শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > খেলা > মেসির পক্ষেই নেইমার

মেসির পক্ষেই নেইমার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফুটবলের ক্ষেত্রে দা-কুমড়ো সম্পর্ক। নিজের নাক কেটে হলেও অন্যের অমঙ্গল কামনা করে তারা। কিন্তু এবার বিশ্বকাপে ব্যতিক্রমী নজির দেখালেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ৭-১ গোলে হেরে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে ব্রাজিল। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে (৪-২) হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কেটেছে ব্রাজিলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা। আগামীকাল ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে শিরোপার লাড়াইয়ে তারা মুখোমুখি হবে জার্মানির। আর্জেন্টিনা ফাইনালে ওঠার পর অনেকে মনে করেছিলেন, আর কিছু হোক ব্রাজিলীয়রা ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে মোটেও সমর্থন করবে না। জার্মানির পক্ষে গলা ফাটাবে তারা। মাঠে হয়তো তেমনটাই হবে। তবে ব্রাজিলের দুই যুগের দুই ফুটবল মহারথী দেখালেন ভিন্ন নজির।

ফাইনালে ওঠার পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর শুভকামনা করেছিলেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলে। বলেছিলেন, আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতলে তিনি খুশি হবেন। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে শিরোপা বাইরে যেতে দিতে চান না তিনি। এবার আর্জেন্টিনার শুভ কামনা করলেন হালের ব্রাজিল তারকা নেইমার। আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসির হাতেই তিনি এবার বিশ্বকাপের শিরোপা দেখতে চান। কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে মেরুদ-ের হাড্ডিতে চোট লাগার পর জার্মানির বিপক্ষে দেশের হয়ে সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি নেইমার। এতে তার দল ইতিহাসের সবেচেয়ে লজ্জাজনক ৭-১ গোলের ব্যবধানে হেরেছে। আর ইনজুরিতে পড়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এসেই তিনি আর্জেন্টিনার শিরোপা কামনা করলেন। বলেন, ‘জার্মানির জন্য আমার শুভ কামনা। তবে আমার দুই বন্ধু ও সতীর্থ লিওনেল মেসি ও জাভি মাসচেরানোর হাতে শিরোপা দেখতে চাই। মেসি ফুটবলের সবকিছুই নিজের করে নিয়েছে। এখন বিশ্বকাপ জেতার দাবিদার সে। ফাইনালে বন্ধু ও সতীর্থ হিসেবে আমি মেসিকেই সমর্থন করব।’ ব্রাজিলের নেইমার ও আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসিও এবং জাভি মাসচেরানো স্পেনের একই ক্লাব বার্সেলোনায় খেলেন ।
এদিন সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে গিয়ে চোখের কোনে বারবার ফোঁটা ফোঁটা জল দৃশ্যমান হয় নেইমারের। এ ছিল বেঁচে ফেরার অশ্রু। চোখ থেকে বার কয়েক পানি মুছতে দেখা যায় তাকে। অনেক কথা বলেছেন এদিন নেইমার। নিজের ইনজুরি, ঘাতক কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার হুয়ান জুনিগাকে ও সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ৭-১ গোলে হার নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তবে সবচেয়ে আবেগতাড়িত হয়েছেন নিজের ফিরে আসা নিয়ে। বলেন, ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ- তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন। আঘাতটা যদি আর মাত্র ইঞ্চিখানেক নিচে লাগতো তাহলে আজ আপনাদের সামনে হুইলচেয়ারে করে আসতে হতো। হয়তো আমি প্যারালাইজড হয়ে যেতাম। আর হয়তো ফুটবল খেলা হতো না।’ এ সময় সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে সঙ্গ দিতে না পারা নেইমারের চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসে অশ্রুতে। আঙুল দিয়ে চোখ মোছেন বারবার। নেইমারকে আঘাতকারী কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার জুনিগাকে নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আঘাতের কয়েকদিন পর জুনিগা আমাকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছে। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু আমার মনে হয় না আঘাতটি সাধারণভাবেই ছিল। আমি বলছি না সে ইচ্ছাকৃত আমাকে আঘাত করেছিল। তবে সবাই জানে, এটা স্বাভাবিক ছিল না। সে আমার পেছনের দিক থেকে এসে হাঁটু দিয়ে আঘাত করে। আমি কিছুই দেখতে পাইনি।
নিজেকে বাঁচাতেও পারিনি।’ নিজের অনুপস্থিতিতে সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ৭-১ গোল হার নিয়ে নেইমার বলেন, ‘যা হয়েছে তা অপ্রত্যাশিত। ভাবতেই পারিনি কখনও এমন ফল হতে পারে। তারা ৬-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরও থেমে থাকেনি। আরও গোল দিতে চেষ্টা করেছে।’ তবে এই হারে নেইমার মোটেও লজ্জিত নয় বলে জানালেন তিনি। বলেন, ‘ব্রাজিলিয়ান হয়ে আমি মোটেও লজ্জিত নই। বিশ্বকাপের এবারের দলে থেকেও আমি লজ্জিত নই। বরং প্রতিটি টিমমেটের জন্য আমি গর্ব করি। তাদের তুলনা হয় না।’(মানবজমিন)