শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > ৯৫ ভাগ প্রাইভেট মেডিক্যাল শিক্ষার্থী পাচ্ছে না কলেজ

৯৫ ভাগ প্রাইভেট মেডিক্যাল শিক্ষার্থী পাচ্ছে না কলেজ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারিভাবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করতে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর মধ্যে ৯৫ ভাগই ভর্তি সম্পন্ন করতে পারেনি। এদের মধ্যে কোনো কোনো কলেজ স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানিয়েছে যে, তারা ছাত্র-ছাত্রী পাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (মেডিক্যাল এডুকেশন) অধ্যাপক ডা. এম এ হান্নান বলেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে অধিদফতরকে অভিহিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ভর্তি সম্পন্ন করার চিঠি একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকেও পাননি। তবে অনেকেই ছাত্র-ছাত্রী পাননি বলে জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ডঃ বিমল কান্তি গুহ একই মত পোষণ করে বলেছেন যে, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হবে। ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৬৬ হাজার ৪৪৮ জন অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৫৩ হাজার ৪৩১ জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে একই প্রশ্নপত্রে ২০১০ সাল থেকে হয়ে আসছে। সরকারি ২৩টি মেডিক্যাল কলেজের ২৮৬২ আসনে ভর্তি এক মাসে চূড়ান্ত করা হয়েছে। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ও মান নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর-মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। মহাজোট সরকার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণার কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরো ১১ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং একটি ডেন্টাল কলেজ অনুমোদন দেয়। ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় ২৩টি সরকারি ও বেসরকারি ৫৪টি মেডিক্যাল কলেজে আসন অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল। পরে আরো ১১টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫টি। ১১টির মধ্যে ৫টি ঢাকায় ও ৬টি ঢাকার বাইরে রয়েছে। এই ১১টি কলেজ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করতে শুরু করেছে। এমন তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতর-এর শীর্ষ কর্মকর্তারা পেয়েছেন। এ ১১টির অনুমোদন পেতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এগুলোর গুণগত মান, নিজস্ব ভবন, হাসপাতাল ভবন, শিক্ষক ও শিক্ষার মান এবং পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আলোচিত এক ঠিকাদারের মাধ্যমে মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে বাণিজ্য হয়েছে। তিনি নিজেও একটির মালিক। ৫০ ও এর ঊর্ধে আসনের মেডিক্যাল কলেজের জন্য ২৫০ বেডের হাসপাতাল এবং একশ আসনের মেডিক্যাল কলেজের জন্য ৫শ বেডের হাসপাতাল থাকার কথা। একশ আসনের মেডিক্যালগুলোর গুণগত মান উন্নত হলেও ৫০ আসনের মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে ৯০ ভাগের শিক্ষার মান সর্বনিম্ন বলে অধিদফতরের কর্মকর্তারা স্বীকার করেন। এসব মেডিক্যালে শিক্ষকের অভাব চরমে। মেডিক্যাল কলেজ শুধু কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী। তাদের কাছে মানবসেবা মূল্যহীন। শীঘ্র এসব নিম্নমানের মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার সিফায়েত উল্লাহ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ডাক্তার তৈরি হবে রোগীকে বাঁচিয়ে তোলার কিংবা সুস্থ করার জন্য। এমন অব্যবস্থাপনার মধ্যে ডাক্তার তৈরি হলে সেখানে মানুষ মারার ডাক্তার হবে। এটা কোন অবস্থায় হতে দেয়া হবে না।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ফি ৮ লাখ থেকে ১২ লাখ এবং মাসিক বেতন তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ও মাসিক ফি নির্ধারণ করার চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। ঐ সময় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ মালিকপক্ষ ও একজন নীতিনির্ধারক আপত্তির মুখে আপত্তির মুখে ঐ প্রস্তাব স্থগিত রাখা হয়। মুক্ত বাজার অর্থনীতির স্লোগান দিয়ে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ও মাসিক বেতন স্ব-স্ব মালিকের ইচ্ছামত আদায় করা হচ্ছে। এ বছর নিম্নে ভর্তির ফি ১৫ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা এবং মাসিক বেতন ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে কিছুসংখ্যক শিল্পপতি ও ধনাঢ্য পরিবারের ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবার কিংবা চাকরিজীবী পরিবারের পক্ষে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের এ ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। এমন দাবি করেছেন অভিভাবকগণ। এমবিবিএস পাস পর্যন্ত কমপক্ষে কোটি টাকা ব্যয় হবে। এমন হিসাব-নিকাশ করছেন অভিভাবকগণ। অধিদফতরসূত্রে বলা হয়, উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ৯৫ ভাগই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত, চাকরিজীবী, শিক্ষক ও মোটামুটি ব্যবসায়ী শ্রেণি পরিবারের সন্তান। এছাড়া রয়েছেন গ্রামাঞ্চলের কৃষকের সন্তান। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ও মাসিক বেতন বহন করা এসব অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ মালিকপক্ষ ভর্তির জন্য ছাত্র-ছাত্রী পাচ্ছেন না। জনস্বার্থে ভর্তি ও মাসিক ফিসহ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। শুধু ভর্তি ও মাসিক বেতন নির্ধারণ ব্যতীত একটি নীতি রয়েছে, যা মেডিক্যাল শিক্ষার নামে বাণিজ্য করার সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তারা দ্রুত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার একটি সুষ্ঠু ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ মালিকপক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সর্বনিম্ন স্কোর ১২০ এর স্থলে ১০০ করা হলে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির হার বেড়ে যাবে। অন্যথায় পার্শ্ববর্তী দেশ কিংবা বিদেশে তারা ভর্তি হবে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাবে। অপরদিকে সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক মন্দাভাব দেখা দেয়ায় এর প্রভাব বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়েছে বলে তারা দাবি করেন।

ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার ও সাধারণ সম্পাদক ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম গতকাল এক বিবৃতিতে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফির কারণে ভর্তি হতে পারছে না বলে দাবি করেন। এছাড়া বেশিরভাগ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে অবকাঠামোগত চরম দুর্বলতা, প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকা, হাসপাতাল না থাকা, রোগীর স্বল্পতা, ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিসহ নানাবিধ কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ বলে তারা দাবি করেন।