শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > মিয়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’ না বলার ব্যাখ্যা দিলেন পোপ ফ্রান্সিস

মিয়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’ না বলার ব্যাখ্যা দিলেন পোপ ফ্রান্সিস

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
পোপ ফ্রান্সিস মনে করেন, মিয়ানমার সফরের তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এড়িয়ে গেলেও আলোচনার পথ বন্ধ করে না দিয়ে দেশটির সরকার ও সামরিক বাহিনীকে কাছে তিনি আসল বার্তাটি ঠিকই পৌঁছে দিতে পেরেছেন।

তিন দিনের ঢাকা সফর শেষে শনিবার রোমের পথে বাংলাদেশ ছাড়ার পর উড়োজাহাজে তিনি সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চরণ না করার ব্যাখ্যা দেন।

মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর বিষয়টি দৃঢ়তার সঙ্গেই তুলে ধরেছেন বলে ইংগিত দেন রোমান ক্যাথলিকদের এই সর্বোচ্চ ধর্মগুরু।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় রোহিঙ্গাদের তিনটি পরিবারের কাছ থেকে তাদের দুর্দশার কথা শুনতে শুনতে চোখ ভিজে আসার কথাও তিনি সাংবাদিকদের বলেন। তিনি জানান, সেই অশ্রু তিনি লুকাতে চেয়েছিলেন।

ওই অনুষ্ঠানেই পোপ এশিয়া সফরে প্রথমবারের মত রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ঈশ্বরের উপস্থিতি রোহিঙ্গাদের মধ্যেও বিরাজ করছে।

রোমের পথে পোপ সাংবাদিকদের বলেন, “আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, বার্তাটি ঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া, একবারে একটি বিষয়ে কথা বলা এবং অন্যপক্ষের জবাব শোনা।“আমি যদি বক্তৃতায় ওই শব্দটি ব্যবহার করতাম, তারা হয়ত আলোচনার পথ আমার মুখের ওপরই বন্ধ করে দিত। প্রকাশ্যে বক্তৃতায় আমি পরিস্থিতিটা তুলে ধরেছি, অধিকারের বিষয়গুলো সামনে এনেছি; বলেছি, নাগরিকত্বের অধিকার থেকে কাউকেই বঞ্চিত করা উচিৎ নয়। এটা করতে হয়েছে, যাতে একান্ত বৈঠকে আমি আরও কিছু বলতে পারি।”

পোপ ফ্রান্সিসের এই এশিয়া সফর হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ব্যাপক দমন-পীড়নের মুখে সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

সেনাবাহিনী কীভাবে নির্বিচারে মানুষ মারছে, ধর্ষণ, লুটপাট করছে, সেই বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কথায়। ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে।

বিভিন্ন সময়ে শরণার্থীদের অধিকারের প্রশ্নে এবং তাদের দুর্দশা লাঘবে সরব হওয়া পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমার সফরে রোহিঙ্গাদের বিষয়েও তার দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরবেন বলে অধিকার সংগঠনগুলোর প্রত্যাশা ছিল।

মিয়ানমারে দেওয়া ভাষণে পোপ সম্প্রীতির ডাক দিয়ে প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীকে সম্মান দেখানোর আহ্বান জানালেও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ না করায় বিষয়টি সংবাদের শিরোনাম হয়।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশ মিয়ানমারের রোমান ক্যাথলিক চার্চ সফরের আগেই পোপকে অনুরোধ জানিয়েছিল, তিনি যেন তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করেন। তাদের আশঙ্কা ছিল, পোপের মুখ থেকে ওই শব্দটি এলে মিয়ানমারের খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর নতুন করে সহিংসতা শুরু হতে পারে।

গত ২৮ নভেম্বর ইয়াংগনে পৌঁছানোর পরপরই মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় পোপ ফ্রান্সিসের। ওই বৈঠক বৃহস্পতিবার হওয়ার কথা থাকলেও সেনাবাহিনী শেষ মুহূর্তে বৈঠকের সময় এগিয়ে আনে। ফলে পোপ বেসামরিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসার আগেই তাকে সেনাবাহিনীর মনোভাব জানিয়ে দেওয়ার সুযোগ হয় তাদের।ওই বৈঠকের বিষয়ে পোপ সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার ‘ভালো’ আলোচনা হয়েছে এবং সত্য প্রকাশে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।

সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন কি না- এ প্রশ্নে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, “যে বার্তা আমি দিতে চেয়েছি সেজন্য প্রয়োজনীয় শব্েই আমি ব্যবহার করেছি। যখন বুঝলাম, আমার বার্তা তাদের কাছে পৌঁছেছে, তখন আমার যা যা বলার ছিল সবকিছুই বলার সাহস পেলাম।”

এরপর ইংগিতপূর্ণ হাসি দিয়ে এক সাংবাদিককে সেই লাতিন প্রবাদটি পোপ বলেন, যার অর্থ- বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।

রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সমালোচনা করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তবে পোপ বিষয়টি সেভাবে দেখছেন না।

গত ২৮ নভেম্বর সু চির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, “রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে মিয়ানমার রাজনৈতিকভাবে বিকাশের পর্যায়ে রয়েছে। সুতরাং সেই চোখ দিয়েই বিষয়গুলো দেখতে হবে। রাষ্ট্রগঠনের কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই এগোতে হবে।”

সূত্র- বিডি নিউজ