রবিবার , ২৬শে মে, ২০২৪ , ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ , ১৭ই জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > খেলা > অযতে ধ্বংসের পথে স্টেডিয়াম!

অযতে ধ্বংসের পথে স্টেডিয়াম!

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥ ‘এত সুন্দর স্টেডিয়াম পানিতে নষ্ট হতে পারে না। আমিতো এমন সমস্যার কথা আগে জানতাম না। যে ভাবেই হোক এই সমস্যা দূর করা হবে। আমি এনএসসি হোক, সিটি করপোরেশন হোক আর যে কোন মন্ত্রণালয়ই হোক তাদের সঙ্গে কথা বলবো। আর যত দ্রুত সম্ভব ফতুল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান করবো।’ গতকাল ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম পরিদর্শনে এসে বিসিবি’র সভাপতি নাজমুল হাসান স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে এই কথা বলেন। বিশ্বকাপ ২০১৪ সালের বিকল্প ভেন্যু হিসেবে সংস্কার করা হচ্ছে ফতুল্লা স্টেডিয়াম। কিন্তু স্টেডিয়ামটা নির্মাণের পর থেকেই ত্রুটির কারণে পানিতে তলিয়ে যেত। এখনও সেই সমস্যার সমাধান হয়নি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও এই স্টেডিয়ামের সংস্কার করা হয় কিন্তু ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোন উন্নতি করা হয়নি। এই বিষয়ে স্টেডিয়ামের কিউরেটর শফিউল আলম বেলাল বলেন, ‘যতই কাজ করা হোক যদি স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি না করা হয় স্টেডিয়াম নষ্ট হবেই।’
২০০৬ সালে ২৩শে মার্চ কেনিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে ফতুল্লা স্টেডিয়াম যাত্রা শুরু করে। এরপর একমাত্র টেস্ট অনুষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালের এপ্রিলে অস্টেলিয়ার বিপক্ষে। আর শেষ ওয়ানডেটি অনুষ্ঠিত হয় ওই বছর ২৮শে এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এরপর গত ৭ বছরে আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়নি। স্টেডিয়ামটি নির্মাণের পর থেকেই অভিযোগ ওঠে রাস্তার লেভেল থেকে ৪ ফুট মাটি কম ফেলায়। ফলে বৃষ্টির পানি মাঠে প্রবেশ করে অনায়াসে। সেই সমস্যার সমাধান করে এ বছরই মাঠটিকে আরও উঁচু করা হয়। সেই সঙ্গে নির্মাণ করা হয় মূল স্টেডিয়ামের বাইরে আউটার স্টেডিয়ামও। কিন্তু অতিসম্প্রতি আউটার স্টেডিয়ামটি বৃষ্টির পানিতে প্রায় আড়াই ফুট পানির নিচে চলে যায়। কারণ এখানে যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা আছে তাতে আশপাশের এলাকার কলকারখানরে কেমিক্যালযুক্ত পানি ও ময়লা পানি স্টেডিয়ামে এসে প্রবেশ করে। পরে অনেক কষ্টে সেই পানি মাঠ থেকে সরানো হয়।
এই বিষয়ে কিউরেটর বলেন, ‘মূল মাঠ উঁচু করা হয়েছে। এতে সমস্যার একটা মাত্র সমাধান হয়েছে। কিন্তু বাইরের পানি ভিতরে এসে জমে থাকলে তা মূল মাঠের ভীষণ ক্ষতি করবে। এছাড়া আউটার স্টেডিয়ামটাও চলে যাবে পানির নিচে। যদি এই ড্রেনেজ ব্যবস্থা নতুন ভাবে করা না হয় তাহলে কোন ভাবে মাঠকে বেশি দিন ভাল রাখা যাবে না।’
এর আগে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় স্টেডিয়ামটি ছিল সেনাবাহিনীর দখলে। সেই সময় স্টেডিয়ামটির এই ড্রেনেজ সমস্যা তারা স্থায়ীভাবে সমাধান করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে আবারও কে বা কারা স্টেডিয়ামের ড্রেনেজের সঙ্গে বাইরের এলারকার ড্রেনের লাইনটির সংযোগ করে দেয়। এতে আবারও জমতে শুরু করে পানি। এ সব কিছু শুনে বিসিবির এডহক কমিটির সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘আসলে আমি এখানে এসে এবারই প্রথম জানলাম আসল সমস্যাটা। আসলে এনএসসি এই স্টেডিয়ামের কাজ করছে। কিন্তু বিষয় হলো আমরা এনএসসির কোন লোকই খুঁজে পাইনা যে তাদের এই সব সমস্যার কথাগুলো বলা যাবে। আমরা এখন এই বিষয়টা নিয়ে বসবো।’ অন্যদিকে স্টেডিয়াম ঘুরে দেখা যায় এখনও স্টেডিয়ামের ভিতরে কাজ চলছে। তবে বহুদিন খেলা না হওয়ায় অযতœ আর অবহেলায় সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে ক্রিকেটারদের ড্রেসিং রুমে গিয়ে দেখা যায় সেখান দিয়ে নিয়মিত প্রবেশ করে বৃষ্টির পানি। আর সেই পানিতে স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুমের কার্পেটেরও একটি অংশ প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। তবে স্টেডিয়ামের কাজ নিয়ে কিউরেটর বলেছেন আশার কথা। তিনি বলেন, ‘সব কিছুই নতুন করে করা হচ্ছে। আর যত লোকবল নিয়ে করা হচ্ছে তাতে খুব বেশি দিন লাগবে না এই স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করতে।’
ফতুল্লাই হতে পারে মূল ভেন্যু
সিলেট ও কক্সবাজারের নতুন স্টেডিয়ামের কাজ জোরেসোরেই চলছে। এখানেই বসবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। কিন্তু শঙ্কাও রয়েছে শেষ পর্যন্ত কাজ শেষ হবে তো! তা না হয় তবে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামেই হতে পারে সিলেট কিংবা কক্সবাজার স্টেডিয়ামের খেলা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমি ফতুল্লার কাজের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট। আর সে হিসেবে বলতে পারি নারায়ণগঞ্জবাসীর বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। তবে আমরা এ স্টেডিয়ামকে বিকল্প ভেন্যু হিসেবেই নিয়েছি। আইসিসিকেও বিকল্প ভেন্যু হিসেবে দেখানো হবে। তবে সিলেট কিংবা কক্সবাজার স্টেডিয়ামের কোনটার কাজ শেষ না হলে ফতুল্লায়ই হবে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো।’ গতকাল সকাল ১১টায় নাজমুল হাসানের ফতুল্লা স্টেডিয়াম পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছান দুপুর আড়াইটা বাজে। আর দেরির কারণে বাতিল করা হয় বিকেএসপির স্টেডিয়াম পরিদর্শনও। সেই সময় তার সঙ্গে ছিলেন এডহক কমিটির সদস্য লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ইসমাইল হায়দার মল্লিক ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন।
আইসিসির চাহিদা অনুযায়ী নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন আরও দুটি ড্রেসিং রুম। কাজ দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়াও মাঠ দেখেন ও মিডিয়া সেন্টারের খোঁজ খবরও তিনি নেন। এরপরই সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এখানে যে গতিতে কাজ চলছে সবকিছু শেষ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এই মাঠে ২০০৬ সালের পর আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচ হয়নি। তাই এই মাঠের জন্য আবারও হয়তো অ্যাক্রিডিটিশেন নিতে হতে পারে। তাবে যেহেতু আন্তর্জাতিক খেলা হয়েছে সেহেতু তা পেতে সমস্যা হবে না। তবে এই স্টেডিয়ামে যদি মূল ম্যাচ নাও হয় প্র্যাকটিস ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে।’ অন্যদিকে সিলেট স্টেডিয়ামের কাজ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আসলে এই স্টেডিয়ামের কাজ যত আগে শুরু করার কথা ছিল তা এনএসসি করতে পারেনি। তাই এখন তড়িঘড়ি করে কাজ হচ্ছে। তবে শঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়। তাই আমরা বিকল্প হিসেবে এই মাঠকে প্রস্তুত রাখছিল।