বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ , ১৭ই রমজান, ১৪৪৫

হোম > জাতীয় > হরতালে শ্বাসরুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতি

হরতালে শ্বাসরুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ হরতালের সংস্কৃতি বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বাসরোধ করছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে শীর্ষ মার্কিন দৈনিক ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে দেশের হরতালের কুপ্রভাব নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হরতালগুলো এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন বাংলাদেশ পোশাক কারখানাগুলোসহ বিভিন্ন েেত্র ভাবমুর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছে।  বিশেষ করে গত এপ্রিলে সাভারে রানা প্লাজা ধসসহ হরতালের কারণে বাংলাদেশ তাৎণিক কিছু অর্থনৈতিক হুমকির সম্মুখিন হয়। যা দেশটিকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে দিচ্ছে না। এছাড়া প্রতিবেদনে গত মাসে হয়ে যাওয়া একটি হরতালের চিত্র তুলে ধরা হয়, যাতে পিকেটিং, রাস্তা অবরোধ, হাতবোমা বিস্ফোরণসহ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের সামনের দিনগুলোতে আরো হরতাল হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে হরতালে ঢাকার অন্যতম পাঁচতারা হোটেল সোনাগাঁওয়ের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে হোটেলে আগত অতিথিদের বিমানবন্দরে আনানেয়ার সময় বিপজ্জনক অবস্থা এড়াতে সঙ্গে স্বসস্ত্র প্রহরী রাখা হয় এমনকি রাস্তায় সেনা ঘাঁটিও দেখা যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুন্যালকে বিতর্কিত উল্লেখ করে প্রতিবেদনে এর দেয়া রায়গুলোর জন্যও দেশে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বলে বলা হয়। এছাড়া আগামী জানুয়ারিতে দেশে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায়ও হরতাল বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে চলতি বছর ও গতবছর হয়ে যাওয়া হরতালের একটি তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ি চলতি বছর হরতাল হয়েছে মোট ৩৬ দিন অর্থাৎ এক মাসেরও বেশি সময়। যেখানে গত বছরে এই সংখ্যা ছিল ২৯ দিন এবং ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত হরতাল হয়েছে মোট ১৭ দিন। এরজন্য গত জানুয়ারি থেকে হরতালের কারণে ৮০ জন মারা গেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া আরেকটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির তথ্যানুযায়ি হরতালের কারণে চলতি বছর মোট ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি তি হয়েছে অথবা দিনে তি হচ্ছে ২০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদও বলেছেন, ‘হরতালের সংস্কৃতি আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে।’ হামিম গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল কালাম আজাদ জানান, তারা আন্তর্জাতিক ব্রান্ড গ্যাপসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি নামি ব্রান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করেন। কিছুদিন আগে হেরতালকারীরা চট্টগ্রাম বন্দরে যাওয়ার সময় তার একটি ট্রাকে আগুন দেয়। এতে তার প্রায় ২৫’শ পিস পোশাক পুড়ে যায়। এরকম ছোট ছোট আরো অনেক ঘটনার কারণে কারখানা মালিকদের মিলিয়ন ডলারের তি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রিড কনসালটিংয়ের চেয়ারম্যান রডনি রিড বলেন, ‘একটি কারখানার জন্য দেউলিয়া হতেএগুলোই যথেস্ট।’
প্রতিবেদনে হরতালের কারণে শুধু দেশীয় পোশাক মালিকরাই নয় বরং বিদেশি ক্রেতারাও যে বাংলাদেশ বিমুখ হয়ে পড়ছে সেটিও তুলে ধরা হয়। সাম্প্রতিক একটি হরতালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পশ্চিমা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান, তিনি হরতালের কারণে গত তিন দিন ধরে হোটেলে আটকে রয়েছেন। এছাড়া টরেন্টোর একদল ডাটা অ্যানালাইসিস কনসালটেন্ট জানান, সহিংসতার আশঙ্কায় আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা তাদের বাংলাদেশ সফর পিছিয়ে দিয়েছেন।
তবে এর সম্পূর্ণ একটি বিপরীত চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। কিছু কিছু বেপরোয়া ব্যবসায়ী আবার হরতালে নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য দিনে প্রায় ১৫০ ডলার খরচ করে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রাস্তায় বের হন। সাম্প্রতিক হরতালগুলোতে এমন বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স দেখা গেছে যারা বিদেশি ব্যবসায়ীদের হোটেলে নামিয়ে দিয়েছে। একজন স্প্যানিশ বিনিয়োগকারীতো গর্বভরে তার আইফোনে ছবিও দেখিয়েছেন, কিভাবে তার স্থানীয় কায়েন্ট তাকে যাতায়াতের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করছে।
এই হরতালের সংস্কৃতি বর্জন করতে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই প্রায় প্রতিদিনই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা তাতে কর্ণপাত করছেন না। বর্তমান মতাসীন আওয়ামী লীগও গত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলে থাকতে ১৭০ দিনের বেশি হরতাল করেছিল। অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, এটি আসলে এক ধরনের মতায় আসার জন্য ভোট পাওয়ার চর্চা।
প্রতিবেদনে হরতাল নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের দুজন নেতারও বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর বছরের শুরুতে বলেছিলেন যে, ‘প্রতিবাদ করার স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত। তাই আমি হরতাল নিষিদ্ধ করার পে নই। তবে যৌক্তিক ও শক্ত নৈতিক কারণ ছাড়া হরতাল ডাকা উচিৎ নয়।
অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘হরতালে পেছনের কারণগুলো নিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা নিশ্চই ভাববেন। সেইসঙ্গে পরামর্শ দেবেন কিভাবে হরতাল নিষিদ্ধ করতে আইন প্রণয়ন করা যায়।’