শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > সারাদেশে দেড় লাখ ইফতার পার্টির পরিকল্পনা জামায়াতের

সারাদেশে দেড় লাখ ইফতার পার্টির পরিকল্পনা জামায়াতের

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ইফতার রাজনীতির বদৌলতে প্রকাশ্যে ফিরে আসছে বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়া দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সংগঠন জামায়াত-শিবির। রমজান মাসকে ঘিরে প্রতিটি দল ইফতার রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও একে রাজনীতির মোক্ষম সময় হিসেবে বিবেচনা করে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত দেড় লাখেরও বেশি ইফতার পার্টি আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপির এ রাজনৈতিক মিত্র। শীর্ষ নেতৃত্বের সরাসরি নির্দেশনায় দল হিসেবে জামায়াত আয়োজন করবে এক লাখ ২৯ হাজার ইফতার পার্টি, আর ৩০ হাজারের মতো পার্টি আয়োজন করবে শিবির।

দেশজুড়ে ইফতার মাহফিলে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে দাওয়াত দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো, সরকারের অপপ্রচার, আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা ক্যাডারদের আবার সংগঠিত করাই এসব ইফতারের মূল লক্ষ্য। গত ২ জুলাই বিদেশী কূটনৈতিক আর বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পাশে রেখে ইফতার রাজনীতির প্রথম দুই পর্ব শেষ করেছে জামায়াত।
জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সূত্রগুলো দেশজুড়ে ইফতার রাজনীতির তথ্য নিশ্চিত করেছে। ঘটনা জানার পর সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যেই জামায়াতীদের ইফতার পার্টির ওপর বিশেষভাবে নজর রাখছে। সর্বশেষ বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পাশে নিয়ে ইফতারের মাধ্যমে বড় ধরনের শোডাউন করেছে জামায়াত। দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও বুধবারের ইফতার রাজনীতির বদৌলতে প্রকাশ্যে এসেছিলেন জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতা। ছিলেন ভাংচুর, অগ্নি সংযোগের মামলার আসামি হওয়া নেতারাও। জানা গেছে, দেশজুড়ে কেন্দ্র থেকে শুরু করে ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটি পর্যন্ত জামায়াত এবারের ইফতার রাজনীতির প্রথম শোডাউনটি করে গত ২ জুলাই।
রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে বিদেশী কূটনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন শীর্ষ স্থানীয় একজন নেতাসহ মধ্যম সারির কয়েক নেতা। অনেক দিনের আত্মগোপন থেকে এসে দলটির নেতারা কূটনীতিকদের বার্তা দেন এই বলে য়ে, এদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দল জামায়াত নীতিগতভাবে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ও গণতন্ত্র চর্চার রাজনীতিই করতে চায়! দলটির শীর্ষ নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-সহ শাস্তির মুখোমুখি হলেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় থেকে রাজনীতি করার সিদ্ধান্তও কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেন জামায়াত নেতারা। এজন্য কূটনীতিকদের কাছ থেকে সহযোগিতাও চেয়েছেন দলটির নেতারা। সম্প্রতি বিশেষত শেখ হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া জামায়াতকে এড়িয়ে চলতে দেখা গেছে পশ্চিমা কূটনীতিকদের। গত বছরের সরকারবিরোধী সহিংস আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা অনেক কূটনৈতিক কিছুটা জামায়াতবিরোধী অবস্থানের কথাও জানিয়েছিলেন। তবে এ অবস্থায় জামায়াতের ২ জুলাইয়ের ইফতারে বিদেশীদের অনেক বেশি উপস্থিতিকে বড় অর্জন বলে মনে করছে দলটি। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয় মেয়াদের সরকার গঠিত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহিংসতার জন্য জামায়াতকে অভিযুক্ত করে। এ দলটির সঙ্গে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপিকে সম্পর্ক গোছাতেও বলে ইউনিয়ন। তবে ছয় মাসের মাথায় বুধবারের ইফতার অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মজিনা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত হলেন।
ইফতারে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক কোরের ডিন মি. শাহের মুহাম্মদ, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ড. আবদুল্লাহ বিন নাসের আল-বুসাইরী, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মি. হোসাইন মুফতুগু মিশরের রাষ্ট্রদূত মি. মুহাম্মদ ইজ্জত, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মিসেস মেরিডি ল্যানডিমো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি চিফ অব মিশন জন ডেনি লুইস, ব্রিটেনের ডেপুটি হাইকমিশনার নিকলো, অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ড. লুসিন্দা বেল, কাতারের ডেপুটি হেড অব মিশন খালিদ জাহিদ এম. আল-মাহমুদ, কানাডার ডেপুটি চিফ অব মিশন ডেনিয়েল লুতফি, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, ওমান, লিবিয়া, রাশিয়া, ভারত, জাপান, ভিয়েতনাম, ব্র“নাই, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশের কূটনীতিককে। ইফতার পার্টিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, কর্মপরিষদ সদস্য ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, এ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, প্রচার বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ।
কূটনীতিকদের পাশে পেয়ে ইফতার অনুষ্ঠানে জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের নিরাপরাধ দাবি করে বিকৃত রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে ভুল করেননি। জামায়াত নেতারা বিদেশীদের কাছে দাবি করেন, তাদের দলের নেতারা নোংরা রাজনীতির শিকার। আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সরকার অন্যায়ভাবে বন্দী করে রেখেছে। জামায়াতের নায়েবে আমির যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কূটনীতিকদের কাছে বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগে আমাদের সম্মানিত নিরপরাধ নেতৃবৃন্দের বিচার করা হচ্ছে।
সূত্রগুলো বলছে, সারাদেশে অন্তত এক লাখ ২০ হাজার ইফতার মাহফিল করবে জামায়াত। কেন্দ্র, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ দলটির প্রতিটি শাখা কমিটিকে সফলভাবে ইফতার আয়োজনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে বুুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ইফতার সফল করার সকল দিক। কিভাবে ইফতারে সাধারণ মানুষকে আনা যাবে, আলোচনার বিষয়বস্তু কি হবেসহ সকল বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে নানা মাধ্যমে। সকল কার্যক্রম সম্পর্কে নেতাকর্মীদের কাছে তথ্য পাঠাতে কাজ করছে শিবিরের ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লাসহ অন্তত ২০টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। জানা গেছে, ইফতারে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিদের কাছে টানার বিষয়টিকে ইফতার মাহফিলে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রগুলো বলছে, মামলা-গ্রেফতারের কারণে সারাদেশে এখনও ঘরছাড়া জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অনেকে। বিগত সময়ে সরকার পতনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের হুমকি দিলেও মাঠে দেখা যায়নি তাদের। গ্রেফতার এড়াতে কোন রকম ফটোসেশন সেরেই ঘোষিত আন্দোলনকে ‘সফল’ বলে দাবি করছে তারা। আর এ কারণে দলের কর্মীদের মধ্যে রয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ। তবে সামনের আন্দোলনে শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে বর্তমানে দল গোছাতে ব্যস্ত দলটি। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এবার রমজান মাসকেই বেছে নেয়া হয়েছে। আয়োজন করা হচ্ছে ইফতার মাহফিল। এ সুযোগে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আদায়েরও চেষ্টা করবে দলটি। লক্ষ্য বাস্তবায়নে সারাদেশে প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে ইফতার মাহফিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রাজধানীতে প্রতিটি থানা এবং ওয়ার্ডেই অন্তত ২০ হাজার ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার আয়োজন সম্পর্কে জানা গেছে, ২ জুলাই বিদেশী কূটনৈতিক, বুধবার রাজনীতিবিদদের জন্য আয়োজন ছাড়াও আগামী ১৫ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ইফতার মাহফিলের আয়োজন সম্পর্কে অবশ্য দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান বলছেন, প্রতিবারের মতোই এবারও ইফতার মাহফিলের আয়োজন হচ্ছে। ইফতার মাহফিল নিয়ে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী নেই। জনকণ্ঠ