শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > ১০ ইস্যুতে তারনাকোর মাধ্যমে সংলাপে রাজি বিএনপি

১০ ইস্যুতে তারনাকোর মাধ্যমে সংলাপে রাজি বিএনপি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: বিএনপির এখন প্রধান দাবি যত দ্রুত সম্ভব সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন। এই নির্বাচনের জন্যই তারা জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ প্রতিনিধি জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব (শান্তিরক্ষা) অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি। বান কি মুন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সংকট সমাধানে প্রয়োজনে তারানকোর সহায়তা নেওয়ার জন্য প্রস্তাব করায় বিষয়টি ইতিবাচক হিসাবে দেখছে বিএনপি। এটাকে সরকারের উপর সংকট নিরসনের ও সমস্যা সমাধানের একটি চাপ মনে করছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সরকারের সঙ্গে এখন বিএনপির নেতারা সংলাপে বসতে চাইলেও সরকার বসবে না। বিএনপি চেয়ারপারসন অনেকবার সংলাপে বসার কথা বলেছেন। সরকারও এতে সারা দেয়নি গত এক বছরেও। এখনও সরকার সংলাপ বসা নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। সরকার সংলাপ করবে না বলছে। তারপরও বিএনপি আশার আলো দেখছে। মনে করছে, সরকার এখন বসতে না চাইলেও এক সময়ে সমঝোতা করতে উদোগী হবেন। এটা সরকারকে প্রয়োজনেই হতে হবে। এই কারণেই বিএনপি মনে করছে তারানকোর মধ্যস্থায় সংলাপ শুরু করা যেতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট আরো একটি সূত্র জানায়, সরকার সংলাপে রাজি হলেই কেবল হবে না। আগে সংলাপের এজেন্ডাও ঠিক করতে হবে। প্রথমত সরকার সংলাপ করতে চাইলে এজেন্ডা ঠিক করতে হবে- কোন কোন ইস্যুতে সংলাপ হবে। সেখানে ঠিক করতে হবে সংলাপ শুরু করার কত দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে, সেই নির্বাচন হলে ওই নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান কে হবেন, সরকারের রূপরেখা কি হবে, নির্বাচন কমিশনকে কেমন করে পূনর্গঠন করতে হবে, কে হবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, প্রশাসনের রদবদল কেমন করে হবে, নির্বাচনের জন্য সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কেমন করে করবে। প্রশাসনের রদবদল করার ব্যাপারেও একমত হতে হবে, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে পূর্ন স্বাীধনতা দিতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রদবদলেরও বিষয়েও বিএনপির দাবী মেনে নিতে হবে। সেটা কেমন করে করবে এই ব্যাপারে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট ওই সূত্র জানান, সরকার আজকে বিএনপিকে কেবল সংলাপে ডাকার জন্য ডাকলো তাহলেই বিএনপি চলে যাবে এমন না। এই জন্য আলোচনার ও সংলাপের পরিবেশ তৈরি হতে হবে। আর সেটা করতে করতে হবে। আলোচনা ও সংলাপ করার আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী, শমসের মুবীন চৌধুরীসহ দলের সিনিয়র নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সুযোগ সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। তাকে গ্রেপ্তার করা হবে না সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য যাদের বিরুদ্ধে সহিসংতার দায় চাপিয়ে মামলা করা হয়েছে ওই সব মামলাও প্রত্যাহার করবে হবে। এছাড়াও সংলাপ কোন পর্যায়ে হবে সেটাও ঠিক করতে হবে। বিএনপির দাবি থাকবে আলোচনা অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ২০১৩ সালে দশম নির্বাচনের জন্য যেখানে শেষ করে গিয়েছিলেন সেখানে থেকে শুরু করতে হবে। তারানকো ও জাতিসংঘ সেইভাবে চাই্েরর সেটা হবে। আর না চাইলে তারা কোন জায়গা থেকে শুরু করতে চান সেটাও দেখতে হবে। সরকার কি চায় সেটাও দেখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে সরকার দশম নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতে চাইবে না হয়তো। সাংবিধানিক জটিলতার কথাও দেখাতে পারে। এছাড়াও আরো নানা অজুহাতও দেখাতে পারে। সেই হিসাবে সমঝোতা হলে একাদশ নির্বাচন নিয়েই আলোচনা শুরু হবে। তবে একাদশ নির্বাচন করা নিয়ে সরকার ২০১৯ সাল পর্যন্ত সংলাপও আলোচনা টেনে নিয়ে গেলে সেটা হবে না।
এই ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বলেন, ম্যাডাম সংলাপ চান। সব সময় তিন সংলাপের কথা বলে আসছেন। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। এই কারণেই আন্দোলনে যেতে হয়েছে। এখন সংকট সমাধানের সংলাপের উদ্যোগ নিতে হলে সেটা প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে। তিনি না চাইলে সংলাপ করা সম্ভব হবে না। সংকট নিরসনের জন্য উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। তাকেই সমস্যা সমাধানের জন্য চিঠি দিবেন বান কি মুন সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের ম্যাডামকে চিঠি না দিলেও কোন সমস্যা নেই। কারণ বিএনপি সব সময় সংলাপ চায়। সংকট নিরসনের জন্য যত ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বিএনপি সেটা ওয়েলকাম করবে। জাতিসংঘ মহাসচিবও জানেন যে জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিবে বিএনপি সেটাকে স্বাগত জানাবে। আমরা সেটাকে স্বাগত জানাই। প্রধানমন্ত্রী বান কি মুনের চিঠি পেয়ে যদি সংলাপের আয়োজন করতে চান বিএনপি এই ক্ষেত্রে ইতিবাচকভাবেই সারা দিবে। বান কি মুনের চিঠি সরকার পাওয়ার পর এখনও সরকারের তরফ থেকে তেমন কোন প্রস্তাব আসেনি।
তিনি বলেন, এর আগে যতবারই বান কি মুন চিঠি দিয়েছেন সেখানে তিনি ম্যাডামকেও চিঠি দিয়েছেন। দুই জনকে দেওয়া চিঠির বিষয় ও ভেতরের সব কিছুই প্রায় একই রকম থাকে। কেবল উপরের হেড পরিবর্তন হয়। আর ভেতরে ছোট খাটো শব্দ পরিবর্তন করা হয়। তিনি বলেন, বান কি মুনের চিঠির পর সরকার সংলাপের উদ্যোগ নিলে বিএনপি স্বাগত জানাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) বলেন, সরকারের উচিত হচ্ছে যত দ্রুত সংকটের সমাধান করা। সেই জন্য সংলাপের কোন বিকল্প নেই। সংলাপ করে যদি সরকার বিষয়টি সমাধান না করে তাহলে তা আরো বাড়বে। চরম আকারও ধারন করতে পারে। আমি মনে করি সরকারের যত তাড়াতড়ি শুভ বুদ্ধির উদর হবে ততোই ভাল হবে। কারণ সরকার এখন যে সব ব্যবস্থা নিচ্ছে আন্দোলন দমন করার জন্য এই ভাবে আন্দোলন দমন করা যাবে না। এটা চলতেই থাকবে। জাতিসংঘ সংলাপের কথা বার বার বলছে সরকার তাতে সারা দিচ্ছে না। আমার মনে হয় বিষয়টিকে সরকারের ইতিবাচক ভাবে নেওয়া প্রয়োজন।
বিএনপি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, সরকার সংলাপ করবে না বলছে। কিন্তু আল্টিমেটলি এক সময়ে না এক সময়ে সরকারকে সংলাপ করতেই হবে। তবে এনিয়ে দেরী না করাই ভাল। আমরা সব সময় সংলাপের পক্ষেই ছিলাম। সরকার তা করতে চায় না। এটা ঠিক না। জাতিসংঘ যেহেতু উদ্যোগ নিয়েছে এটা সময় নিয়ে হলেও হবে বলে আমরা আশাবাদী। সরকার সংলাপে রাজি হলে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হবে সেটাও ঠিক করতে হবে। সেগুলো ঠিক করতে হবে। জাতিসংঘ সংলাপের উদ্যোগ নিলে আমরা সেটাকে স্বাগত জানাবে। এরপরও সরকার সংলাপে বসতে না চাইলে তখন আর সরকারকে সংলাপে বসারও সময় দেওয়া হবে না। সরকার পতনের ডাক দেওয়া হবে। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম