শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > লাইফস্টাইল > মেজাজ হারাচ্ছে এই প্রজন্ম

মেজাজ হারাচ্ছে এই প্রজন্ম

শেয়ার করুন

লাইফস্টাইল ডেস্ক ॥ ‘কুল’ শব্দটা কথায় কথায় লেগে থাকে যে প্রজন্মের মুখে, সেই জেন-ওয়াই আদপে কতটা ‘কুল’? সমীক্ষা ইত্যাদিতে উত্তরটা পেয়ে চোখ কিন্তু কপালে ওঠে। এমনিতেই নাক উঁচু, বখাটে তকমা পিছু ছাড়ে না; এর সঙ্গে আবার বদমেজাজি তকমাও জুটেছে এই প্রজন্মের। সমীক্ষকরা বলছেন, হ্যাপেনিং ইত্যাদি যতই ট্যাগ সেঁটে থাকুক, বদমেজাজ আর দুর্ব্যবহার এই প্রজন্মের চলতি হাওয়ায় আর এক ইমেজ। সে বাইকের দুরন্ত গতিতে হোক বা বাড়ির পুরনো ড্রাইভারের প্রতি বাক্য বিনিময়ে, মন্দস্বভাবের নিন্দে অবিরাম জুটছেই। নিন্দে জুটছে বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রায় হররোজ দুর্ব্যবহারের জন্য, নিন্দে জুটছে মনের মানুষের সঙ্গে কথায় কথায় ঝগড়া থেকেও! এখন তা কতটা রুডনেস আর কতটা ‘ডোন্ট কেয়ার কুল’ মনোভাব- তার ইয়ত্তা করা শক্ত।

তবে একটু আগেই যে সমীক্ষার কথা বলা হচ্ছিল, তা কিন্তু আঙুল তুলছে নেতিবাচক দিকেই। সম্প্রতি আমেরিকার একদল মনোবিজ্ঞানী প্রায় ১৫০ জন কলেজ ছাত্র-ছাত্রীর ওপর একটি মনোবৈজ্ঞানিক সমীক্ষা করেন। তারপর দলটির প্রধাণ ব্রিজেট ফিলিপ জানাচ্ছেন, ‘আসলে এই প্রজন্মের মানসিক টানাপোড়েন নিয়ে আমরা একটা সমীক্ষা করছিলেন। সেখানে উঠে এল এই প্রজন্মের মধ্যে রুডনেস বিষয়টা খুব বেশি। বাসের কনডাক্টরের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা থেকে শুরু করে অল্প কথায় মেজাজ হারিয়ে ফেলে একেবারে হাতাহতিতে চলে যাওয়া লেগেই আছে এদের। এই প্রবণতাও আবার বেশি করে দেখা দিয়েছে গত ৫-৭ বছর ধরে। দ্রুত জীবনের অসহিষ্ণুতার ফল হিসেবেই এমন প্রতিক্রিয়াকে দেখতে পাচ্ছি আমরা’। কথাটা এই শহরের চলতি হাওয়ার ক্ষেত্রেও মিথ্যে নয়। সে হাতাহাতির কথা ধরলে, রাত ৩টেয় ট্যাক্সিওয়ালাকে নিয়ে অজানায় পাড়ি দিতে চাওয়া যুবক, ট্যাক্সিওয়ালার বিরোধে সহসাই ক্ষেপে ওঠেন। আর বদমেজাজে সম্পর্ক খোয়ানোর বিষয়ে আমরা সকলেই তো কম-বেশি অভিজ্ঞ।

তো, এই বদমেজাজ নিয়েই অনিন্দিতা সমাদ্দারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ‘আমরা এই জেনারেশন সত্যিই বোধহয় একটু রুড। আমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে মাস দুয়েক আগে ব্রেক আপ হয়েছে আমার। সায়ন খুব ভাল ছেলে। কিন্তু রেগে গেলে ওর মাথার ঠিক থাকে না। গালাগালি, গায়ে হাত তোলা, তখন মানুষটা পালটে যায়। আর রেগেও যায় চট করে। তারপর ভালবাসলে সেই মানুষটাই আবার বিপরীত। এই বৈপরীত্য হয়তো আমাদের জেনারেশনের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু মাঝেমধ্যে রুডনেস বড্ড কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করায়’। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনিন্দিতার এমন স্পষ্ট স্বীকারোক্তি আবার কিছু প্রশ্নের মুখে দাড় করায়। রাগ দমন করে ভাল ব্যবহার করার মধ্যে যে ‘ক্লাস’ আছে, তারই তো প্র্যাকটিস করে এই প্রজন্ম। তাই তো এত নিজেকে ম্যানেজমেন্ট-এর হাজার কোর্স চরিদিকে। তাহলে ফলটা এত নেতিবাচক কেন?

মনোবিদ অনিতা বন্দোপাধ্যায় বলছেন, ‘উত্তর খুঁজতে গেলে আবার কিন্তু এখানে গ্লোবালাইজেশনের প্রসঙ্গ আসবে। আমাদের এখন ফাস্ট ফুডের জীবন। এই ফাস্ট ফুড এমন অনেক হরমোনের গন্ডগোল ঘটায় যা ছেলে বা মেয়েটির সহ্যশক্তি কমিয়ে তাকে রাগী করে দেয়। এই রাগেরই বহির্প্রকাশ বদমেজাজ। রূঢ় ব্যবহার। সভ্যতার আশীর্বাদ আর অভিশাপ এমনভাবেই পাশাপাশি চলছে যে’। এরই পাশাপাশি জেন-ওয়াইয়ের আরেক অভ্যাসের কথা তুললেন মনোবিদ। ‘এখনকার ছেলেমেয়েদের অনেকেরই অবসর সময় কাটে কম্পিউটার বা ভিডিও গেম খেলে। সেই সব খেলায় কেবলই মারামারি, একে অপরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার নিরন্তর চেষ্টা। সেই ভার্চুয়াল খেলাকে বাস্তব ভেবেই তো খেলছে তারা। পরিণামে উত্তেজনা হয়ে পড়ছে সব সময়ের সঙ্গী, সেখান থেকে আসছে বদমেজাজও’!

তাহলে উপায়? গ্লোবালাইজেশনের আশ্চর্য প্রদীপ তো হাতে এসে গেছে। তাকে ঘষেমেজে জিনিটাকেও বের করা হয়েছে। এবার সে মাথায় চেপে তুর্কি নাচ যাতে না দেখায়, তার ম্যানেজমেন্ট কে করাবে? সে উপায়ও সত্যি কথা কী, আছে নিজের হাতেই। ‘দরকার শুধু একটু মানিয়ে-গুছিয়ে নেওয়া, যতটা সম্ভব মেজাজটাকে সামলে রাখা। রাগের পর মাথা ঠান্ডা হলে নিজেরও তো খারাপ লাগে। সেটাকে এড়ানোর জন্যই না-হয় বদমেজাজি স্বভাবটাকে পাল্টে ফেলা যাক’, জানাচ্ছেন মনোবিদ।