শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > আন্তর্জাতিক > শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় অমর্ত্য সেন

শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় অমর্ত্য সেন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়ে বাঙালিদের মন জয় করেছিলেন অমর্ত্য সেন। দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ নিয়ে গবেষণার জন্য পৃথিবীজুড়েই তিনি শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন।

বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রোতাদের ভোটে শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় ১৪তম স্থানে আসেন এ অর্থনীতিবিদ। খবর বিবিসির।

২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা একটি শ্রোতা জরিপের আয়োজন করে। বিষয় ছিল– সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে?

৩০ দিনের ওপর চালানো ওই জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০ জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ২০০৪-এর ২৬ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত।

অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেন নিজেকে ঢাকা ও কলকাতা দুই শহরেরই সন্তান হিসেবে গণ্য করেন।

অমর্ত্য সেন নোবেল ওয়েবসাইটে তার আত্মজীবনী শুরু করেছিলেন এই বলে যে, আমার জন্ম একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এবং সারাজীবনই আমি ঘুরে বেড়িয়েছি এক ক্যাম্পাস থেকে আরেক ক্যাম্পাসে।

শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জীবন। কর্মসূত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের সঙ্গে তার জীবন জড়িয়ে গেলেও তিনি বলেছেন শিকড়ের টান তিনি সবসময়ই অনুভব করেছেন।

নোবেল ওয়েবসাইটে অমর্ত্য সেন আরও লিখেছেন, আমার পৈতৃক বাড়ি হচ্ছে পুরান ঢাকার ওয়ারি এলাকায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছেই।

আমার বাবা আশুতোষ সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিস্ট্রি পড়াতেন। আমার জন্ম অবশ্য শান্তিনিকেতনে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে। আমার মাতামহ সেখানে অধ্যাপক ছিলেন।

অমর্ত্য সেন বলেন, শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের স্কুলে পড়ার সময়েই প্রধানত শিক্ষার ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রথম একটা রূপ লাভ করে।

শান্তিনিকেতনে মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেনের বাড়িতে তার জন্ম ১৯৩৩ সালের ৩ নভেম্বর।

শান্তিনিকেতনের আচার্য অধ্যাপক ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের একজন পণ্ডিত এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহযোগী।

পৌত্র অমর্ত্য সেনের প্রথম স্কুল ছিল ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিস। তার পর লেখাপড়া শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে।

অমর্ত্য সেন তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, শান্তিনিকেতনে প্রধানত রবীন্দ্রনাথের স্কুলেই শিক্ষার ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি প্রথম একটা রূপ লাভ করে। সেখানে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়ত, শিক্ষার পরিবেশ ছিল অনেক উদার।

প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি করা বা কে কাকে টপকে যাবে সে ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয়ার বদলে তাদের মনে কৌতূহল জাগিয়ে তোলাটাই ছিল সেখানে শিক্ষাদানের মূল আদর্শ। পরীক্ষায় ভালো করা বা ভালো নম্বর পাওয়ার ব্যাপারে কখনই উৎসাহ দেয়া হতো না।

১৯৯৮ সালে নোবেল পাওয়ার সময় প্রফেসর অমর্ত্য সেন ইংল্যান্ডে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের ‘মাস্টার’ ছিলেন। অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজের কোনো কলেজের তিনিই প্রথম এশীয় প্রধান।

বাবা আশুতোষ সেন ১৯৪৫ সালে পরিবার নিয়ে পাকাপাকিভাবে চলে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে।

শান্তিনিকেতনে লেখাপড়া শেষ করে অমর্ত্য সেন পড়তে যান কলকাতায়। ছেলে বয়স থেকেই অমর্ত্য সেনের কলকাতা যাওয়ার ব্যাপারে খুব উৎসাহ ছিল।

১৯৫১ সালে আইএসসি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে তিনি ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। তার পর অর্থনীতি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করেন ইংল্যান্ডে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে।

মেধা ও নিজস্বতায় অমর্ত্য সেন কলকাতার মন জয় করেছিলেন সেই ছাত্রাবস্থাতেই।

প্রেসিডেন্সি কলেজে তার সহপাঠী ঐতিহাসিক বরুণ দে বিবিসি বাংলাকে বলেন, অমর্ত্য সেন একজন অন্য ধরনের মানুষ ছিলেন।

কলেজে দেখতে লম্বা, সুন্দর চেহারা, মানুষকে মুগ্ধ করার মতো কথাবার্তা বলার ধরন ছিল তার। অমর্ত্য যেখানে সবাইকে জয় করলেন, সেটি হচ্ছে সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার তার বিশেষ ক্ষমতা। মেয়েরা তো একেবারে কুপোকাত ছিল তাকে দেখে।

বিতর্কে অমর্ত্য সেনের তুখোড় দক্ষতা ছিল। এমনকী তার প্রথম স্ত্রী নবনীতা দেবসেন বলেন, তাদের দুজনের প্রথম আলাপও ছিল বিতর্কের সূত্রে।

ছাত্র বয়সে বিখ্যাত ডিবেটার ছিলেন। তার পর ১৯৫৩ সালে তিনি চলে যান ইংল্যান্ডে। আবার ১৯৫৬ সালে ফিরে এসে যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন, তখন তিনি যাদবপুর ডিবেটিং সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন মাস্টার। আমি ডিবেট করতাম। সেভাবেই আমাদের আলাপ।