শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > জাতীয় > সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে

সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা: আপিলে সমান সুযোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর সংশোধনী আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।

সোমবার সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া রায় নিয়ে করা আপিল মামলায় অ্যমিকাস কিউরি হিসেবে আদালতে দাখিল করা বক্তব্যে তিনি এ মতামত দেন।

প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ মামলাটির (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বনাম আব্দুল কাদের মোল্লা) আপিল শুনানি চলছে। প্রধান বিচারপতি ছাড়া বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

সোমবার সকালে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।

এর আগে সকালে অপর অ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আদালতে তার লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের অনুপস্থিতিতে তার বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড ওয়াহিদুল্লাহ।

গত ২০ জুন আপিলের শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর আপিল সংক্রান্ত বিধানের সংশোধনী বিষয়ে আদালতকে সহায়তা করতে সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত করেন আপিল বিভাগ। তাদের কাছে দু’টি বিষয়ের ওপর আইনগত ব্যাখ্যা জানতে চান আপিল বিভাগ। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল’ (প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন) এর আওতায় এই মামলা পড়বে কিনা এবং দ্বিতীয়টি হল আপিলের সমান সুযোগ রেখে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে এবং ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে তার যে ভুতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেখানো হয়েছে- সেটি কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কিনা।

অ্যামিকাস কিউরিদের মধ্যে প্রথম দিনে মতামত দিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম। অন্য ৫ অ্যামিকাস কিউরি হচ্ছেন টি এইচ খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।

লিখিত বক্তব্যে রফিক-উল হক বলেন, আপিলে সমান সুযোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর সংশোধনী জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল’ (প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন) এর গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই এটা প্রযোজ্য হবে না।

এদিকে আপিলের শুনানি অব্যাহত রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষ হয়ে এখন চলছে আসামিপক্ষের করা আপিলের শুনানি।

গত ২০ জুন শুনানির ৩২তম কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে ১৪তম দিনের মতো শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ সংশোধনী বিষয়ে শুনানি এবং আসামিপক্ষের যুক্তির জবাব দেন।

উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয় আপিল শুনানি। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৭ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়। এর মধ্যে প্রথম ৪ কার্যদিবসে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া রায় পড়া শেষ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। আর শেষ ৩ কার্যদিবসে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণ তুলে ধরে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তার সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

আর ২৯ এপ্রিল থেকে আসামিপক্ষে শুনানি শুরু করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। ২২ মে পর্যন্ত ৫ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির জবাব দেওয়া শেষ করেন তিনি। এর পর ২৬ মে থেকে তাদের আপিলের বিষয়ে শুনানি শুরু করে ১৪ কার্যদিবসে শেষ করেন রাজ্জাক। সব মিলিয়ে গত ৬ জুন পর্যন্ত কাদের মোল্লার পক্ষে ১৯ কার্যদিবসে শুনানি শেষ করেন তিনি।

আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির জবাবে প্রয়োজন হলে ফের শুনানি করবেন তারা।

আসামিপক্ষের পরে গত ৬ জুন থেকে আসামিপক্ষের আপিলের বিষয়ে ফের শুনানি করছেন মাহবুবে আলম।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনাল তাকে ৫টি অপরাধে দায়ী করে দু’টিতে যাবজ্জীবন ও তিনটিতে ১৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন।

সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দণ্ডাদেশ না দেওয়ায় এবং একটি অপরাধের অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়ায় সাজা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ৩ মার্চ আপিল করেন প্রসিকিউশন। আপিলে ওই ৫টি অভিযোগে দেওয়া সাজা অপর্যাপ্ত দাবি করে এবং খালাসের আদেশ বাতিল চেয়ে সর্বোচ্চ দণ্ড ফাঁসির আরজি জানানো হয়। আর ৪ মার্চ প্রমাণিত সকল অভিযোগ থেকে খালাসের আবেদন জানিয়ে আপিল করেন আব্দুল কাদের মোল্লা।

গত ১০ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ সদস্যের বেঞ্চ শুনানির জন্য ৩১ মার্চ রোববার দিন ধার্য করেন। তবে ওই দিন আপিল বিভাগের নতুন বিচারপতিদের শপথ গ্রহণ ও সংবর্ধনার জন্য এ মামলার শুনানি শুরু হয়েছে গত ১ এপ্রিল। একজন বিচারপতি ইতিমধ্যে অবসরে চলে যাওয়ায় বর্তমানে শুনানি নিচ্ছেন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রমাণিত প্রথম অভিযোগ হচ্ছে, একাত্তরের ৫ এপ্রিল মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন কাদের মোল্লা।

দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে, একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে হত্যা করেন।

প্রমাণিত তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৯ মার্চ বিকেলে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে আরামবাগ থেকে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা জল্লাদখানা পাম্প হাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেন।

পঞ্চম অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনা ও অবাঙালি রাজাকারদের সঙ্গে কাদের মোল্লা মিরপুরের আলোকদী (আলুব্দী) গ্রামে হামলা চালান। ওই ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি শহীদ হন।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা, তার সহযোগী এবং পাকিস্তানি সেনারা মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যান। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণের শিকার হন শহীদ হযরত আলী লস্করের এক মেয়ে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর বিধান অনুসারে রায় ঘোষণার এক মাস অর্থাৎ ৩০ দিনের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিধান রয়েছে। অন্যদিকে আইন অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশনা রয়েছে।