শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > ৬৫ হাজার টাকায় গ্যাস সংযোগ!

৬৫ হাজার টাকায় গ্যাস সংযোগ!

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন সাঈদনগর সোসাইটির আড়াইশ’ আবাসিক প্লটে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কাজ। আর এই গ্যাস সংযোগ দিতে প্রতি প্লটের মালিকেরা দিয়েছেন ৬৫ হাজার করে টাকা।

সরকারিভাবে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকলেও তিতাসের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে গ্যাসের বৈধ সংযোগের পাইপ থেকে লাইন টেনে এই অবৈধ কাজ করা হচ্ছে।

তিতাসের প্রকৌশলীরা না আসার কারণে স্থানীয় মিস্ত্রিরা গ্যাসের লাইনগুলো অনেক জায়গায় মাটির উপর দিয়ে নিয়েছে। আর এই অবৈধ লাইনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। যেকোনো মুহূর্তে পাইপ লাইন ফেটে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে ।

রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বাঁশতলা থেকে হাতের বামপাশের রাস্তা দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার গেলেই সাঈদনগর সোসাইটি। প্রায় আড়াইশ’ প্লট রয়েছে এখানে। কেউ নতুন বাড়ি তৈরি করে ফেলেছেন, কারও বাড়ি তৈরি হচ্ছে আবার কেউ ফেলে রেখেছেন নিজেদের প্লট।

এখানেই কিছু প্লট মালিক একত্র হয়ে একটি সোসাইটি গঠন করেছেন। যার নাম সাঈদনগর সোসাইটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার অবৈধ গ্যাস সংযোগকে বৈধ করার ঘোষণা দিলে তৎপর হয়ে ওঠে চক্রটি। তিতাস বাড্ডা জোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাসাজশে প্লটের মালিকদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার করে টাকা ওঠানো হয়। প্রায় আড়াইশ’ প্লটের মালিকদের কাছ থেকে এভাবে সংগ্রহ করা হয় এককোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এই টাকার একটি অংশ দিয়ে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি প্রশাসন ও তিতাসের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে। এরপর জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বৈধ গ্যাস সংযোগের লাইন থেকে অবৈধ লাইন টানা শুরু করে তারা। মাঝে মধ্যে কাজ বন্ধ রাখে আবার মাঝে মধ্যেই লাইন টেনে বেশ কিছু বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে এভাবে। সংযোগ পাওয়া গ্যাসে চলছে রান্নাবান্নার কাজ।

জানা যায়, গ্যাস লাইন টানতে তারা তিতাসের কোনো প্রকৌশলীকে পাননি। এ কারণে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি দিয়ে লাইন টেনেছেন। দ্রুত লাইন টানার কারণে তারা গ্যাসের পাইপ লাইন মাটির নিচেও দিতে পারেননি। রাস্তার উপর লাইন থাকায় খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে লাইনের উপর চাপ পড়ামাত্রই ফেটে আগুন ধরার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, “আমি যতদূর জানি, এভাবে যে গ্যাস সংযোগ নেওয়া হচ্ছে তা অবৈধ। সে কারণে আমি তাদের নিষেধও করেছিলাম। কিন্ত তারা আমার কথা শোনেনি।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য হারমিন বলেন, “আমি শুরু থেকে এ অবৈধ কাজের বিরোধিতা করে আসছি। কিন্তু তারা কাউকে না মেনে অবৈধ গ্যাস সংযোগের কাজ চালিয়ে আসছেন।”

তিনি জানান, তারা যেভাবে গ্যাস সংযোগের লাইন টেনেছেন, তাতে যেকোনো মুহূর্তে ওই পাইপে চাপ পড়ে ফেটে যেতে পারে। আর ফাটলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে।

ইউপি সদস্য আরও বলেন, “তারা যেভাবে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিচ্ছে তাতে দেশের সম্পদ চুরি করা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তিনি তিতাসের প্রতি অনুরোধ জানান।

স্থানীয় সমাজসেবী লোকমান হোসেন বলেন, “আমরা মহল্লার সবাই এই রাষ্ট্রবিরোধী কাজে বিরোধিতা করেছি। এ কাজে তিতাসের এক শ্রেণীর লোকজন জড়িত। তা না হলে এতবড় কাজ তারা কীভাবে করতে পারে। যেখানে গ্যাস সংযোগের কোনো অনুমতিই নেই, সেখানে কীভাবে প্রকাশ্যে তারা লাইন টানতে পারে।”

তিনি তিতাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টিতে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানান।

তবে এ বিষয়ে সোসাইটির সভাপতি মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযেগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর আর কোনো কথা বলতে চাননি।

তবে তিনি সংক্ষেপে বলেন, “এ কাজের জবাবদিহিতা কর্তৃপক্ষের কাছে দেবো। আর কাউকে না।”

এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেদোয়ান আহমেদ বলেন, “যদি কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে, তবে তা অবৈধ। কোনোভাবেই নতুন করে গ্যাস সংযোগ নিতে পারে না। এ বিষয়ে অবশ্যই সরেজিমন তদন্ত হবে।”