শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > স্বাধীনতার ৪৫ বছর ॥ সঙ্কটেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

স্বাধীনতার ৪৫ বছর ॥ সঙ্কটেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সকল সঙ্কটকে সঙ্গী করেই চলছে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। প্রতিদিনই হাজারো খারাপ খবরের মাঝে ফুটে উঠছে বাংলাদেশের সাফল্যের চিত্র। পাকিস্তানের ২৩ বছরে শোষণ-বঞ্চনা শেষে শূন্যহাতে পথচলা শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর থেকেই শুধুই এগিয়ে যাওয়া। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক শাসন, পারস্পরিক আস্থাহীনতা কিংবা অগণআন্ত্রিক রাজনীতির চর্চা সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রতিনিয়তই এগিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতিতে এক নম্বর হওয়ার পরও বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েনি, বিশ্বব্যাপী ফিরিয়ে এনেছে আস্থা।

স্বাধীনতার ৪৫তম বছরে পা রাখার প্রাক্কালে সহজেই বলা যায়, বাংলাদেশ ধীর গতিতে এগিয়েছে। কিন্তু এখন গতি ক্রমবর্মান। অশিক্ষিত ও অশিক্ষিত কৃষক, পোশাক শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমিকরাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করেছে। তাদের হাত ধরে আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বাড়ছে রেমিট্যান্স। ব্যাংকের রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ। সরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে ব্যর্থ, সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছে সাফল্য। রাষ্ট্রযন্ত্র যখন চিন্তিত, তখন ব্যক্তিচিন্তায় অর্জিত হয়েছে সাফল্য। প্রতিদিনই বিশ্বের কোন না কোন প্রান্তে বাংলাদেশি ছিনিয়ে নিচ্ছেন সাফল্যের মুকুট।

বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ পারকিনসন ও নরওয়ের অর্থনীতিবিদ ফালান্ড বাংলাদেশকে উন্নয়নের পরীক্ষাগার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমীক্ষায় বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ‘নেক্সট ইলেভেন’ সম্মিলিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে ছাড়িয়ে যাবে।

লন্ডনের একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা লিখেছে, ২০৫০ সালে প্রবৃদ্ধির বিচারে বাংলাদেশ পশ্চিমা দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বের নামকরা রেটিং-বিশেষজ্ঞ সংস্থা মুভিস ও স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশকে সন্তোষজনক অর্থনৈতিক রেটিং দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যতম সমালোচক হিসেবে পরিচিত ব্রিটেনের দি ইকোনমিস্টের মতে, বাংলাদেশের সূচকগুলো এতই ইতিবাচক যে, তা ধরে রাখতে পারলে অনুন্নয়ন ও দারিদ্র্য কাটিয়ে উঠতে পারবে। আর বাংলাদেশের অন্যতম পরম বন্ধু নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি এগিয়েছে।

বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর অর্থনীতির মুক্তির ক্ষেত্রে তলাবিহীন জুড়ির যে কথাটা প্রচলিত ছিল সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তখন সাড়ে ৭ কোটি জনগণের স্থলে আজ ১৭ কোটি জনগণ। সে হিসেবে এক্সপোর্ট বেড়েছে, রেমিটেন্স বেড়েছে, ব্যবসা বাণিজ্য বেড়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে। এগুলো প্রমাণ করে অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সীমিত সম্পদের মধ্যে দেশের ভালো উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন, শিক্ষা খাতে উন্নয়ন হয়েছে বেশি। এছাড়া ব্যবসা বাণিজ্যে প্রাইভেট সেক্টর ভালোভাবে উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তবে আরো উন্নয়ন হতো যদি আমাদের দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকতো। দেশে যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত ও টেকসেই হবে।’ তবে স্বাধীনতার পর ছোট ছোট কিছু নেতিবাচক বিষয় ছাড়া জাতি হিসেবে আমাদের আদর্শগত দিক দিয়ে ইতিবাচক ইমেজই বেশি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান ও অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, ‘অর্থনীতি পথে আমাদের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকে। অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই। বাংলাদেশ প্রত্যাশার চেয়ে অকল্পনীয়ভাবে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল বাংলাদেশের কাছ থেকে, আন্তর্জাতিক দিক থেকে, অর্থনীতিবীদদের দিক থেকে এমনকি মিডিয়ার দিক থেকে যে প্রত্যাশা ছিল তার চেয়ে বেশি অর্জন করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আমরা থেমে যাচ্ছি। সেটা রাজনৈতিক কারণে হোক, দুর্নীতির কারণে হোক, সঠিক পলিসি প্রদানের অভাব, অসমঝতার কারণে, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থবিরতা কারণে হোক। আর এগুলো হচ্ছে এখন আমাদের উন্নয়ের পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। তবে বাংলাদেশ এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। মাঝখানে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের সময় যদিও দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়েছিল। তার পর থেকে গণতন্ত্রান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশ অনেক এগিয়ে গেছে, এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিন দিন বেড়েই চলছে। শিল্প,শিক্ষা,নারীর ক্ষমতায়ন,বয়স্ক ভাতা,বিধবা ভাতাসহ বাংলাদেশের অনেক সেক্টরই এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আমাদেরকে ধরে রাখতে হবে।’

অর্থনীতিতে অগ্রযাত্রা
শূন্য থেকে শুরু করে আজ বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ২২ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই এখন একমাত্র দেশ যা রিজার্ভ থেকে ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কমবেশি বাংলাদেশিরা চাকরিসহ নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে। তাদের আয় থেকে বাংলাদেশে প্রতিমাসে বৈদেশিক মুদ্রা আসে শত কোটি ডলারের বেশি। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ১ হাজার কোটি ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ আট মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ২০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। বর্তমানে বিশ্বের ১৯২টি দেশে বাংলাদেশ ৬৯২টি পণ্য রপ্তানি করে থাকে। যেখানে মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার দুই গুণেরও বেশি। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ১৮ হাজার ২৮৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ হাজার ২২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার বেশি। এ অর্থবছরে নিট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।

২৫০ কোটি ৭১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়রে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া বাংলাদেশ। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ঘাত-প্রতিঘাত পিছনে ফেলে স্বাধীনতার ৪৪ বছরেই বাংলাদশে আজ ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণরে স্বপ্ন দেখে।

কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য
খাদ্য উৎপাদনসহ কৃষিতেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। বহুমুখি সমস্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেও এ খাতে এসেছে অভাবনীয় সাফল্য। মাত্র ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশটিতে এখন বছরে চার কোটি টন চাল উৎপাদন হয়। দুই বছর আগেও যা ছিল সাড়ে তিন কোটি টনের নিচে। অল্প সময়েই খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য এনেছেন দেশের কৃষকরা। ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে চাল রপ্তানি করে বাংলাদেশ ছুঁয়েছে আরেকটি মাইলফলক। ধান চাষ ও চাল উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। আর এতে পাল্টে গেছে জিডিপির গ্রাফ। জাতীয় পরিসংখ্যান অনুসারে শুধু কৃষি খাতে জিডিপির অবদান ২১ শতাংশ। আর কৃষিশ্রমে ৪৮ শতাংশ। কৃষির সাব-সেক্টরসহ এ পরিসংখ্যান ৫৬ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে চুতর্থ।

আর আলু উৎপাদন কৃষিখাতের সাফল্যের এক বিস্ময়। এক দশক আগেও উৎপাদন ছিল ৫০ হাজার টনের নিচে। এখন তা এগোচ্ছে কোটি টনের দিকে। এ সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০ দেশের কাতারে। এ স্বীকৃতিটি দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সম্প্রতি সংস্থাটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে ৮২ লাখ ১০ হাজার টন উৎপাদন নিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে অষ্টম স্থানে।

সমৃদ্ধির যোগাযোগ খাত
স্বাধীনতার ৪৩ বছরে দেশের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগ খাতে বঙ্গবন্ধু সেতু মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মিত হলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। রাজধানীর যানজট নিরসনে মহাখালী, খিলগাঁও, গুলিস্তান ও কুড়িল ফ্লাইওভারও বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। মালিবাগ মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হবে শিগগির। এছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে পদ্মাসেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন উন্নীতকরণ, মেট্টোরেল, উড়াল সড়ক, দ্বিতীয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও দ্বিতীয় পদ্মাসেতুসহ বড় বড় প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

সেই সঙ্গে নৌপথ সচল করতে দেশের ৫৩টি নদীর খনন কাজ চলছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর আগে এক সঙ্গে এতগুলো নদী খননের কাজ হয়নি। বর্তমান সরকার প্রথম দফায়ই এই প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরডব্লিটিএ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। এক্ষেত্রে প্রথম দফায় ২৪টি এবং দ্বিতীয় দফায় ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ নদীপথ খনন করা হবে।

স্বাধীনতার ৪৩ বছরে বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদেই ২০ বছর মেয়াদী একটি রেল উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান ঘোষণা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে চলমান প্রকল্পসহ ছোট বড় মিলে মোট ২৩৫টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।

এগিয়ে যাচ্ছে ওষুধশিল্প
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প। একসময়ের আমদানিকারক দেশ এখন ওষুধের রপ্তানিকারক দেশের গৌরবে গৌরবান্বিত। দেশের উৎপাদিত ওষুধ অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণসহ প্রায় ১০০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। পৃথিবীর অনুন্নত ৪৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধের কাঁচামালের ৩০ শতাংশ তৈরি হচ্ছে স্থানীয়ভাবে, বাকি প্রায় ৭০ শতাংশ আসছে বিদেশ থেকে। দেশেই ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন করতে পারলে প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকার) ওষুধ রপ্তানি করা সম্ভব।

প্রযুক্তিখাতে বিস্ময়কর সাফল্য
সরকারি-বেসরকারি কর্মকাণ্ড ও জনগণের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। প্রায় সবকিছুই এখন তথ্য-প্রযুক্তি বা আইটিনির্ভর। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির উৎকর্ষে বাংলাদেশেও বইছে জোয়ার। অসংখ্য তরুণ যেমন প্রশিক্ষিত আইটি এক্সপার্ট হিসেবে গড়ে উঠছে, তেমনি নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে জীবনযাত্রাও বদলে গেছে। পারস্পরিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ব্যাংকিংসহ নানা কাজে এখন ডিজিটাল। নিমিষেই তথ্য জানতে বা জানাতে পারছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। রাষ্ট্রীয় অনেক সেবা পাওয়া যাচ্ছে সহজে। অনেক ক্ষেত্রেই কমেছে হয়রানি ও দালালের দৌরাত্ম্যে।

শান্তিরক্ষী মিশনে জয়যাত্রা
বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের এখন প্রায় ৮ হাজার ৭শ’ সদস্য রয়েছেন। বিশেষ করে দক্ষিণ সুদান ও কঙ্গোতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা খুবই সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ যে কোন পরিস্থিতিতেই এখান থেকে ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে জাতিসংঘে সেনা সদস্য পাঠাতে সক্ষম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশের ১২২ সদস্য নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বিভাগের মহাসচিব হার্ভে লাডসুস বাংলাদেশ সফর করেছেন। সফরকালে তিনি গত কয়েক দশক ধরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অসাধারণ ভূমিকা, কর্মদক্ষতা ও পেশাগত আচরণের গভীর প্রশংসাও করেন।

যোগাযোগ প্রযুক্তিতে উন্নতির শিখরে
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব সভায় প্রতিনিধিত্ব করছে। টানা দ্বিতীয়বারের জন্য আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। দ্রুতই বিকাশ ঘটছে ই-শিল্প বাণিজ্য। বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন দেখে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে শত হাজার কোটি টাকা আয় করবে।

বর্তমানে প্রায় ১১শ প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার তৈরি করে। এই শিল্পে ২৫ থেকে ৩০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ কাজ করে যাচ্ছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ সফটওয়্যার শিল্পে এক লাখের বেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ কাজ করবে।

বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার বিদেশের বাজারে বড় ধরনের জায়গা করে নিয়েছে। এখন এই শিল্প থেকে প্রতিবছর একশ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় হচ্ছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এ দেশ সফটওয়্যার রপ্তানি করে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রতিটি ঘরের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে প্রযুক্তি। এজন্য এক হাজার ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশে এ পর্যন্ত ১৪টি কমিউনিট রেডিও লাইসেন্স পেয়েছে। এসব রেডিও মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক সেবা দেয়া হচ্ছে। দেশে ৩৯টি টেলিভিশন রয়েছে। সময়ে সময়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমেও এগিয়ে যাচ্ছে তথ্য পরিবেশন। গ্রামাঞ্চলে ২৪৫টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে কৃষি ও কমিউনিটি রেডিও।

সব সঙ্কটকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, এগিয়ে যাবে দেশ- এমন প্রত্যাশা থেকেই স্বাধীনতার নতুন বছরে পা রাখছি আমরা। ২০২১ সালে যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে, তখন বাংলাদেশ হবে বিশ্বের মধ্যে উদাহরণ সৃষ্টিকারী একটি রাষ্ট্র। বাংলামেইল২৪ডটকম