বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
১৯৭০ সালে তৎকালীন দুই পাকিস্তানে রেকর্ড সংখ্যক মার্ক নিয়ে পাস করে ‘লোটাস’ খ্যাতি পাওয়া সনদপ্রাপ্ত হিসাববিজ্ঞানী (চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট)আ.হ.ম মুস্তফা কামালের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। এই তো কদিন আগেও যেখানে শেয়ার বাজারে ধসের জন্য তাকে গালাগাল করা হয়েছে, এখন তিনি আইসিসি প্রেসিডেন্ট পদ ত্যাগ করে রাতারাতি আলোচনায়, জনপ্রিয়তায় একনম্বর অবস্থানে চলে এসেছেন।
চায়ের দোকানে, ভার্সিটি ক্যাম্পাসে যে-ই খেলা বোঝেন, সে-ই কামাল কামাল আলোচনা করছেন। কামাল কী বলল, কী করল, শ্রীনিবাসনকে আরো কী কী শিক্ষা দিয়ে আসলে ভালো হত এটাই এখন আলোচনার বিষয়।
হবেই না কেন? মুস্তফা কামাল সেদিন, বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের রাতে, অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে যেভাবে ভিলেন শ্রীনিবাসনকে তুলোধুনো করেছেন, আহাহা এককথায় অসাধারণ! একেবারে নাকানি চুবানি খাইয়ে তবেই না সেদিন তিনি আলোচনা হতে বেরিয়েছেন। সেদিনের তঞ্চকতায়, কি আইনে, কি গলার জোরে, কামালের কাছে শ্রীনিবাসন মিউ মিউ করেছেন। ভারতের আনন্দ বাজার লিখেছে, শ্রীনিবাসন যখন ডেকে বললেন আপনাকে ট্রফি দিতে দিবনা, অমনিই কামালের জেরায় আর বকুনিতে শ্রীনিবাসন পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে।
কামাল শ্রীনিবাসনকে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আজকের দিনে আইসিসি প্রেসিডেন্ট কে? শ্রীনিবাসন বলেন, আপনি। কামাল পাল্টা প্রশ্ন করেন, কালকে আইসিসি প্রেসিডেন্ট কে থাকবে? শ্রীনিবাসন আবারো বলেন, আপনি। কামাল রেগে বলেন, তাই যদি হয় তা হলে আমি বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে দেব না কেন? তখন শ্রীনিবাসন বলেন, উত্তরটা আপনাকে আগেই দেওয়া আছে।
এরপর কামাল যেন বিস্ফোরণ ঘটান। শ্রীনিবাসনকে আংগুল তুলে বলেন, আপনি এমন কোনও বেআইনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এতে কিন্তু আগুন জ্বলে যাবে। আপনি বুঝতে পারছেন না কী করতে যাচ্ছেন।
আগুন জ্বলে যাবে বলে হুমকি দেন মুস্তফা কামাল। আইসিসির গডফাদার খ্যাত শ্রীনিবাসন এর সামনে এভাবে প্রকাশ্য হুমকি দেয়ার বুকের পাটা অনেক বড় দেশের সংগঠকদের হয়নি। অস্ট্রেলিয়া আফ্রিকা যেখানে তার ভয়ে মিউ মিউ করে, তার বিকারগ্রস্ত আবদার মেনে নেয়, মোস্তফা কামালের এহেন গর্জন সেখানে উপস্থিত প্রভুভক্ত কর্মকর্তারা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
শ্রীনিবাসন এই অপমানের জ্বালা থেকে আরো কঠোর হয়ে পরদিন সকালে একা একাই ট্রফি দিতে চলে যান। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে ভাগ্য ভালো যে তার পাশে শচীন মঞ্চে ছিল।শচীনই তাকে বাঁচিয়ে দিল।তা না হলে ৯৩হাজার দর্শক যেভাবে দুয়োধ্বনি দিয়েছে তার ফিরে আসাটাও কঠিন হত। এমন নজির বিশ্বে আর নাই।
তার দুদিন পর শ্রীনিবাসনকে বিকারগ্রস্ত আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করে আহম মুস্তফা কামাল নিজেকে যে এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে গেছে তা রীতিমতো ইর্ষা জাগানিয়া। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মিডিয়া গুলো ‘মুস্তফা কামালের এই পদত্যাগে দারুন রোমঞ্চিত ।তারাও ভারতের মোড়লগিরিতে অতিষ্ঠ।
শ্রীনিবাসন মানসিক অসুস্থতা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়াগুলো এখন মিনমিন করে হলেও আওয়াজ তুলছেন। তার পদত্যাগ গ্লানির বা কাপুরুষতার হয়নি, এই পদত্যাগ প্রতিবাদের শক্তিশালী নজির হয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এসেছে। ভারতের আইসিসি সাম্রাজ্যে রীতিমতো চপেটাঘাত হয়েছে।
হয়তো শ্রীনিবাসন চাইবে ভারতের বাংলাদেশ সফর বাতিল হোক(এটা তার চরিত্রের সাথে যায়। শ্রীনিবাসন একজন অতিমাত্রায় প্রতিশোধ পরায়ন ব্যক্তি।)। তাতে কি? বাংলাদেশ যে আপোষহীন অসাধারণ প্রতিবাদী চেতনা সম্পন্ন জাতিসত্তার রাষ্ট্র, তা এরইমধ্যেই পৃথিবী জেনেছে।
এর আগে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সারির দল হিসেবে অবনমনের চেষ্টার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যেভাবে গর্জে উঠেছিল, তখন শ্রীনিবাসনরা চুপসে গিয়েছিল। সেদিন তা আইসিসিতে তিন মোড়লের বিরুদ্ধে না ভোট দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছিল। যদিও এখনো আমরা খারাপ খেলি, বিশ্বে নয় নম্বর, তাই বলে সত্য উচ্চারণে পিছপা হব কেনো? প্রতিবাদ করব না কেনো। মোড়লরা জেনে গেছে মোড়লগিরির বিরুদ্ধে যে কোন খেলায় বাংলাদেশই চ্যাম্পিয়ন। এই প্রতিবাদী বাংলাদেশ নিয়ে এখন ভারতের ভয়। শ্রীনিবাসনের ভয়।
শ্রীনিবাসন বাংলাদেশের ক্ষতি করতে পারে বলে যারা ভয় পাচ্ছেন তাদের জন্য বলছি ভারতীয় ক্রিকেট তার হাতে এখন নাই। বিসিসিআইতে জগমোহন ডাল মিয়া ক্ষমতায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বন্ধু বলে তিনি পরিচিত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আজ যে উত্থান তাতে তার সমর্থন স্বীকার করতেই হবে। আর বাজারের কথাই যদি বলেন, ক্রিকেটের বিপণনে ভারতেকে যেমন দরকার বাংলাদেশকেও দরকার।জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের পরেই আইসিসিতে বাংলাদেশের অবস্থান। মনে রাখবেন, আইসিসির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার বাংলাদেশ। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম