শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ড.ইউনূসসহ ১৩ নোবেল বিজয়ীর জাতিসংঘে চিঠি

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ড.ইউনূসসহ ১৩ নোবেল বিজয়ীর জাতিসংঘে চিঠি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
রোহিঙ্গাদের উপর চলমান নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে খোলা চিঠি দিয়েছে ড. ইউনূসসহ বিশ্বের খ্যাতনামা ২২ জন নাগরিক। এদের মধ্যে পাকিস্তানের মালালা ইউসূফজাই সহ ১৩ জনই বিভিন্ন সময়ে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে বৃহস্পতিবার  দেয়া ওই চিঠিতে মিয়ানমারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের মতো পাশবিক নির্যাতন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

জাতিসংঘের মহাসচিবকে জরুরি ভিত্তিতে মিয়ানমার পরিদর্শনের আহ্বান জানান তারা। এছাড়াও বর্তমানে দেশটিতে ক্ষমতায় থাকা শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী অংসান সুচির কড়া সমালোচনা করা হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মিয়ানমারের ঘটনা জাতিগত এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। গত দুই মাসে দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশে যে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে, তাতে শত শত রোহিঙ্গা নাগরিক হত্যার শিকার হচ্ছে। ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে এবং নির্বিচারে শিশুদেরও হত্যা করা হচ্ছে।

আরো ভয়ংকর ব্যাপার, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে সেখানে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে, যার ফলে আগে থেকেই চরম দরিদ্র এই এলাকাটিতে মানবিক সংকট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, হাজার হাজার মানুষ নিকটবর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছে। যেখান থেকে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ঘটনাটিকে গণহত্যা বলে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নিকট অতীতে রুয়ান্ডা, দারফুর, বসনিয়া ও কসোভোয় সংগঠিত গণহত্যাগুলোর সব বৈশিষ্ট্য এখানে দৃশ্যমান। জাতিসংঘ রিফিউজি হাইকমিশনের বাংলাদেশ কার্যালয় প্রধান জন ম্যাককিসিক মিয়ানমার সরকারকে জাতিগত নিধন পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লী রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিযোগ করেছেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর একটি। দশকের পর দশক যারা পরিকল্পিত অমানবিক আচরণের শিকার। ১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাদের রাষ্ট্রহীন করে ফেলা হয়। তাদের চলাচল, বিবাহ, শিক্ষা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ২০১২ সালে নাটকীয়ভাবে দুটি ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনায় তাদের দুর্দশা চরম আকার ধারণ করে। এতে লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়। পাশাপাশি মুসলিম ও বৌদ্ধ রাখাইনদের বর্ণবৈষম্যের ভিত্তিতে আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর থেকে তারা চরম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন পার করছে।

সর্বশেষ সংকটটির সৃষ্টি হয় ৯ অক্টোবর। মিয়ানমার বর্ডার পুলিশের উপর আক্রমণের একটি ঘটনায় পুলিশের ৯ জন সদস্য নিহত হন। এই আক্রমণ কারা, কীভাবে ও কেন করলো সে সত্য এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। তবে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপকে এজন্য দায়ী করছে। এই অভিযোগ সত্য হলেও, এতে সামরিক বাহিনীর প্রতিক্রিয়া একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তারা বলেন, শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুচির কাছে বারবার আবেদনের পরও তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করতে কোনো উদ্যোগ নেননি। এটি চরম হতাশজনক।

বিশিষ্ট নাগরিকরা আরও বলেন, মিয়ানমার সরকারকে মানবিক সহায়তার ওপর সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে জাতিসংঘের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সাংবাদিক ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদেরও সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া উচিত। এছাড়াও প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে একটি নিরপক্ষে, আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরি এজেন্ডা হিসেবে সংকটটিকে উপস্থাপনের জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে বিশেষভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশিষ্ট এই নাগরিকদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে। কারণ রুয়ান্ডার পর বিশ্ব নেতারা বলেছিলেন, আর কখনো নয়। এখনই ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে মানুষ গুলি খেয়ে না মরলেও অনাহারে মারা যাবে। এতে বিশ্ব সম্প্রদায় মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের নিরব দর্শক হয়ে থাকবে।

ইউনূস ছাড়াও যারা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, এরা হলেন- শান্তিতে নোবেল জয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, বেটি উইলিয়াম্স, জোডি উইলিয়াম্স, তাওয়াক্কল কারমান, মালালা ইউসুফজাই, অসকার অ্যারিয়াস, মেইরিড মাগুইর, হোসে রামোস-হরতা, শিরিন এবাদী, লেইমাহ বোয়ি, স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস, চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল জয়ী এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন এবং স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস।

এছাড়াও ইতালির সাবেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী  রোমানো প্রদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিনো, এসডিজি সমর্থক রিচার্ড কার্টিস, লিবীয় নারী অধিকার প্রবক্তা আলা মুরাবিত, দি হাফিংটন পোস্টের সম্পাদক অ্যারিয়ানা হাফিংটন, ব্যবসায়ী নেতা পল পোলম্যান, স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, জোকেন জাইট্জ এবং মানবাধিকার কর্মী কেরী কেনেডী চিঠিতে স্বাক্ষর করেন

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়ে বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মো. ইউনূসহ ১৩ জন নোবেল বিজয়ী এবং বিশ্বের কয়েকজন নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিত্ব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা ধর্ষণ নির্যাতন বন্ধের কোন ভূমিকা না রাখায় নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির সমালোচনাও করা হয়েছে।