শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > মিয়ানমারের সদিচ্ছা থাকলে দালিলিক প্রমাণ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া যাবে

মিয়ানমারের সদিচ্ছা থাকলে দালিলিক প্রমাণ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া যাবে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সহিংসতায় যে ৬ লাখেরেও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদের ফিরিয়ে নিতে দেশটি পরিচয় প্রমাণের শর্ত জুড়ে দিয়েছে। কিন্তু এরজন্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সদিচ্ছা। বৃহস্পতিবারে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের যে সমঝোতা দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছে তার ভিত্তিতে আগামী ২ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলা হচ্ছে। কিন্তু সেই সঙ্গে মিয়ানমার এই কথাও জানিয়েছে ১৯৯২ সালে যে সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদেরকে ফেরানো শুরু হয়েছিল এবারও ঠিক একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। এর ফলে বেশ কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছে যে মিয়ানমার আদৌ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে কি না নাকি অতীতের মত এ নিয়ে তালবাহানা শুরু করবে।

কিন্তু ঠিক কী ছিল ২৫ বছরের আগের সেই সমঝোতায়?

বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষৎকারে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে বিআইআইএস’এর চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, মূল যে কথাগুলো ছিল সেটা হলো কিভাবে নির্ধারণ করা হবে তারা মিয়ানমারের নাগরিক কি না বা মিয়ানমার থেকে এসেছে কি না এবং তাদেরকে ফেরত দেওয়া হবে কি না। সেখানে বেশ কয়েকটি বিষয় ছিল যেমন তাদের কাছে নাগরিকত্ব সনদ থাকতে হবে, পরিচয়পত্র থাকতে হবে বা কোথায় পড়াশুনা করেছে তার একটা সনদ থাকতে হবে। কিন্তু এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি কারণ সেটা যদি তারা প্রমাণ করতে পারে যে তারা মিয়ানমার থেকে এসেছে তাহলেই তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তাহলে আর কোনো কিছু প্রয়োজন হবে না এবং সেদিক থেকে এটা আমাদের যে প্রয়োজন সেটা কিন্তু মিটে যায়। তবে কতগুলো জিনিসের ব্যাপারে আমরা চিন্তিত যে যারা ফিরে যাচ্ছে তারা কি আবার ফিরে আসবে কিনা সেটা কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে। স্থায়ী সমাধন কিভাবে হবে। সেটার কোনো ব্যবস্থা ওখানে ছিল না।

১৯৯২ সালের শুরু হওয়া যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সেটাতো অনেক বছর ধরে চলেছিল কিন্তু সে প্রক্রিয়া এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এখন ১৫ বছর পরেও কি সেই একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে?

এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করব যেন না হয়। তার বড় কারণ হলো সেই সময় যে ঘটনাগুলো হয়েছিল তখন কিন্তু সারা পৃথিবীর নজর ওখানে ছিল না। তখন শুধু বাংলাদেশ মিয়ানমার একত্রিত হয়ে সমাধান করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এখন ওখানে যে সহিংসতা তৈরি হয়েছে যে অত্যাচার, নিপীড়ন শুরু হয়েছে যেটা সারাদেশে এখন ছড়িয়ে পড়েছে। সুতরাং এখন এটা ফাঁকি দেওয়া কোনোভাবে সম্ভব হবে না।
কিন্তু আপনি যদি দেখেন যে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের বেশিরভাগেরই কিন্তু সর্বস্ব পুড়ে গেছে। এখানে তো পরিচয়পত্র থাকবার কোনো প্রশ্নই নেই। তাহলে তাদেরকে সনাক্তকরণের কাজ কিভাবে হবে?

এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এইখানে একটি গুরুত্ব বিষয় হচ্ছে সদিচ্ছা। সদিচ্ছা যে সব সময় নিজের থেকে হয় বা শতপ্রণোদিতভাবে হয় সেটা কিন্তু নয়। অনেক সময় কিন্তু সদিচ্ছা চাপের কারণেও হয়। তাই সদিচ্ছা থাকলে ছোট ছোট সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া যায়। আর সেইজন্যই আমি প্রথমে ওই কথাটি বললাম কোন রকম দালিলিক প্রমাণ ছাড়াও তাদেরকে ফেরত নেওয়া যাবে। যদি প্রমাণ করা যায় তারা মিয়ানমার থেকে আসছে। সেটার কিন্তু অনেক রকমের ব্যবস্থা আছে তারা মিয়ানমারের কোথায় ছিল, তাদের আতœীয়-স্বজন বা পাড়াপ্রতিবেশির নাম বলা এগুলোই তো যথেষ্ট প্রমাণ। তাছাড়া এখন যখন আমরা নিবন্ধন করছি তখন প্রথম থেকেই আমরা আইওএম এর সহযোহিতায় একাজটি করছি যাতে তারাও দরকার হলে সনাক্ত করণের বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারে। আর এটা যে কোনো ফেলে দেওয়ার মতো কাজ হলো তা কিন্তু নয়।
১৯৯২ সালের পরিস্থিতি এবং ২০১৭ সালের মধ্যে মৌলিক ফারাকটা কী আর পুরোনো প্রত্যাবাসনের মডেলটা আদৌ কাজে আসবে?

এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য সেটা যথেষ্ট হতে পারে কিন্তু প্রত্যাবাসনটাই আসলে সবকিছু নয়। এর জন্য একটা স্থায়ী সমাধান করতে হবে। সেই জিনিসটা আগে ছিল না কিন্তু সেটার জন্য এখন চেষ্টা করা হচ্ছে। সারা পৃথিবী এটার জন্য কাজ করছে। তাছাড়া আমরা যাদেরকে ভেবেছিলাম দূরে সরে আছে কিন্তু তারাও এগিয়ে আসছে কিভাবে এর স্থায়ী সমাধান করা যাবে। এর ফলে অবস্থার গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। সারা পৃথিবীর নজর, এখানে সবাই যুক্ত হয়েছে এবং সবাই বলছে এদের স্থায়ী সমাধানের কথা যেন রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পায়। যে নাগরিকত্ব ১৯৮২ সালের আইনে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যেটা আগে তাদের ছিল। এখন আনান কমিশন রিপোর্ট বলে একটা জিনিস আছে সেই কমিশনের রির্পোট তো তারা ফেলে দিতে পারবে না। এমন অনেক কাজ আছে যার কারণে কাজগুলো এখন সহজ হয়ে গেছে।