শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > আন্তর্জাতিক > সবার চোখে ধুলো দিয়েই পাকিস্তানে ছিলেন লাদেন

সবার চোখে ধুলো দিয়েই পাকিস্তানে ছিলেন লাদেন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক: আল-কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেন সবার চোখে ধুলো দিয়েই প্রায় এক দশক পাকিস্তানে ছিলেন। এমনকি নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে তাকে একবার পুলিশও ধরেছিল। কিন্তু পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর “সম্মিলিত অদতা ও অবহেলার” কারণে লাদেন নিরাপদে সেখানে থাকতে পেরেছেন বলে ফাঁস হয়ে যাওয়া এক সরকারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের ফাঁস হয়ে যাওয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনটি সোমবার প্রকাশ করেছে আল জাজিরা। ওই প্রতিবেদনে লাদেন সম্পর্কে অনেক চমকপ্রদ তথ্য দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে উপর থেকে লাদেনকে যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারেন সেজন্য তিনি হ্যাট পরে থাকতেন। ২০১১ সালের ২রা মে পাকিস্তানের সামরিক শহর অ্যাবোটাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন সেনা অভিযানে লাদেন নিহত হবার পর একজন বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন গঠন করেছিলেন। চার সদস্যের ওই কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি জাভেদ ইকবাল। কমিশনের অন্য সদস্যদের মধ্যে এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, এক কূটনীতিক ও একজন জেনারেল ছিলেন। ঘটনা তদন্তে কমিশন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ২০১ জনের সাাৎকার গ্রহণ করে ৩৩৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করে। ছয় মাস আগে অনুসন্ধান শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। কিন্তু পাকিস্তানি কর্তৃপ সেটা প্রকাশ না করে চাপা দিয়ে রাখে। সেই প্রতিবেদনের ফাঁস হওয়া একটি কপি আল জাজিরার হাতে পৌঁছলে প্রায় পুরো প্রতিবেদনটি সোমবার রাতেই তারা সেটি প্রকাশ করে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানি কর্তৃপ আল জাজিরার ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাদেন আফগানিস্তানের তোরা বোরা পর্বতে মার্কিন হামলা থেকে রা পাওয়ার পর পালিয়ে ২০০২ সালের মাঝামাঝি পাকিস্তানে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে মার্কিন অভিযানে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন বিঘ্ন ছাড়াই লাদেন পাকিস্তানে আত্মগোপন করে ছিলেন। দুর্নীতির কারণে নয়, অদতার কারণেই লাদেনকে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী ধরতে পারেনি বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সা্েযর বিষয়ে কিছু সন্দেহও প্রকাশ করা হয়, কারণ অনেক মূল প্রশ্নের সুরাহা এতে হয়নি। কিছু নিরাপত্তা কর্মকর্তা গোপনে বিল লাদেনকে সহায়তা করেছেন এমন সম্ভাবনাও বাতিল করেনি কমিশন। প্রতিবেদনে লাদেনের পলাতক জীবনের প্রকাশিত বিস্তারিত বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে। ২০০২ থেকে ২০১১, এই নয় বছরে লাদেন পাকিস্তানে ছয়বার ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। তিনি পাকিস্তানের ঠিক কোন কোন স্থানে ছিলেন সে সম্পর্কে প্রতিবেদনে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। তবে দণি ওয়াজিরস্থান, বাজাউর, পেশওয়ার, সোয়াট এবং হরিপুরে ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হরিপুর থেকে তিনি তার বিশাল পরিবার নিয়ে ২০০৫ সালের আগস্টে অ্যাবোটাবাদে চলে যান। প্রতিবেদণের স্েয লাদেনের স্ত্রীরা বলেছেন তিনি ব্যক্তিগত ভাবে বেশি জিনিসপত্র ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন না। অ্যাবাটাবাদে আসার আগে তার কেবল গরমে পরার জন্য তিনজোড়া সালোয়ার কামিজ এবং শীতে পরার জন্য তিন জোড়া সালয়োর কামিজ ছিল। তিনি অসুস্থ হলে নিজেই আরবের প্রচলিত ওষুধের মাধ্যমে নিজের চিকিৎসা করতেন। আর খুব বেশি কান্ত বোধ করলে চকলেট আর আপেল খেতেন। পাকিস্তানি বা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিতে লাদেন এক সময় দাড়ি কামিয়ে ‘কাউবয় হ্যাট’ পরেছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। একবার, বেশি জোরে চলায় লাদেনকে বহনকারী গাড়ি থামিয়েছিল পুলিশ, কিন্তু চিনতে না পারায় লাদেনকে চলে যেতে দেন সেখানে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র তৎপরতা বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের তিরস্কার করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতাকে অবৈধ ও অনৈতিক বলে চিহ্নিত করা হয়। সিআইএ পাকিস্তানের প্রধান এনজিওগুলোকে লাদেনের ওপর চালানো গোয়েন্দা তৎপরতা আড়াল করতে ব্যবহার করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এসব এনজিওতে “ভাড়াটে গুণ্ডা”দের নিয়োজিত করে মিত্র পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্ত প্রতারণা করে বলে অভিযোগ করা হয়। “যুক্তরাষ্ট্র ভাড়াটে গুণ্ডার মতোই আচরণ করেছে,” প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। লাদেন অভিযানে পাকিস্তানে প্রবেশ করা যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টারগুলো লাদেনের লাশ নিয়ে পাকিস্তান ছাড়ার ২৪ মিনিট পর পাকিস্তানের জেট বিমানগুলো সেদিকে ধাওয়া করে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। পাকিস্তানের আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের এই গোপন প্রবেশ চিহ্নিত করতে না পারায় সমারিক কর্মকর্তাদের দোষারোপ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের আগে আইএসআইয়ে’র গোয়েন্দারা লাদেনের অবস্থান বের করতে না পারার জন্য সংস্থাটিকে ‘ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করে কমিশন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা কমিশনের তদন্তে কোন ধরনের সহযোগিতা করেননি। ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনটি সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করা হয়েছে।