বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৭ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > সিলেটে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরিত স্থাপনা অবহেলায়

সিলেটে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরিত স্থাপনা অবহেলায়

শেয়ার করুন

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট ॥ মমতা বিহীন কালস্রোতে/ বাঙলার রাষ্ট্রসীমা হতে/ নির্বাসিত তুমি/ সুন্দরী শ্রীভূমি।

সিলেট সম্পর্কে এভাবেই নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সিলেট সফরকালে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবি লিখেছিলেন এ কবিতা। তবে তার সফরের স্মৃতি বিজড়িত সেই সময়ের বিখ্যাত স্থাপনাগুলো এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

যেগুলো এখনও কোনো রকমে ধুকে ধুকে টিকে আছে তারও নেই কোনো যতœাত্বি। স্থাপনাগুলো হলো সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজ, ব্রাহ্মমন্দির, গোবিন্দসিংহের বাসভবন (সিংহ বাড়ী), খ্রিস্টান মিশনারী বাংলো, মাছিমপুর মণিপুরী পল্লীর মন্দির।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৯ সালের নভেম্বর মাসে শিলং বেড়াতে এসেছিলেন। তখন সিলেট থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে সিলেট আসেন। ৫ নভেম্বর রেলপথে সিলেট এসে পৌঁছান। এ সময় সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ রেলস্টেশনে বরণ করেন কবিকে। রেলস্টেশন থেকে বজরায় (এক ধরনের নৌকা) চড়ে সুরমা নদী পাড়ি দেন তিনি।

বজরা চাঁদনীঘাটে ভিড়লে পত্র-পুষ্প-পতাকা মঙ্গলঘটের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানো হয় কবিকে। কবি সিলেট শহরের চৌহাট্টায় গোবিন্দ নারায়ণ সিংহের বাসভবনে (সিংহ বাড়ি) অতিথি হিসেবে ওঠেন।

আর রাত্রিযাপনের জন্য ব্যবস্থা ছিল নয়াসড়কে মিশনারি বাংলোতে। রবীন্দ্রনাতের স্মৃতিময় ঐতিহ্যবাহী সিংহবাড়ীতে গোবিন্দ নারায়ণ সিংহের উত্তরসুরীরা বাস করেন। তবে বাড়িটি থেকে তাদের উচ্ছেদ করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা ছিল প্রভাবশালী একটি মহলের। এক সময় তা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। পরে সিলেটের সংস্কৃতি কর্মীদের আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করা হয়।

নয়াসড়কের মিশনারি বাংলো বেশ ক’বছর আগে অস্তিত্বহীন হয়েছে। মিশনারি নেতারা অনেকটা গোপনে এ জমি বিক্রি করে দেন। সেখানে স্মৃতিময় বাংলোর পরিবর্তে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজে সফরকালে কবিগুরু ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন কলেজ হোস্টেলে। সেই হোস্টেলও ২০১২ সালে কিছু দুস্কৃতিকারীর হাতে ভস্মীভূত হয়। যার সংস্কার করা হয় সম্প্রতি।

সিলেটের প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজারের ব্রহ্মমন্দিরও কবিগুরুর স্মৃতি বহন করে। ব্রহ্মমন্দিরে ১৯৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনায় আগুন ধরিয়ে দেয় দুস্কৃতিকারীরা। সে আগুনে পুড়ে যায় ব্রহ্মমন্দিরের কবির স্বাক্ষর করা মন্তব্য খাতা। প্রায় পাঁচ বছর ১৯৯৭ সালে সেটি আংশিক সংস্কার করা হয়। আর ২০১৪ সালে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপির বদৌলতে সরকারি উদ্যোগে প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করে পুরো অবকাঠামোর সংস্কার করা হচ্ছে।

যার প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সিলেট সফরকালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন কেড়েছিল সিলেটের ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক মণিপুরী নৃত্য ও মণিপুরী হস্তশিল্প।

সিলেট পৌঁছার পরদিন ১৯১৯ সালের ৬ নভেম্বর নগরীর মাছিমপুর মণিপুরী পল্লীতে যান তিনি। কবির উপস্থিতিতে সেখানে মণিপুরী ছেলেরা রাখাল নৃত্য পরিবেশন করে। কবির অনোরো সেদিন রাতেই রাসনৃত্য পরিবেশন করেন মণিপুরী শিল্পীরা।

কবিগুরুর স্মৃতি রক্ষায় মাছিমপুর মণিপুরী পল্লীতে একটি ভাস্কর্য স্থাপনের জন্য স্তম্ভ নির্মাণ করা হয় বেশ কয়েক বছর আগে। সরকারি উদ্যোগ না থাকায় কাজ থমকে আছে। গত ১০-১২ বছর ধরে পাথরের তৈরি ভাস্কর্যটিও পড়ে আছে অযতœ অবহেলায় স্টোররুমে। এ বিষয়ে বেশ ক্ষোভ আছে মাছিমপুর বাসীর। সরকারের বদল ঘটলেও ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয় না স্তম্ভে। প্রত্যেক সরকারই আশ্বাস দেয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না।

শেষ আশ্বাস সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। আশ্বাস কি আশ্বাই থাকবে, নাকি বাস্তবে পরিণত হবে এটাই এখন দেখার বিষয়।

শ্রীহট্ট ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক অসিত ভট্টাচার্য্য জানান, আলোকিত সমাজ ব্যবস্থা গড়ার আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজ সুদীর্ঘ সময় ধরে করে আসছে। তার ফলে সমাজে কুসংস্কার দূর হয়েছে, নারী শিক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি উদ্যোগে আজ কবিগুরুর স্মৃতিময় মন্দিরটি যেমন সংস্কার হচ্ছে।

তেমনি কবির স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রয়োজন। যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে বরীন্দ্রনাথকে সহজে তুলে ধরা যায়।