স্টাফ রিপোর্টার ॥ দৃশ্যটি হয়তো প্রতীকী। এক সন্তানের তার পিতৃভূমে ফেরার গল্প। নিজ স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে এই প্রথম যখন রংপুরের ফতেহপুরে পিতৃগৃহে পা রাখলেন সজীব ওয়াজেদ জয় তখন তার জীবনও কি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়নি? দীর্ঘদিন থেকে মা শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়ে এলেও তার রাজনীতিতে আসা না আসা নিয়ে ছিল অস্পষ্টতা। তবে গত সপ্তাহে রহস্যের চাদর অনেকটাই উঠে যায়। গতকাল মুজিব কোট আর সাদা পাঞ্জাবি পরা জয় যেন আনুষ্ঠানিকভাবেই প্রবেশ করলেন রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ একে জয়ের রাজনীতিতে অভিষেক হিসেবেই অভিহিত করেছেন।
রাজনীতিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের যখন আগমনী বার্তা শোনা যাচ্ছে তখন অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। সেটি অবশ্য প্রত্যাবর্তনের কাহিনী। তারেক রহমানের লন্ডন ঘোষণা একটি বিষয় খোলাসা করে দিয়েছে যতই কঠিন হোক রাজনীতির ময়দান তিনি ছাড়ছেন না। সাত দফা বক্তব্যে দেশ আর দেশের মানুষ নিয়ে তিনি তার ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। যদিও অতীত নিয়ে কোন অনুশোচনা প্রকাশ না করায় ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম তার সমালোচনাও করেছেন। এটা তো স্বীকার করতেই হবে, কখনও কখনও মা প্রার্থনা মানুষের মহত্ত্বেরই প্রকাশ ঘটায়।
রাজতন্ত্র অথবা গণতন্ত্র-উত্তরাধিকারের রাজনীতির কাহিনীর তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। উপমহাদেশের জন্য তা আরও বেশি পরিমাণে সত্য। ভারতে জওয়াহর লাল নেহরু, পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টো আর শ্রীলঙ্কায় চলছে বন্দরনায়েক পরিবারের রাজনীতি। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বঙ্গবন্ধু আর জিয়া পরিবারের রাজনীতি চলছে এখানে। যদিও এটা সত্য, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারওই রাজনীতিতে অভিষেক ‘স্বাভাবিক’ নিয়মে হয়নি। ১৫ই আগস্ট জাতির ইতিহাসের এক শোকাবহ দিনে নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে কাটানোর পর ১৯৮১ সালের ১৭ই মে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। যোগ দেন রাজনীতিতে। আর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পটভূমিতে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া। শূন্যতা পূরণে দুই নেত্রীর রাজনীতিতে আসা। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে মাঠের অভিজ্ঞতাও অর্জন করেন তারা। ২৩শে জুলাই যুবলীগের সমাবেশে এক ইফতার বক্তব্যের মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ যখন রাজনীতির পথে পা রাখলেন তখন পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। পূর্ণতার মধ্যেই স্থান খুঁজে নেয়ার চ্যালেঞ্জ তার সামনে। যদিও প্রথম বক্তব্যে জয় উল্টো চ্যালেঞ্জ করেছেন তার রাজনৈতিক প্রতিপকেই। ঘোষণার ঢঙেই তিনি বলেছেন, আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ মতায় ফিরবে। বিএনপির প্রোপাগান্ডা মোকাবিলা করার জন্যই আমি এসেছি। তার এ বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় তৈরি হয়। খোদ মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর-ও এর মধ্যে ষড়যন্ত্র দেখছেন। তার এ বক্তব্য পরিষ্কার করতে এগিয়ে আসতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফকে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অবশ্য বলেছেন, তার কাছে কোন তথ্য নেই। তবে তিনি মতার গন্ধ পাচ্ছেন। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হোয়াইট ওয়াশ হওয়ার পর ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগকে আলোচনায় নিয়ে আসাতেই আপাত জয়ের সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। রংপুর-৬ আসনে সামনের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে। একদিক থেকে জয় অবশ্য সৌভাগ্যবান। সংবাদমাধ্যমের কাঁচির নিচে ঠিক সে অর্থে কখনওই তাকে পড়তে হয়নি। তবে রাজনীতিবিদ জয়ের সামনের দিনগুলো নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জিং। প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা জয়ের মাঝে ‘মুজিব ভাই’কে দেখতে চাওয়ার আকাঙ্া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, জয়কেই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনীতিতে তিনি কি ভূমিকায় থাকবেন? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র? স্বাধীন বাংলাদেশের সমবয়সী জয় পড়ালেখা আর ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ই কাটিয়েছেন বিদেশে। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালের ২৬শে অক্টোবর মার্কিন নাগরিক ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের একমাত্র কন্যা সোফি। জয়ের বিয়েকে ঘিরে বিরোধীদের প্রচার-অপপ্রচারের জবাব সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিএনপি এটাও জানে না, আমার ছেলের বউ ইহুদি না, খ্রিস্টান। আর খ্রিস্টান হলো আমাদের আহলে কিতাব।’ তবে ইহুদিরাও আহলে কিতাব। যা হোক আইটি বিশেষজ্ঞ জয় রাজনীতিতে কেমন করেন তার জন্য আমাদের অপোই করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় এসে সজীব ওয়াজেদ জয় যেদিন তার রাজনৈতিক ভাবনা প্রকাশ করলেন ঠিক একদিন পর লন্ডনে এমনই এক ইফতার পার্টিতে রাজনীতি নিয়ে কথা বললেন তারেক রহমান। গত পাঁচ বছরের লন্ডন জীবনে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলেন তিনি। চিকিৎসার জন্যই ২০০৮ সালের শেষ দিকে বৃটেন গিয়েছিলেন তারেক রহমান। তার সঙ্গী হয়েছিলেন স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান আর কন্যা। তারেক রহমানের রাজনীতিতে অভিষেক এক যুগেরও বেশি আগে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির কৌশল নির্ধারণে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। তৃণমূলের সঙ্গে গড়ে তোলেন সংযোগ। নির্বাচনের পর গ্রামে গ্রামে তার ইউনিয়ন সম্মেলনে উপস্থিতি তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সবার। কিন্তু একসময় তার বিরুদ্ধে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক তার রাজনীতির সমালোচনা মুখর হয়ে ওঠেন অনেকে। মতার দ্বিতীয় কেন্দ্র হিসেবে অনেকে অভিহিত করেন হাওয়া ভবনকে। দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে, কখনও কখনও মিডিয়া তারেক রহমানের প্রতি নির্মম ছিল। এক-এগারোর ঝড় তার পুরো পরিবারকেই তছনছ করে দেয়। মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ডে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকে। এক পর্যায়ে জরুরি জমানার শেষ দিকে লন্ডনে চলে যাওয়ার পর তারেক রহমান রাজনীতি থেকে হয়ে পড়েন অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তবে তার অনুপস্থিতিতেই দলীয় কাউন্সিলে তাকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। সামপ্রতিক দিনগুলোতে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়েও আলোচনা হয় অনেক। এমনই পটভূমিতে আবারও রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন ঘটছে তারেক রহমানের। তবে পর্যবেকরা মনে করছেন, মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। রাজনীতিবিদদের ভুল হয় আরও অনেক বেশি। ভুল স্বীকার না করলে মানুষ সামনের দিকে হাঁটার পথ পায় না।
তিন দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির মূল চরিত্র শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া। ক্রমশ তাদের ভূমিকাতেই দেখা যাবে তাদের দুই উত্তরাধিকারকে। বাংলাদেশের পেছনে হিংসা, হানাহানি আর সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। শিকড়ে ফেরা আর প্রত্যাবর্তন করা দুই রাজনীতিক আমাদের ইতিহাস বদলাতে পারেন কিনা তা-ই এখন দেখার বিষয়।
‘মুই ফির আসিম’
(পীরগঞ্জ) রংপুর থেকে জানান, রাজনীতির ময়দানে পা রাখলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। জন্মস্থানের মাটিতে প্রথম কোন রাজনৈতিক জনসভায় বক্তব্য রাখলেন তিনি। নিজ এলাকার মানুষের প থেকে জোর দাবি তোলা হয়েছিল আগামী নির্বাচনে যাতে পীরগঞ্জে দলীয় প্রার্থী হন জয়। কিন্তু বক্তব্যে এ বিষয়ে কোন ইঙ্গিত দেননি তিনি। সাদা পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোট পরা জয় সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন হাত নাড়ছিলেন পুরো সমাবেশ দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানায় তাকে। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জয়ের স্ত্রী ক্রিস্টিনাও পাশে ছিলেন। স্ত্রীকে নিয়ে জয় এই প্রথম তার পিতৃভিটায় গেলেন। জনসভায় স্থানীয় ভাষায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কথা দিয়েছিলাম আবার আসবো তাই মুই ফির আসিম। তিনি তার পৈতৃক ভিটা রংপুর পীরগঞ্জের জনগণের কাছে ওয়াদা চেয়ে মহাজোটের পে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পে ভোট দিলে দেশে বিদ্যুৎ আসবে, ব্যাপক উন্নয়ন হবে। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী। গত সাড়ে ৪ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। অথচ বিগত বিএনপি সরকারের আমলে দেশে উন্নয়ন হয়নি। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল ছিল অবহেলিত। তারা রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলের কথা ভুলে গিয়েছিল। আর সেই কারণে এ অঞ্চলে অভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ফলে প্রতি বছর মঙ্গা দেখা দেয়। মঙ্গার কারণে না খেয়ে অনেকে মারা যায়। আওয়ামী লীগ সরকার মতায় আসার পরই এ অঞ্চলের দিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে, দূর হয়েছে মঙ্গা। মানুষজন এখন খেয়েপরে শান্তিতে দিন পার করছে। তিনি এলাকাবাসীকে কথা দিয়ে বলেন, আমরা মতায় এলে রংপুর- পীরগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখবো। বক্তব্যের শেষদিকে তিনি পীরগঞ্জবাসীকে আশ্বস্ত করে আঞ্চলিক ভাষায় আবারও বলেন ‘মুই ফির আসিম’। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি রংপুর টাউন হলে আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রাথমিক সদস্যপদ দেয়া হয়। সেই থেকে এই প্রথম বারের মতো তিনি তার পৈতৃক ভিটায় মায়ের সফরসঙ্গী হয়ে জনসভায় বক্তব্য দেন।
জয়-ক্রিস্টিনাকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বরণ: রংপুরের সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার স্ত্রী ক্রিস্টিনাকে বরণ করে নিতে পারিবারিকভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন আত্মীয়-স্বজনরা। তারা গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, রিকশা-ভ্যানের আয়োজন করলেও সেগুলোতে না চড়ে হেলিপ্যাড থেকে নেমে বধূকে নিয়ে হেঁটে জয় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তার আত্মীয়-স্বজন সহ পরিবারের সকল সদস্য ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে পুত্র ও পুত্রবধূকে অভিনন্দন জানিয়ে বরণ করেন।
দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। মহাজোট সরকার মতায় এলে দেশে অভাব-অনটন থাকবে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে দেশ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরাই সঠিক উন্নয়ন চাই, আর তাই আগামী নির্বাচনের জন্য ভোট প্রার্থনা করে বলেন, জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে আওয়ামী লীগ মহাজোট সরকারকে ভোট দিয়েছিল সরকার সে আশা পূরণ করে চলেছে। এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আগামীতে মতায় এলে অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা হবে। গতকাল বিকালে পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহারুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল মান্নান এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায়, এডভোকেট আফজাল, ড. সিদ্দিকুর রহমান, মাহমুদুর রহমান রিপন, সাইফুল ইসলাম শিখর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রেজাউল করিম রাজু প্রমুখ। রংপুর-দিনাজপুর সড়কে কাঁচদহ ঘাটে করতোয়া নদীর উপর ড. ওয়াজেদ মিয়া সেতু সহ বিভিন্ন স্থাপনা উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলে শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী এলাকা রংপুর-পীরগঞ্জে সপরিবারে যান। তার আগমনকে কেন্দ্র করে গোটা উপজেলা জুড়ে ফেস্টুন, ব্যানার ও তোরণ দিয়ে সাজানো হয়। নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল বিভাগের ৮ জেলার আড়াই হাজার পুলিশ সদস্য। এলাকার গৃহবধূ শেখ হাসিনাকে বরণসহ দেখার জন্য সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত হয়ে পড়ে উপজেলা চত্বর। এক পর্যায়ে লোকারণ্য হয়ে পড়ে জনসভাস্থল। লাধিক জনগণের উপস্থিতিতে জনসভা শুরু হয়। ১২টা ২৫ মিনিটে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে লালদিঘি ফতেহপুর তৈরিকৃত হেলিপ্যাডে নেমে বাড়িতে যান। সেখানে তার স্বামী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াসহ শ্বশুর-শাশুড়ির কবর জিয়ারত ও দোয়া করে পরিবারের সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর তিনি ২টা ২৭ মিনিটে জনসভাস্থলে মঞ্চের উদ্দেশে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, আমরা জনগণের কাছে যে ওয়াদা করেছিলাম সে ওয়াদা পূরণ করে চলেছি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করেছি। তিনি রংপুরবাসীর উদ্দেশে বলেন, আপনাদেরকে কথা দিয়েছিলাম মতায় গেলে রংপুরকে বিভাগ সহ উন্নয়ন করা হবে। সেই কথা রেখেছি। রংপুরকে বিভাগ, সিটি করপোরেশন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারি ও বার্ন ইউনিট চালু, তিস্তা সেতু, ওয়াজেদ মিয়া সেতু সহ ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মতায় আসার পর বিদ্যুৎ সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করেছি। আমরা আমাদের উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছি। আগামীতে মতায় এলে প্রতিটি গ্রামের আনাচে কানাচে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, কথা মোতাবেক বেকারদের কর্মসংস্থানের ল্েয কর্মসংস্থান ব্যাংক সহ বিভিন্নভাবে যুবকদের সহায়তা করা হচ্ছে। মেয়েদের বিনামূল্যে শিার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল গঠন করে আগামীতে ছাত্রদের বৃত্তি দেয়া হবে। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিগত আমলে তারা মতায় থেকে ব্যাপক লুটপাট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ও জঙ্গিবাজ রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল। হাওয়া ভবনের নিয়ন্ত্রণে দেশকে পরিচালনা করতো। দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তারা মতায় এলে আবারও লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাজদের রাজত্ব কায়েম হবে। দ্রব্যমূল্য ক্রয়মতার বাইরে চলে যাবে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে সাধারণ মানুষজন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি হেফাজতে ইসলামের নামে একটি সংগঠনকে নিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছে। হেফাজতে ইসলাম মসজিদে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে কোরআন শরীফকে পুড়িয়ে অবমাননা করে। এরা দেশ, জাতি ও ধর্মের শত্রু। এদের বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পীরগঞ্জ সফরে এসে জনসভা শুরুর আগে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মঞ্চের পাশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে একযোগে সকল উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুর-দিনাজপুর সড়কে কাঁচদহ ঘাটে করতোয়া নদীর উপর ড. ওয়াজেদ মিয়া সেতু, পীরগঞ্জ উপজেলার নবনির্মিত জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, অফিসার্স ডরমিটরি ভবন উদ্বোধন এবং সার্কিট হাউজ ভবন, বিভাগীয় কমিশনার কমপ্লেক্স, পীরগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স, মেরিন একাডেমী ও টেক্সটাইল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, কারমাইকেল কলেজ ও রংপুর সরকারি কলেজের শিার্থীদের ব্যবহারের জন্য ২টি বিআরটিসি ডাবল ডেকার বাস হস্তান্তরসহ পীরগঞ্জ পৌরসভা কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। এসব উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তেমন কোন প্রতিশ্রুতি দেননি। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও তাদের বক্তব্যে উন্নয়নের তেমন কোন দাবির বিষয় তুলে ধরেননি।