জেলা প্রতিনিধি, খুলনা ॥ সুন্দরবনের চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১৬টি বনদস্যু বাহিনী। এই দস্যু বাহিনীর হাতে মুক্তিপণের দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই অপহৃত হচ্ছে জেলে-বাওয়ালী। কোস্টগার্ড, পুলিশ-র্যাবের যৌথ অভিযানে গত এক বছরে এসব বাহিনীর অধিকাংশ সর্দার মারা গেলেও বনদস্যুদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতারা সব সময় থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোনো বাহিনীর প্রধান নিহত হলেই আশ্রয়দাতারা আবারো নতুন কাউকে বাহিনী প্রধান বানিয়ে দিচ্ছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বন বিভাগ ও জেলে-বাওয়ালীদের কাছ থেকে জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে বর্তমানে ১৬টি দস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। বাহিনীগুলো হলো- আমজাদ বাহিনী, ফরহাদ বাহিনী, শহিদুল বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, জাকির বাহিনী, রুবেল বাহিনী, বাকিবিল্লাহ বাহিনী, মুর্তজা বাহিনী, আনোয়ার বাহিনী, মাহবুব বাহিনী, তছলিম বাহিনী, নাসির বাহিনী, জিহাদ বাহিনী, জুলফিকার আলী গামা বাহিনী, দুই ভাই বাহিনী ও রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী।
সুন্দরবনে দস্যুদের মধ্যে বর্তমানে ৬টি বাহিনী বেশি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এ বাহিনীগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে মুর্তজা বাহিনী ও শরণখোলা রেঞ্জ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী। সাতক্ষীরা রেঞ্জের উত্তর দিক নিয়ন্ত্রণ করে আমজাদ বাহিনী ও দক্ষিণ দিক নিয়ন্ত্রণ করছে জাকির বাহিনী। খুলনা রেঞ্জের উত্তর এবং দক্ষিণ পাশ নিয়ন্ত্রণ করে মাহবুব বাহিনী ও জাহাঙ্গীর বাহিনী। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী সুন্দরবনে শতাধিক সদস্য, দেশি-বিদেশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী শীর্ষ ও জাহাঙ্গীর বাহিনী। এ বাহিনীর সবচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখা যায় বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে। এদের চাঁদা না দিলে সুন্দরবনে জেলেদের মাছ ও গোলপাতা সংগ্রহ করতে দেয়া হয় না।
সূত্র জানায়, বনদস্যুদের এই বাহিনীগুলো সুন্দরবনে যেতে হলে মংলার দুই গডফাদারকে নজরানা দিয়েই তবে যেতে হয়। কোথাও কোনো সময় কোনো ধরনের সমস্যা হলে এই দুই আশ্রয়দাতা আগে থেকেই সতর্ক করে দেয় বনদস্যুদের। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অনেক অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। গত দেড় বছরে র্যাব ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সুন্দরবনের বনদস্যু বাহিনীর অন্তত ৯ জন প্রধানসহ ১৮ জন নিহত হলেও থেমে থাকেনি তারা। দুই প্রশ্রয়দাতার সহায়তায় পরে ওই সব বাহিনীর সেকেন্ড-ইন কমান্ডরা পুনরায় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের নামে বাহিনী গড়ে পুরোদমে জেলে অপহরণসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
মংলা এলাকায় সুন্দরবনের এই আশ্রয়দাতাকে সহায়তা করেন খুলনার এক গডফাদার। নগরীর ময়লাপোতা ও গল্লামারী এলাকায় তার রয়েছে অবাধ বিচরণ। এই দুই স্থানে বসেই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন কারা কখন কোন বনদস্যু বাহিনীর হয়ে বনে প্রবেশ করবে। ওই গডফাদার নিজেকে বিভিন্ন সময় কয়েকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দেয় বলেও সূত্র জানায়।
এ ব্যাপারে মংলা কোস্টগার্ডের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বনদস্যুদের পাশাপাশি তাদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও অচিরেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।