বৃহস্পতিবার , ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ , ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > সুপ্রিম কোর্ট ॥ জামিন জালিয়াতি রোধ করবে ডিজিটাল ব্যবস্থা

সুপ্রিম কোর্ট ॥ জামিন জালিয়াতি রোধ করবে ডিজিটাল ব্যবস্থা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: মামলার এজাহার ও অন্য কাগজপত্রের জাল সার্টিফায়েড অনুলিপি তৈরি করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এমনকি উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন না করেও ভুয়া আদেশ তৈরি করে জামিনে মুক্তি নিচ্ছেন আসামিরা।

এ ধরনের বেশ কয়েকটি জামিন জালিয়াতির ঘটনা নজরে আসার পর তা প্রতিরোধে নানা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত, ফৌজদারি মামলা দায়ের এবং কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করা ছাড়াও খুব শিগগিরই ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা আদালতের আদেশ দেখতে পাবেন। ফলে জামিন জালিয়াতির কোনো সুযোগ থাকবে না।

এ ধরনের কয়েকটি ঘটনার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আদালতের গুটি কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী এবং আইনজীবী সহকারীদের জড়িত থাকার তথ্য।

এমন একটি জামিন জালিয়াতির ঘটনায় দুই আইনজীবী ও তার সহকারীর জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। গত ২৪ আগস্ট মামলাটি দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার সোহাগ রঞ্জন পাল।

মামলাটির আসামিরা হলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ফরহাদ হোসেন, পটুয়াখালীর আইনজীবী খলিলুর রহমান এবং তাদের সহকারী হুমায়ুন আহমেদ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দায়ের করা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার একটি মামলায়( নং-১১ এবং জিআর মামলা নং ২৯৬/১৩) হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান আসামিরা। জামিন আবেদনের সঙ্গে কাগজপত্রের জাল সার্টিফায়েড অনুলিপি দাখিল করা হয়েছিল। হাইকোর্ট ওই বছরের ১ অক্টোবর মামলার আসামি মোশাররফ হেসেন ও সোহেল হাওলাদারকে জামিন দেন। এর পরের মাসের ২৬ তারিখে এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আকতার হোসেনসহ অন্য আসামিদেরও জামিন চেয়ে একই আদালতে আবেদন করেন আরেক আইনজীবী।

ওই আবেদনে বলা হয়, এ মামলার দুই আসামিকে এই আদালত জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে আদালতের সন্দেহ হয়। পরে আদালত ওই দুই আসামির জামিনের নথি তলব করেন। সেখানে দেখা যায়, আগের আবেদনে মামলার এজাহারে জালিয়াতি করা হয়েছে। আসল এজাহারের সঙ্গে জাল এজাহারের স্বাক্ষরের পার্থক্য রয়েছে। এটি দেখে আসামি মোশাররফ ও সোহেল হাওলাদারের জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জাল সার্টিফায়েড অনুলিপি তৈরিতে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ওই ঘটনার তদন্ত করে জাল সার্টিফায়েড অনুলিপি তৈরির অভিযোগ আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ফরহাদ হোসেন ও খলিলুর রহমান এবং তাদের সহকারী হুমায়ুন আহমেদের বিরুদ্ধে। আর এ তদন্ত অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার সোহাগ রঞ্জন পাল গত ২৪ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাটি দায়ের করেন।

এ ধরনের আরো একটি জামিন জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পর আদালত আসামির জামিন বাতিল করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ঢাকা জেলার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন আদালত।

এ সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল লাকী আক্তার মুক্তা (২২) নামের এক যাত্রী কুয়ালালামপুর থেকে দেশে ফেরার সময় ১০০ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বারসহ আটক হন। বিচারিক আদালতে জামিন না পাওয়ায় গত ৯ জুলাই আইনজীবী নাসিমা আক্তার শানুর মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করেন লাকী। আর আবেদনে করা হয় জালিয়াতি। স্বর্ণের বারের স্থলে ২৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ আটকের কথা উল্লেখ করা হয়। তথ্য গোপন করে জামিনে মুক্তি নিয়ে আসামি লাকী চম্পট দেন।

জামিনের কিছুদিন পর এক আইনজীবীর টেলিফোনে ঘটনাটি জানতে পারেন এক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি আদালতকে অবহিত করলে আদালত জামিন বাতিল ও তদন্তের আদেশ দেন।

জালিয়াতির আরো দু’টি ঘটনার খবর পায় বাংলানিউজ। যেগুলোতে দেখা যায়, হাইকোর্টে আবেদন না করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার স্বর্ণ চোরাচালান মামলার দুই আসামি মুক্তি পেয়েছেন। জালিয়াতি করে লেখা আদেশের অনুলিপিতে দেখা যায় অন্য মামলার ভুয়া নম্বর বসানো হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন সেকশনের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও হুবহু বসানো হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের (যে বেঞ্চের নাম বসানো হয়েছে) নজরে আনা হলে আদালত বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।

আদলতের নজরে আনা সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আলী জিন্নাহ বাংলানিউজকে বলেন, হাইকোর্টে জামিন হওয়ার পর একজন কর্মকর্তা বিষয়টি টেলিফোনে সংশ্লিষ্ট কারাগারকে অবহিত করেন। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় জালিয়াত চক্র অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় টেলিফোন থেকে ফোন না করে মোবাইল থেকে ফোন করে জামিনের আদেশ নিশ্চিত করেন। এটা একেবারে ঠিক নয়।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জালিয়াতি ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এটি রোধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। যাতে জালিয়াতির কোনো সুযোগ থাকবে না। সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা আদালতের আদেশ দেখতে পাবেন। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম