শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > সাংবাদিক গৌতম হত্যার দায়ে ৯ জনের যাবজ্জীবন

সাংবাদিক গৌতম হত্যার দায়ে ৯ জনের যাবজ্জীবন

শেয়ার করুন

ঢাকা: হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৮ বছর পর দৈনিক সমকালের সাংবাদিক গৌতম দাস হত্যা মামলার রায়ে ৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন- আসিফ ইমরান, আসিফ ইমতিয়াজ বুলু, কাজী মুরাদ, কামরুল ইসলাম আপন, আসাদ বিন কাদির, সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, তামজিদ হোসেন বাবু, রাজিব হাসান মিয়া ও আবু তাহের মো. মতুর্জা ওরফে এ্যাপোলো বিশ্বাস। তাদেরকে যাবজ্জীবনের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্য আসামি জাহিদ খান মারা যাওয়ায় তাকে মামলার দায় থেকে আগেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।

আসামিদের মধ্যে আবু তাহের মো. মতুর্জা ওরফে এ্যাপোলো বিশ্বাস পলাতক। তাকে যেদিন গ্রেফতার করা হবে কিংবা তিনি যেদিন আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন সেদিন থেকে তার দণ্ড কার্যকর হবে। বাকি ৮ জনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের প্রত্যেককে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল হক মঞ্জু, মামলার বাদী দৈনিক সমকাল পত্রিকার ফরিদপুরের প্রতিবেদক মো. হাসানুজ্জামান ও নিহত সাংবাদিক গৌতমের কাকাতো ভাই বিশ্বরূপ দাস আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের প্রতিক্রিয়ার গোলাম সারওয়ার বলেন, দেরিতে হলেও সাংবাদিক গৌতম হত্যার বিচার হয়েছে। এটি একটি মাইলফলক।

তবে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও তাদের ফাঁসি না দেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

মামলার বাদী মো. হাসানুজ্জামানও অনুরুপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

গৌতমের কাকাতো ভাই বিশ্বরূপ দাস তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আদালত যেটা ভালো মনে করেছেন সেভাবেই রায় প্রদান করেছেন। তবে যারা এ রায় শুনলে খুশি হতেন তার বাবা-মা, তারা কেউই এখন বেঁচে নাই।

এর আগে গত ১৯ মে মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত ২৭ জুন বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। যুক্তিতর্ক শেষে মামলার জামিনে থাকা ৮ আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর দৈনিক সমকালের নিজস্ব প্রতিবেদক ও ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান গৌতম দাসকে ফরিদপুর কার্যালয়ে খুন করে সন্ত্রাসীরা। ওই দিনই সমকালের জেলা প্রতিনিধি (বর্তমানে নিজস্ব প্রতিবেদক) হাসানউজ্জামান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ফরিদপুর শহরের মুজিব সড়কের সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণ কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ পরিবেশন করায় গৌতম দাসের ওপর ক্ষুব্ধ হয় তত্কালীন ক্ষমতাসীন সরকারের মদদপুষ্ট ঠিকাদার গোষ্ঠী ও তাদের সহযোগী সন্ত্রাসী চক্র। এ ঘটনার জের ধরেই ফরিদপুর ব্যুরো কার্যালয়ে গৌতমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

২০০৬ সালের ২০ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার তত্কালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম নবী ১০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন। ওই বছরের ১৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

পরে মামলাটি ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ স্থানান্তর করা হয়।

মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন আসিফ ইমরান, আসিফ ইমতিয়াজ বুলু, কাজী মুরাদ, জাহিদ খান, কামরুল ইসলাম আপন, আসাদ বিন কাদির, সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, তামজিদ হোসেন বাবু, রাজিব হাসান মিয়া ও আবু তাহের মো. মতুর্জা ওরফে এ্যপোলো বিশ্বাস। তবে মামলার আসামি জাহিদ খান পলাতক অবস্থায় ২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর ঢাকায় হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এদিকে অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ থেকে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে আদালত মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার আদেশ দেন। এরপর আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বারবার মামলার কার্যক্রম পেছাতে থাকে। পাঁচ বছর পর ২০১২ সালে হাইকোর্ট আসামিদের আবেদন নাকচ করে নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম চলতে বাধা নেই বলে আদেশ দেন। এরপর আবার শুরু হয় মামলার বিচারকাজ।

এ মামলায় ৩ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষে ২৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি আবু আব্দুল্লাহ জানান, আসামিদের মধ্যে জাহিদ খান মারা গেছেন। আবু তাহের মো. মতুর্জা ওরফে এ্যাপোলো বিশ্বাস জামিনে ছিলেন। কিন্তু তিনি পলাতক ও ১৯ মে আদালতে না আসায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

বিশেষ পিপি আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া জানান, বিভিন্ন কারণে শুধুমাত্র যুক্তিতর্কের জন্যই তিন বছর সময় লেগেছে। প্রায় ৩০টি তারিখ পড়েছে যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য।