আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকি এমনভাবে মোকাবেলা করা হবে যা বিশ্ব এর আগে কখনো দেখেনি। আর উত্তর কোরিয়ার হুমকি, তারা প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন দ্বীপ গুয়াম দ্বীপে হামলা চালাবে, যেখানে প্রায় এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ বসবাস করে। এ সবকিছুই ঘটছে যখন উত্তর কোরিয়া এমন একপ্রকার পারমানবিক বোমা তৈরিতে সফল হয়েছে, যে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রে সংযোজন করা যাবে। ফলে পুরো বিষয়টি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্রদের। একটি পুরাদস্তুর যুদ্ধ বেধে য্ওায়া সম্ভাবনা কতটা? কতটা বিপদ অপেক্ষা করছে সামনে? তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নিয়ে এখনি ততটা আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। তারা কিছু যুক্তিও তুলে ধরেছেন-
১. কোনো পক্ষই যুদ্ধ চাইছে না। কারণ কোরিয়া উপদ্বীপে একটি যুদ্ধ কারো জন্যই সুবিধা আনবে না। উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতাসীনদের প্রধান লক্ষই হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি যুদ্ধ বেধে গেলে ক্ষমতার আসন নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। বিবিসির যুদ্ধ বিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন মার্কুস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হলে তা আরো বড় আকারে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে তা উত্তর কোরিয়ার জন্য হবে আত্মঘাতী। আবার ঠিক এই কারণে তড়িঘড়ি পারমানবিক অস্ত্রের মালিক হতে চাইছে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জঙ-উন। কারণ আর যাই হোক, তিনি লিবিয়ার গাদ্দাফি বা ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের ভাগ্য বরণ করতে চান না। আবার যুক্তরাষ্ট্রও সহজে উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালাবে না। কারণ তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া বা জাপানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যুদ্ধে অনেক প্রাণহানি ঘটবে, বিশেষ করে সাধারণ আমেরিকান আর সৈনিকদের। সর্বোপরি, ওয়াশিংটন এমন কোন ঝুঁকিতে যেতে চায়না, যার ফলে আমেরিকান ভূখণ্ডে কোন পারমানবিক হামলা হতে পারে।
২. শুধু কি কথার লড়াই? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে যেভাবে হুমকি দিয়েছেন, সেটা একজন প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যতিক্রম। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র পুরোদমে যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। মার্কিন একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, উত্তেজক কথাবার্তা বাড়ছে মানে এই নয় যে, আমাদের অবস্থানও বদলাচ্ছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, দুই দফা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর, জাতিসংঘের মাধ্যমে অবরোধ আরোপের সেই পুরনো পথেই পথেই হেঁটেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখনো কূটনীতিকরা আশা করছেন, রাশিয়া আর চীনের সহায়তায় উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনা যাবে। যদিও কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, এরকম উত্তেজক পরিস্থিতিতে কোন ভুল বোঝাবুঝি থেকেও একটি যুদ্ধ বেধে যেতে পারে।
৩. আগেও এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিজে ক্রাউলে যেমনটা বলেছেন, ১৯৯৪ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র একবার সশস্ত্র যুদ্ধের কাছাকাছি চলে এসেছিল। তখন পারমানবিক কমপ্লেক্সে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষককে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল দেশটি। তবে কূটনীতি দিয়েই তা সমাধান করা হয়েছে। এরপর অনেক বার যুক্তরাষ্ট্র, জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়ায় হামলার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু সেগুলো কখনো বাস্তব হয়নি। আর এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে পাল্টা হামলার হুমকি দিচ্ছেন, তাও একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আচরণের পক্ষে যুক্তিসঙ্গত নয়। এটাই যা একটু আশংকার যে, তিনি হঠাৎ করে কোন কাণ্ড ঘটিয়ে বসবেন কিনা। তবে তার এ ধরণের কোন কাজে নিশ্চয়ই তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বাধা দেবেন। আর তাই ট্রাম্পের এরকম ব্যতিক্রমী আচরণের কারণে করো উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই বলেই মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। আর তাই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াও আগাম একটি যুদ্ধের আশঙ্কায় খুব একটা উদ্বিগ্ন নয়। একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলছেন, এখনো পরিস্থিতি সঙ্কট সময়ে পড়েনি। আশা করা হচ্ছে, শান্তিপূর্ণভাবেই বিষয়টির সমাধান হবে। এটাই হচ্ছে আশাবাদের বিষয়।