ভারতকে বিদ্যুতে ট্রানজিট দিচ্ছে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতকে বিদ্যুতে ট্রানজিট দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ট্রানজিটের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে এক লাখ ২৬ হাজার ৫৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হয়ে অন্যান্য রাজ্যে নিয়ে যাবে ভারত।

এরই মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি (জেএসসি) ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রঙিয়া অথবা রওটা সাব স্টেশন হতে বাংলাদেশের জামালপুর/বড়পুকুরিয়া হয়ে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যেকোন স্থানে সংযুক্ত হবে। মাল্টি টার্মিনাল বাইপল ট্রান্সমিশন লাইনের (যেকোন স্থানে বিদ্যুৎ দেওয়া অথবা নেওয়া সম্ভব) মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ পরিবহন করা হবে।

আর এই ট্রানজিটের বিনিময়ে সামান্য কিছু বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। এই বিদ্যুৎ জামালপুর ও বড়পুকুরিয়া সাব স্টেশনের মাধ্যমে প্রদান করবে। তবে এর পরিমাণ কত হবে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিমালয় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদীর ওপর ৪২৯টি বাঁধ দিয়ে এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। কিছু বাধ এরইমধ্যে নির্মিত হয়েছে, আর কিছু নির্মাণাধীন রয়েছে।

ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও চীন হিমালয়ের বিভিন্ন স্থানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এর জন্য মোট ৫৫৩টি বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ ও আসামের মানুষ যে টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতা করছেন, ১৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সেই বাধ এই ৫৫৩টি বাঁধের একটি।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বিষয়ে ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

ওই সমঝোতা স্মারকের আওতায় দুই দেশের বিদ্যুৎ খাতে সকল প্রকার সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য একটি জয়েন্ট স্ট্রিয়ারিং কমিটি (জেএসসি) এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) গঠন করা হয়।

ওই সমঝোতা স্মারকের আওতায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির মাধ্যমে সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রও সমঝোতা স্মারকেরই অংশ। সম্প্রতি জেটিটি তার খসড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এতে ট্রানজিটের পক্ষে মতামত দেওয়া হয়।

সম্ভাব্য আরও একটি ট্রানজিটের কথা ভাবা হচ্ছে। ৪০০ কিলোওয়াট ভোল্টের এ সঞ্চালন লাইন আসামের শিলচর থেকে বাংলাদেশের মেঘনাঘাট অথবা ভুলতা হয়ে ভেড়ামারা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও পর্যন্ত যাবে।

সূত্র জানায়, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে পশ্চিমবঙ্গে যাবে বিদ্যুৎ ট্রানজিট। ভারতের মধ্যে এই বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজ করবে সে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (পিজিসিআই)। আর বাংলাদেশের ভেতরে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার কাজ করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।

সূত্র জানায়, ‘হাই ভোল্টেজ পাওয়ার ট্রান্সমিশন ট্রানজিট’ নামের এ সঞ্চালন রুট ঠিক করাসহ বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত করবে জেটিটি।

সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সম্পর্কে জানতে পিজিসিবির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চৌধুরী আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন ‘এটাকে আসলে ট্রানজিট বলা হচ্ছে না। আর বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্ট চূড়ান্ত হলে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি সই হবে।’

তবে উভয় দেশের স্বার্থেই বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। মাল্টিপল লাইন হওয়ায় বাংলাদেশ চাইলে এই লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারবে বলেও জানান পিজিসিবি এ কর্মকর্তা।

কী পরিমাণ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সঞ্চালন লাইন থেকে অবশ্যই বিদ্যুৎ পাবো। তবে ঠিক কত পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তা চূড়ান্ত হয়নি।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫