শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > আন্তর্জাতিক > সিয়েরা লিয়নে শুধু লাশ আর লাশ

সিয়েরা লিয়নে শুধু লাশ আর লাশ

শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। কোথাও পা রাখার জন্য একটু শুকনো জায়গা নেই। পানিতে ডুবে গেছে সিয়েরা লিয়ন। সোমবার ভয়াবহ বন্যা আঘাত করেছে দেশটির রাজধানী ফ্রিটাউনে। পানি আর ভূমিধস, সঙ্গে কাদামাটির স্রোত ঢেকে ফেলেছে সব। লাশের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় কমপক্ষে ৩১২। মর্গগুলো উপচে পড়ছে লাশে। নাগরিকরা নিকটজনকে খুঁজে ফিরছেন রুদ্ধশ্বাসে। এ এক বীভৎস দৃশ্য সিয়েরা লিয়নে। রাস্তার ওপর দিয়ে যেভাবে স্রোত যাচ্ছে তাতে একে আর রাস্তা বলে ভাবার কোনো সুযোগ নেই। দেখে যে কারো মনে হতে পারে এ এক কাদামাটির নদী। তীব্র স্রোত বইছে রাস্তার ওপর দিয়ে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এ বার্তা সংস্থার একজন সাংবাদিক ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ সরিয়ে নিতে দেখেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, রাজধানী ফ্রিটাউনের বড় দুটি এলাকার বাড়িঘর সব পানির নিচে। মৃতদেহগুলো রাস্তার ওপরে স্রোতের সঙ্গে ভেসে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় রেডক্রসের মুখপাত্র প্যাট্রিক মাসাকুওই বলেছেন, নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৩১২। এ সংখ্যা অবশ্যই বাড়বে। তার টিম ফ্রিটাউনে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করছে। এতে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যার টালিও করা হচ্ছে। ফ্রিটাউনে কোনাট হাসপাতালের মর্গের একজন টেকনিশিয়ান মোহাম্মদ সিন্নেহ। তিনি বলেছেন, শুধু তাদের মর্গেই নেয়া হয়েছে কমপক্ষে ১৮০টি মৃতদেহ। এর মধ্যে অনেক শিশুর লাশ রয়েছে। এখন তাদের মর্গ উপচে পড়ছে। সেখানে লাশ রাখার মতো আর কোনো স্থান নেই। আরো অনেক মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বেসরকারি মর্গগুলোতে। ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে দেখা যাচ্ছে বুক সমান পানিতে রাস্তায় উঠার চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। জুবা এলাকার এক পাহাড়ের ওপর বাস করতেন ফাতমাতা সেসে। তিনি বলেছেন, সোমবার ভোর সাড়ে চারটায় প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় বাড়িতে ঘুমাচ্ছিল তার তিন সন্তান ও স্বামী। ভূমিধসে মাটি এসে চাপা দেয় তাদের বাড়ি। তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে পানিতে ডুবে যায় সব। এ সময় ফাতমাতা ঘরের চালের ওপর উঠে যান। এভাবেই সেখানে বেঁচে আছেন তারা। স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, রিজেন্ট এলাকায় একটি পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়েছে। এতেই বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আরেকটি ছবিতে দেখানো হয়েছে, একটির ওপর আরেকটি লাশ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মকর্তা ক্যান্ডি রোজারস বলেছেন, কমপক্ষে ২০০০ মানুষ গৃহহারা হয়েছে। তাই আফ্রিকার সবচেয়ে গরিব দেশগুলোর অন্যতম এই সিয়েরা লিয়নে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এ জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। উল্লেখ্য, ফ্রিটাউন সিয়েরা লিয়নের উপকূলীয় একটি শহর। এখানে বসবাস প্রায় ১২ লাখ মানুষের। প্রায় বছরই এখানে কয়েক মাসের বৃষ্টি হয়। তাতে দেখা দেয় বন্যা। ভেসে যায় মানুসের বসতি। দেখা দেয় কলেরা সহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। ২০১৫ সালের বন্যায় সেখানে মারা যায় কমপক্ষে ১০ জন। গৃহহারা হন কয়েক হাজার মানুষ। এর আগে ২০১৪ সালে এখানে দেখা দেয় ইবোলা ভাইরাসের প্রকোশ। তাতে সারাদেশে কমপক্ষে ৪০০০ মানুষ মারা যান। সিয়েরা লিয়নে বসবাসরত মানুষের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগই দারিদ্রসীমার নিচে।