মঙ্গলবার , ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > সরকারের শেষ কয়েক মাসে সহিংসতা বাড়ার আশংকা

সরকারের শেষ কয়েক মাসে সহিংসতা বাড়ার আশংকা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। সরকারের মেয়াদের শেষ কয়েক মাসে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা করছেন অপরাধ তদন্ত বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বাসা-বাড়িতে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটনো হচ্ছে। কয়েক মাস পর দেশে আসছে নির্বাচনী আবহ। তদুপরি প্রশাসন একমুখী থাকায় অপরাধের ঘটনা আরো বেড়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের শেষ সময় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডার নিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। টেন্ডারবাজি নিয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে এক যুবলীগ নেতার গুলিতে নিহত হয়েছেন অপর যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিলকী।
রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় ও জেলা শহরে প্রতিদিনই আইন-শৃংখলা এবং অপরাধ পরিস্থিতির অবনতির খবর আসছে। উপজেলা এমনকি গ্রামগঞ্জেও প্রতিনিয়ত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। তুচ্ছ ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রলেপ দিয়ে তুলকালাম পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকারের শেষ সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও ক্ষমতাসীন দলের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। আর এ ধরনের অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ঘাপটি মেরে থাকা চিহ্নিত স্থানীয় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চলছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি।
এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা দেখা দিয়েছে সর্বত্র। পুলিশের সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, জুলাই মাসে সারাদেশে প্রায় তিনশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ চিত্র চলতি বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সরকারের শেষ সময় সহিংসতা বাড়তে পারে এমন আশংকা মাথায় রেখেই আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছে। শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিয়মিত সবকিছু মনিটরিং করা হচ্ছে।
পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ‘সারাদেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইতিমধ্যে যে দু’-চারটি ঘটনা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’ সরকারের শেষ সময় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘পুলিশের নিকট শেষ বা শুরু বলে কোন কথা নেই। যে কোন ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সক্ষমতা রয়েছে।’
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার মধ্যে আছে, গত ১০ আগস্ট পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নে রাস্তা সংস্কার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়। বাগেরহাট উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের মুক্ষাইটে গত ১১ আগস্ট আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়। এসময় আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর ও বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ ১৫টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মুক্ষাইট বাজারে গোটাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি অফিস উদ্বোধন করার কথা ছিল। একই স্থানে গোটাপাড়া ইউনিয়নে কর্মী সমাবেশ ডেকে বসে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দুই গ্রুপের কর্মীদের মধ্য কথা কাটাকাটি সংঘর্ষে রূপ নেয়। এলাকাবাসী বলছে, ঘটনার পর থেকে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় ফের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের আশংকায় রয়েছে স্থানীয়রা।
বরিশালের স্বরূপকাঠি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলনায়তনে গত ২৭ জুলাই ইফতার মাহফিলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংর্ঘষে ১০ জন আহত হয়। আধিপত্য ও চাঁদাবাজির জের ধরে গত ৩১ জুলাই মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার খামারপাড়া-টুপিপাড়া গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে আহত হয় ১০ জন। পাশাপাশি ১০টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এ নিয়ে ঐ এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
একই কারণে গত ৭ আগস্ট মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ঘরবাড়ি লুটপাট ছাড়াও উভয় পক্ষের ৫০ জন আহত হয়। গত সোমবার লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সংর্ঘষে আহত হয় ১৫ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জামায়াত-শিবিরের ঝটিকা মিছিলে আওয়ামী লীগ বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
গত ২৪ জুন চট্টগ্রামে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রায় দেড় কোটি টাকার কাজের টেন্ডার নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলি বিনিময়ের ঘটনায় একজন নিহত ও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।
গত ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে যুবলীগ নেতার গুলিতে নিহত হন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিলকী। একই দিন লালবাগে ছাত্রলীগ নেতার বাড়ির নির্মাণাধীন ভবনের কেয়ারটেকার ইকবাল হাওলাদার ও গৃহবধূ মাহমুদাকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। হাজারীবাগে নিজ বাসার সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন। গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় রামপুরা টিভি রোডে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতা উজ্জ্বল হোসেনকে।
গত ১৭ জুলাই মিরপুরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ওয়ার্ড যুবলীগ কর্মী জহিরুল ইসলাম বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১৫ জুলাই রাজধানীর জুড়াইনে ছুরিকাঘাতে নিহত হন বাবু নামে এক যুবক। গত ৯ জুলাই বাড্ডায় সোহাগ, শরিফুল ও সিদ্দিক নামের তিনজন পৃথক ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন। ঈদের আগে ইফতারির সময় রাজধানীর ওয়ারি এলাকায় ব্যবসায়ীর বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে।