ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন- জয়ের চেয়ে এগিয়ে তারেক

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ রাজনীতিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের চেয়ে এগিয়ে তারেক রহমান। জয়কে রাজনীতিতে নবিশ বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু তারেক রহমানের কার্যক্রম উৎসাহপূর্ণ। তার মা বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে উদগ্রীব। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে এসব কথা লিখেছে লন্ডনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ইকোনমিস্ট। শুক্রবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘বাংলাদেশস্ ভোলাটাইল পলিটিক্স: দ্য ব্যাটলিং বেগমস’। এতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পুত্র ও তার রাজনৈতিক উত্তরসূরি সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ের তিন সপ্তাহ রাজনীতিতে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় তাকে রাজনীতিতে নবিশ বলেই মনে হয়েছে। রাজনীতিতে তার উত্তরাধিকার সূত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। তার কার্যক্রম উৎসাহপূর্ণ। তিনি যেন আগামীকালই লন্ডন থেকে বিমানে চড়ে বসবেন। তার মায়ের স্বাস্থ্য ভাল নেই। তিনি তার বড় সন্তানের কাছে ক্ষমতা তুলে দিতে উদগ্রীব। কিন্তু বাংলাদেশে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ মোকাবিলা করছেন তারেক। আগামী নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় যদি আওয়ামী লীগ রাজি না হয় তাহলে তারেক রহমান সোজা জেলে যেতে পারেন। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা এখন এমনই গুরুত্বপূর্ণ যে তা গুরুতর সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। আওয়ামী লীগও নাছোড়বান্দার মতো লড়াই করবে। কিন্তু নির্বাচনে যদি তারা পরাজিত হন তাহলে বিএনপি তার দুর্নামগ্রস্ত উত্তরাধিকার ও মিত্র জামায়াতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে। অবশ্য যদি তত দিনে তাদের ফাঁসি না হয়। কারণ বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলগুলোর এই এক অপরিবর্তনীয় ঐতিহ্য যে, তারা বিরোধীদের প্রায় সকল ঘোষণাই বাতিল করে দেয়। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজনীতির দুল্যমান দোলক ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কাছ থেকে। পবিত্র ঈদুল ফিতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে ঈদ কার্ড বিনিময় হলেও তাদের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার কোন লক্ষণ নেই বললেই চলে। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দু’ নেত্রীকে ‘যুধ্যমান মহিলা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। বলা হয়, তারা দু’জন রাজনৈতিক পরিবারতন্ত্রের দ্বন্দ্বে লিপ্ত দু’ শীর্ষ প্রধান। একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, তিনি সবেমাত্র তার দেশের রাজধানীতে দু’টি তারবার্তা পাঠিয়েছেন। প্রথম তারবার্তায় জানানো হয়েছে, আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। দ্বিতীয় তারবার্তায় জানিয়েছেন, যুধ্যমান বেগমদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার অর্জনের পরিকল্পনা সম্পর্কে।
আসন্ন নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দল অনুপস্থিত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। ১লা আগস্ট ঢাকার হাইকোর্ট রুল জারি করেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় দল জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কারণ, তাদের গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া হয়েছে সৃষ্টিকর্তাকে। আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছে। নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এতে আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়ার পথ হয়তো নিশ্চিত করবে বলে ধরা হচ্ছে। কারণ, বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র জামায়াত।
আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবে কিনা তা নিয়ে ক্রমাগত সন্দিগ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে নির্বাচিত কোন সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে কখনও বিজয়ী হতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামীর যেসব সদস্য স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৃশংসতা ঘটিয়েছিল বা এতে সহযোগিতা করেছিল, তাদের অপরাধ তদন্ত করে বিচারে দাঁড় করানো হয়। এ বছরের শুরুর দিকে এ নিয়ে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ কিন্তু জনপ্রিয় আদালতের রায়ে ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগ সতেজ হয়ে ওঠে বলে মনে হয়। জামায়াতের প্রায় সব নেতাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই শাস্তি দেয়া হতে পারে। সেই শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড। এর প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দল এ বিচারকে ইসলামবিরোধী শক্তি ও ধার্মিকদের মধ্যে লড়াই বলে অভিহিত করে। এর ফলে মার্চে রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের পথ সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়বার যখন তারা রাজধানীতে বিক্ষোভ করে তখন নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে নিহত হন তাদের প্রায় ৫০ জন। এখানে আসা যুবকরা গ্রামে একটি বার্তা বহন করে নিয়ে গেছেন। তা হলো ওই সমাবেশে হত্যা করা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এতে সারাদেশে সরকারের জনপ্রিয়তা ধ্বংসের দিকে গেছে। তারপর থেকে চাঙ্গা হয়েছে বিএনপি। এ অবস্থায় জুন ও এপ্রিলে মেয়র নির্বাচনে প্রচণ্ড ধাক্কা খায় আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল গাজীপুরকে ধরা হয় আওয়ামী লীগের সবচেয়ে নিরাপদ ঘাঁটির একটি। সেখানেও তারা হেরে যায় মেয়র নির্বাচনে। এই অবস্থার পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। তারা ৪০ লাখ গার্মেন্ট কর্মীর বেতন কাঠামো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এই গার্মেন্ট শ্রমিকরা অনেক কারখানা নিরাপদ না হওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তারা ক্ষুব্ধ মে মাসে সাভারে রানা প্লাজা ভয়াবহভাবে ধসে যাওয়ার পর ১১২৯ জনের স্বজনকে দেয়া ক্ষতিপূরণ নিয়ে। বেতন বাড়ানোর মাধ্যমে অনেক ভোটারের মন জয় করা যেতে পারে। কিন্তু কারখানার মালিকরা এমন চুক্তি বা পরিকল্পনার বিরোধী বলেই মনে হচ্ছে।
দলীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থানও দলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারে। তার দলের এক-তৃতীয়াংশ এমপি তাদের ওপর আক্রমণের ভয়ে এলাকায় যান না। দুরাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন উদাহরণ নেই। বিশ্বাসযোগ্য প্রার্থীদের বেছে নিলে তাদের দলে বিভক্তি দেখা দিতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫