শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > লাইসেন্স বিক্রি করতে পারবেন না উদ্যোক্তারা

লাইসেন্স বিক্রি করতে পারবেন না উদ্যোক্তারা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন অনুমোদন পাওয়া বীমা কোম্পানির উদ্যোক্তারা লাইসেন্স বিক্রি করতে পারবেন না। কোম্পানি গঠনের তিন বছরের মধ্যে কোনো পরিচালককেও পরিবর্তন করা যাবে না। এজন্য নিবন্ধ স্মারক (মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস) ও সমঝোতা স্মারক (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) চেয়ে প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপ (আইডিআরএ)।

বিষয়টি স্বীকার করে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বলেন, ‘আমরা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার আগে কোম্পানিগুলোর কাগজপত্র আরো একবার যাচাই-বাছাই করতে চাই। এজন্য কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস ও আন্ডারস্ট্যান্ডিং চেয়েছি।’

আইডিআরএর এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বীমা উদ্যোক্তারা। বীমামালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা ভালো একটি উদ্যোগ। লাইসেন্স পাওয়ার পর অনেকেই তা বিক্রি করে দেন। আইডিআরএর এ সিদ্ধান্তের কারণে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা বন্ধ হবে। আমরা চাই, নিয়মটি স্থায়ী হোক।’

৪ জুলাই ১১টি নতুন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেয় সরকার। এর মধ্যে নয়টি জীবন বীমা ও দুটি সাধারণ বীমা কোম্পানি। নতুন বীমা কোম্পানির বেশির ভাগের অনুমোদনই হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়।

জানা গেছে, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অন্যতম উদ্যোক্তা রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। নতুন অনুমোদন পাওয়া এ কোম্পানিতে মালিকানা রয়েছে রূপালী ইন্স্যুরেন্সেরও।

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্য আবদুস শহীদ। ইউনিক হোটেলের প্রতিনিধি হিসেবে বীমা কোম্পানিটিতে আরো আছেন ব্যবসায়ী নূর আলী।

আওয়ামী লীগের সংরতি আসনের সংসদ সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলী পেয়েছেন জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অনুমোদন।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম নাসির উদ্দিন নতুন অনুমোদন পাওয়া মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অন্যতম উদ্যোক্তা। গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তারা হচ্ছে ব্র্যাক ফাউন্ডেশন, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন, স্কয়ার গ্রুপ ও এপেক্স গ্রুপ। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও স্যামুয়েল এস চৌধুরী।

বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক। মোশাররফ হোসেন নামে একজন হিসাববিজ্ঞানী আছেন এ কোম্পানির পরিচালক হিসেবে। প্রটেক্টিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অন্যতম উদ্যোক্তা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রামভিত্তিক ক্রিস্টাল গ্রুপের মালিক ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহীমের ভাই রাশেদ মুরাদ ইব্রাহীম ও ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত।

জাপানি কোম্পানি তাইও ও স্থানীয় সামিট গ্রুপকে যৌথভাবে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে তাইও-সামিট ইন্স্যুরেন্স নামে। সামিট গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান ও এশিয়ান ফার্নিচারের মালিকানা রয়েছে এতে। ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদের ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে তাইও-সামিট লাইফ ইন্স্যুরেন্সে।

খাতটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর করতেই এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মামুন রশীদ বলেন, ‘চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে আইডিআরএ পুনরায় কাগজপত্র যাচাই-বছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা চিঠি পেয়েছি। এতে নতুন অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলো তাদের লাইসেন্স বিক্রি করতে পারবে না। একই সঙ্গে তিন বছরের মধ্যে কোম্পানির পরিচালকও পরিবর্তন করা যাবে না।’

এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে কানাডা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আহাদকে। এতে পরিচালক হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা আজাদ চৌধুরী ও গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজুল বারী চৌধুরী।

নতুন অনুমোদন পাওয়া দুটি সাধারণ বীমা কোম্পানির মধ্যে একটিতে মালিকানা রয়েছে শিকদার গ্রুপের। মমতাজুল হক শিকদার ও জয়নুল হক শিকদারের পাশাপাশি মিরপুরের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক ও মেজর জেনারেল (অব.) বিজয় কুমার সরকার এ কোম্পানির পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। অন্যটি হচ্ছে সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

দেশে বেসরকারি পর্যায়ে বর্তমানে ৪২টি সাধারণ বীমা কোম্পানি রয়েছে। জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে ১৭টি। মেটলাইফ এলিকো নামে রয়েছে একটি বিদেশী জীবন বীমা কোম্পানি। এর বাইরে সরকারি সংস্থা রয়েছে দুটি— সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন।