শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > সংকটে উদীয়মান দেশগুলো

সংকটে উদীয়মান দেশগুলো

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ মার্কিন ডলারের বিপরীতে আবারো রেকর্ড দরপতন হয়েছে ভারতীয় রুপির। মঙ্গলবার পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে রুপি ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৬৪ দশমিক ১৩-এ নেমে এসেছে। এর আগে সোমবার রুপির দর কমে যায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ। দরপতনের এ ধারা শুধু ভারত নয়, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলসহ অন্যান্য উদীয়মান দেশেও রয়েছে। মুদ্রার দরপতনে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়ছে। ফলে এসব দেশ থেকে অনেকেই বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি শেষ পর্যন্ত ব্যালান্স অব পেমেন্টের সংকট সৃষ্টি করবে। খবর রয়টার্সের।

উদীয়মান দেশগুলোয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগকারীর বিভিন্ন সম্পদের বিক্রয় চাপ ক্রমেই বাড়ছে। স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার কমে যাওয়ায় ডলারে তাদের সম্পদ কমে যাচ্ছে।

প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রতি মাসে ৮৫ বিলিয়ন ডলারের সরকারি বন্ড কিনে আসছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। শ্রমবাজারের চিত্রে উন্নতি দেখা গেলে ধীরে ধীরে এ প্রণোদনা প্রত্যাহার করে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এতে ডলারের সরবরাহ কমে আসার আশঙ্কায় বিশ্বজুড়েই মুদ্রাটির চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে অন্যান্য মুদ্রার বিনিময় হার হ্রাসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছিল, আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই ছেঁটে ফেলা শুরু হবে এ প্রণোদনা। যখনই এ আশঙ্কা জোরদার হয়, তখনই ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। আবার মার্কিন নিয়ন্ত্রকদের বক্তব্য ও অন্য যেকোনো কারণে যদি মনে হয়, সহসাই ছোট করে আনা হবে না বন্ড ক্রয়ের এ কর্মসূচি, তখন ফের স্বাভাবিক হয়ে আসে এসব বিনিময় হার।

গত সোমবারের লেনদেনে চার বছরের মধ্য সর্বনিম্নে নেমে গেছে ইন্দোনিয়ার রুপাইয়াহর দর। প্রথম সাত মাসে ডলারের বিপরীতে ১৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে এর বিনিময় হার। একই দিনে লেনদেনে ডলারের বিপরীতে ১ শতাংশ দর হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার র্যান্ড। বছরের এ সময় পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে ১৭ শতাংশ দর হারিয়েছে মুদ্রাটি। রিয়ালের ক্ষেত্রে এ হার ২০ শতাংশেরও বেশি। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও রফতানির পরিমাণ সে অনুপাতে না বাড়ায় বিনিময় হার হ্রাসের চাপ আরো বেড়ে যাচ্ছে এসব দেশে। আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভায় মুদ্রার সরবরাহ আরো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

মুদ্রার ধারাবাহিক দরপতনে উদীয়মান দেশগুলোর সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

ভারতীয় রুপিও বছরের এ সময় পর্যন্ত ১৮ শতাংশের মতো দর হারিয়েছে। বিনিয়োগ বাড়ানো, চলতি হিসেবে ঘাটতি কমানো, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংস্কার এসব সরকারি প্রচেষ্টার খুব বেশি সুফল দেখা যাচ্ছে না বিনিয়োগকারীদের হিসাবনিকাশ।

ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুক্রবার জানিয়েছে, দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে তাদের চলতি হিসেবে ঘাটতি জিডিপির ৪ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে যা ছিল মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

উদীয়মান অর্থনীতির এসব দেশের মুদ্রার দরপতনের কারণে এখানকার স্থানীয় মুদ্রায় ইস্যু করা বিভিন্ন আর্থিক সম্পদ থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এসব দেশের চলতি হিসাবে ঘাটতি আরো বেড়ে একপর্যায়ে তা ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সংকটের সৃষ্টি করতে পারে। চলতি হিসাবে ঘাটতি মোকাবেলায় স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে থাকে দেশগুলো। ব্রাজিলের এ ঘাটতি বর্তমানে ৩ শতাংশ, ভারতের ৪ দশমিক ৮ আর দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

সোসিয়েতে জেনারেলের বিশ্লেষক সলোমন বলেন, ডলারের বহিঃপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি সৃষ্টি করছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। আঞ্চলিক অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেয়া এসব দেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনুসরণ করে আশপাশের ছোট ছোট উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোতেও এ প্রবণতা কম-বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

রুপির দরপতনে একটি বৈশ্বিক প্রভাবক ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন নিজস্ব অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রভাব রয়েছে। অন্যান্য উদীয়মান দেশগুলোর মতো ভারতের প্রবৃদ্ধিও বৈশ্বিক আর্থিক বিপর্যয় সমাপনের পরের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কমে গেছে। ব্রাজিল, ভারত, চীন এসব বিকাশমান দেশ তাদের গত দশকের উচ্চ প্রবৃদ্ধি এখন আর পাচ্ছে না। সরকারি অর্থব্যবস্থা যেমন শক্তিশালী হয়নি, তেমনি রফতানি কমে যাওয়া, অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি, ভোক্তাপর্যায়ে ঋণের মাত্রা বেড়ে যাওয়া— সবকিছু মিলিয়ে ব্যক্তি খাতেও আর্থিক ঝুঁকি বাড়ছে এসব দেশে। এসবের প্রভাব পড়ছে বিদেশী বিনিয়োগে। প্রত্যক্ষ এবং পোর্টফোলিও— দুই ক্ষেত্রেই।