বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৭ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > খেলা > শুভ জন্মদিন উরুগুয়ের স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ

শুভ জন্মদিন উরুগুয়ের স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥
লুইস সুয়ারেজ, উরুগুয়ের একজন ফুটবলযোদ্ধা। সুইপার থেকে বিশ্ব্যখাত ফুটবলার। তার পুরো নাম লুইস আলবার্তো সুয়ারেজ ডিয়াজ।

দুবেলা ঠিক মত খেতে না পারা এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের বাৎসরিক আয় বর্তমানে ২৫ মিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে।

আজ তার শুভ জন্মদিন। ১৯৮৭ সালের ২৪ জানুয়ারি এই কৃতি ল্যাটিন ফুটবলার জন্মগ্রহণ করেন।

উরুগুয়েতে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘অন্যান্য দেশের আছে ইতিহাস, আমাদের আছে ফুটবল।’ সত্যি সেই ফুটবল একজন সুইপারকে বিশ্বে এমন পরিচিতি দিয়েছে।

সুয়ারেজ লা লিগার ক্লাব ‘বার্সেলোনা’ হয়ে ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেন। ২০০৫ সালে উরুগুয়ের ন্যাসিওনাল এর হয়ে পেশাদার জীবন শুরু করেন।

সাত সন্তান নিয়ে কুলির কাজ করে বাবা রোডলফো এর চালানো সংসারে সুয়ারেজ অভাবকে সঙ্গী করে বড় হয়েছেন। মা সান্দ্রো অন্যের বাড়িতে কাজ করে কিছু রোজগার করতেন।

স্মৃতিচারণে সুয়ারেজ অকপটেই বলেন, ‘আমরা ছিলাম সমাজের নিম্ন শ্রেণির। পরার মতো জুতা ছিল না আমার। আমার পরিবার বড় হওয়ায় এমনটা হয়েছিল। বা-বাবা আমাদের জন্য যতোটা পেরেছেন করেছেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী কখনও কিছু পেতাম না। তবুও আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

মায়ের পরামর্শে সুয়ারেজ তার ফুটবল খেলা শুরু করেন। ১৪ বছর বয়সে পাড়ি জমান ন্যাসিওনালে। উরুগুইয়ান সেই ক্লাবের যুবদলে খেলেন টানা চার বছর।

২০০৫ সালে ১৮ বছরের তরুণ সুয়ারেজের অভিষেক হয় পেশাদার ফুটবলে। কোপা লিবার্তাদোরেসে জুনিয়র ডি বার্নাকুইলার বিপক্ষে খেলা সেই ম্যাচের পর আরও ২৬ ম্যাচ খেলেন সুয়ারেজ। করেন ১০ গোল।

সেই মৌসুমে ডিফেন্সরের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক গোল করেন সুয়ারেজ। সেই ম্যাচে উপস্থিত ছিলেন ডাচ ফুটবল ক্লাব গ্রনেঙ্গনের এক স্কাউট। তিনি সুয়ারেজের করা গোলটি দেখে অভিভূত হন।

সুয়ারেজের ভাগ্যে সোনার কাঠির পরশ নিয়ে আসে সেই গোলটি। গ্রনেঙ্গন তাকে ইউরোপ নিয়ে আসেন।

নেদারল্যান্ডে ১৯ বছর বয়সী সুয়ারেজের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছিল। চ্যালেঞ্জ উতড়ে নিজের জাত চেনান সুয়ারেজ। ২৯ ম্যাচে করেন ১০ গোল।

সুয়ারেজের সেই পারফরম্যান্স বিখ্যাত ডাচ ক্লাব ‘আয়াক্স’ এর নজর কাড়ে। সাড়ে সাত মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সুয়ারেজকে দলে টানে ডাচ ক্লাবটি। এ যেন রূপকথাকেও হার মানায়।

এরপর কেবল লুইস সুয়ারেজের এগিয়ে যাওয়ার গল্প। আয়াক্সের হয়ে পাঁচ মৌসুমে ১১০ ম্যাচ খেলে গোল করেন ৮১টি। ২০০৮-০৯ মৌসুমে তার হাতে ওঠে আয়াক্সের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার। পেয়ে যান অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটাও।

আয়াক্সের সেই বিধ্বংসী ফর্ম নিয়ে নজরে আসেন ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলের। সহজাত গোল স্কোরিংয়ের ক্ষমতা দিয়ে জায়গা করে নেন ইংলিশ ফুটবলের অন্যতম সফল ক্লাবে।

২৬.৫ মিলিয়নে আয়াক্স থেকে পাড়ি জমান অলরেডদের শিবিরে। লিভারপুলের হয়ে চার মৌসুমে খেলেন ১১০ ম্যাচ।

২০১৩-১৪ মৌসুমে হয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়। অ্যানফিল্ড মাতানো সেই সুয়ারেজ ২০১৪ সালে যোগ দেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব বার্সেলোনায়।

সেখানে গিয়ে মেসি ও নেইমারের সঙ্গে গড়ে তোলেন বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর আক্রমণত্রয়ী ‘এমএসএন’।

সুয়ারেজ কাতালান ক্লাবটির হয়ে ১০০ ম্যাচ খেলে করেছেন ৮৭ গোল। ক্লাবের হয়ে জিতেছেন লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোপা দেল’রে মতো আরও অনেক শিরোপা।

জাতীয় দলের জার্সিতে উজ্জ্বল সুয়ারেজ। ৯৩ ম্যাচ খেলে ৪৭ গোল করে হয়েছেন দেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০১১ সালে দলকে জেতান কোপা আমেরিকার শিরোপা।

২০১৫-১৬ মৌসুমে লা লিগায় ৪০ গোল করে সময়ের সেরা দুই ফুটবলার মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলে জিতেছেন পিচিচি ট্রফি।

২০০৯ সালের পর সুয়ারেজই একমাত্র ফুটবলার যিনি মেসি-রোনালদোকে পেছনে ফেলে পিচিচি ট্রফি ও ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জিতেছেন।

সুয়ারেজের পথ ফুটবলের মতই দ্রুতগতিতে চলছে। ফুটবল তাকে সব দিয়েছে বলে সুয়ারজে বলেন, ‘একটা সময় আমি দুই বেলা খেতে পেতাম না। তখন হাল ছাড়িনি, এখনও হাল ছাড়ি না। এখনও ভালবেসে ফুটবল খেলে যাই।’

অনেক বির্তক শেষে ফুটবল বিশ্ব একসুরেই বলে, সুয়ারেজ; ভিন্ন এক ফুটবলার! অগণিত মানুষের এক নায়ক।