্ছেন। ম্যাচের পর ম্যাচ হারতে থাকা বাংলাদেশকে ঘোর অমানিশা থেকে উজ্জ্বল আলোতে নিয়ে আসার কৃতিত্বও তাঁর। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫-০ ম্যাচে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু। এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা। সেটিই যেন জাদুমন্ত্রের মতো বদলে দিল মাশরাফির বাংলাদেশকে। পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা পাঁচটি সিরিজ জয়। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হারলেও একটু এদিক-ওদিক হলেই বাংলাদেশ জিততে পারত সেটিও। মাশরাফির অধিনায়কত্বের তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে জয় পায়নি শুধু নিউজিল্যান্ড সিরিজে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ ১-১-এ ড্র হয়েছে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এসেছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই স্মরণীয় এক জয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খেলল সেমিফাইনাল। এই সময়ে মাশরাফির নেতৃত্বে ৪০টি ওয়ানডের ২৪টিতে জয়, সাফল্যের হার ৬২.৫ শতাংশ।

একাই ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার ক্ষমতার দিক থেকে দলের অন্য বোলারদের চেয়ে একটু পিছিয়ে থাকতে পারেন, তবে পরিসংখ্যান কিন্তু একটা ক্ষেত্রে মাশরাফিকেই রাখছে এক নম্বরে। আবার অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৪.৯৪। খেলা চালিয়ে যাওয়ার মতো ফর্ম ও ফিটনেস যেহেতু এখনো আছে, অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির বিকল্প খোঁজার তাড়াহুড়া নেই বিসিবির। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মনে একটু খচখচানি ছিল। মাশরাফির জায়গায় আরেকটু জোরে বল করা কাউকে যদি পাওয়া যায়ৃ। এখন তিনিও নাকি মাশরাফির ব্যাপারে ইতিবাচক। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি উপলক্ষে ৫০ দিনের সফরে মাশরাফি একবারের জন্যও ফিজিওর টেবিলে ওঠেননি, সেই খবরও তো আর অজানা নয় হাথুরুসিংহের। অধিনায়কের কাছে তাঁর বাড়তি চাওয়া বলতে ব্যাটে দ্রুত ১৫-২০টি রান এবং বোলিংয়ে আরেকটু আক্রমণাত্মক মনোভাব। যেটি পূরণ করা মাশরাফির জন্য অসাধ্য কিছু নয়।

অধিনায়ক মাশরাফির বিকল্প যে এখনো তৈরি হয়নি, সেটি তাঁর শত্রুও (যদি কেউ থাকে) মানতে বাধ্য। বিসিবিও সেটা মানে বলেই মাশরাফির সঙ্গে এখন পর্যন্ত এসব নিয়ে আলোচনা করেনি। তবে চোটাঘাতে যে কেউ যেকোনো সময় পড়তে পারে। ফর্মও কারও হঠাৎ খারাপ হতেই পারে। মাশরাফির ক্ষেত্রে সে রকম কিছু হলে অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডের বর্তমান সহ-অধিনায়ক সাকিবই প্রথম পছন্দ হবেন বোর্ডের। কিন্তু ও রকম পরিস্থিতিতে বোলিং প্রান্তে মাশরাফির পরিবর্তক কে হবেন, এটা একটা প্রশ্ন। দলের ভেতরে-বাইরে এমন কোনো পেসার তো নেই, যিনি মাশরাফির চেয়ে অনেক ভালো কিছু করে দেখাচ্ছেন।

সব মিলিয়ে আকরাম খানের কথাটাই হয়তো ঠিক। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারটা মাশরাফির পরই ছেড়ে দেওয়াই ভালো।

তিনি নিজে কী বলেন

পারফরম্যান্স ঠিক থাকলে আমি খেলে যাব। কারণ খেলাটা এখনো উপভোগ করছি। আমি এখন যেমন খেলছি, তাতে উপভোগ না করার কোনো কারণ দেখছি না। আর আমি তো বিসিবির কাছ থেকে অধিনায়কত্ব চেয়ে নিইনি, বিসিবিই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। এখন বিসিবি যদি মনে করে দায়িত্বটা অন্য কাউকে দেবে তো দিতেই পারে। আমি অধিনায়কত্বের জন্য খেলি না। আমি খেলোয়াড়, সে জন্যই খেলি। ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা বললে এখানে ফিটনেসটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফর্মও ভালো থাকতে হবে। এ দুটো ঠিক থাকলে ২০১৯ বিশ্বকাপ আমি কেন খেলতে চাইব না! সব ঠিক থাকলে অবশ্যই আমার তত দিন খেলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। প্রথম আলো